ধাতু এবং অধাতু মৌলিক পদার্থের দুটি ভিন্নরূপ। ধাতু ও অধাতুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছাড়া এগুলো সনাক্ত করা একটু কঠিন। যদিও ধাতু একটি কঠিন, শক্ত, উজ্জ্বল এবং অস্বচ্ছ পদার্থ। অন্যদিকে, অধাতু সাধারণত নরম, অ-চকচকে, স্বচ্ছ এবং ভঙ্গুর হয়।
এই আর্টিকেলে, আমরা ধাতু ও অধাতুর সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য এবং ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য সমূহ আলোচনা করব।
ধাতু কি?
যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলো শক্ত, চকচকে, অস্বচ্ছ এবং ঘন, সেগুলো হলো ধাতু। অর্থাৎ যে সকল মৌলিক পদার্থ সাধারণ অবস্থায় কঠিন, চকচকে, ভারী, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে এবং তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী, সেগুলোকে ধাতু বলে।
যেমন–রূপা, অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, সীসা, নিকেল, তামা, টাইটানিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, কোবাল্ট, দস্তা ইত্যাদি।
ধাতুর বৈশিষ্ট্য
- ধাতুসমূহ তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী।
- আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ হয়।
- ঘষলে চকচক করে।
- ঘাত সহনশীল ও নমনীয়।
- বিশেষ দ্যুতি আছে।
- সহজেই জোড়া লাগানো যায়।
- ওজনে ভারী।
- পিটিয়ে পাত করা যায়।
- সাধারণত বিজারক পদার্থ।
- অপেক্ষাকৃত উচ্চ গলনাংক ও স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট।
- ধাতব অক্সাইডসমূহ ক্ষারকীয় এবং পানিতে দ্রবণীয় হলে ক্ষার উৎপন্ন হয়।
- ধাতুসমূহ এসিডের হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপন করে লবণ উৎপন্ন করে।
অধাতু কি?
যেসব রাসায়নিক পদার্থ নরম, অ-চকচকে, স্বচ্ছ এবং ভঙ্গুর, সেগুলো হল অধাতু। অর্থাৎ
যেসব মৌলিক পদার্থ সাধারণত নরম, অ-চকচকে, স্বচ্ছ এবং ভঙ্গুর হয়, আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে না এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়, তাদেরকে অধাতু বলে।
যেমন– হাইড্রোজেন, কার্বন, নাইট্রোজেন, আর্গন, জেনন, ক্লোরিন, ফসফরাস, অক্সিজেন, সালফার ইত্যাদি।
অধাতুর বৈশিষ্ট্য
- তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়।
- আঘাত করলে শব্দ হয় না।
- অধাতু ঘাত সহনশীল ও নমনীয় নয়।
- ঘষলে চকচক করে না।
- অধাতু সমূহের দ্যুতি নেই।
- ওজনে হালকা হয়।
- সহজে জোড়া লাগানো যায় না।
- পিটিয়ে পাত করা যায় না।
- কার্বন ব্যতীত অন্যান্য অধাতুগুলো জারক পদার্থ।
- অপেক্ষাকৃত নিম্ন গলনাংক ও স্ফুটনাংক বিশিষ্ট।
- অধাতুসমূহ এসিডের হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপন করে লবণ উৎপন্ন করে না।
- চুম্বক দ্বারা বিকর্ষিত হয় অর্থাৎ ডায়াম্যাগনেটিক প্রকৃতির।
ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্য
1. যে প্রাকৃতিক উপাদানগুলো শক্ত, চকচকে, অস্বচ্ছ এবং ঘন, তা হলো ধাতু। যেসব রাসায়নিক পদার্থ নরম, অ-চকচকে, স্বচ্ছ এবং ভঙ্গুর, তা অধাতু।
2. ধাতুগুলো ইলেক্ট্রোপজিটিভ প্রকৃতির, কারণ এগুলো সহজেই ইলেকট্রন হারায়। বিপরীতে, অ-ধাতুগুলো ইলেক্ট্রোনেগেটিভ, কারণ এগুলো ইলেকট্রন অর্জন করে।
3. ধাতু সাধারণ তাপমাত্রায় কঠিন হয় (পারদ এবং গ্যালিয়াম ছাড়া, যা তরল অবস্থায় থাকে)। বিপরীতে, অ-ধাতুগুলো কঠিন বা বায়বীয় আকারে পাওয়া যায় (ব্রোমিন ব্যতীত যা একমাত্র তরল অধাতু)।
4. ধাতু সাধারণত মসৃণ এবং চকচকে দেখায়, যখন অধাতু অমসৃণ ও বিবর্ণ দেখায়।
5. ধাতু সাধারণত কঠিন পদার্থ হয়। অধাতুগুলো সাধারণত নরম পদার্থ (হীরা ছাড়া)।
6. নমনীয়তা হল ধাতুর প্রধান বৈশিষ্ট্য যা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে একটি পাতলা শীটে রূপান্তরিত করা যায়। এর বিপরীতে, অধাতুগুলো ভঙ্গুর প্রকৃতির, হাতুড়ি দিয়ে পিটালে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
7. ধাতু তাপ এবং বিদ্যুতের পরিবহন সমর্থন করে। বিপরীতভাবে, অ-ধাতু অন্তরক, এবং তাই তারা তাপ এবং বিদ্যুতের পরিবাহকে সমর্থন করে না।
8. ধাতু সমূহ অপেক্ষাকৃত উচ্চ গলনাংক ও স্ফুটনাঙ্ক বিশিষ্ট, কিন্তু অধাতু সাধারণত অপেক্ষাকৃত নিম্ন গলনাংক ও স্ফুটনাংক বিশিষ্ট।
9. ধাতুসমূহ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে ধাতব অক্সাইড তৈরি করে। অন্যদিকে, অধাতু অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অম্লীয় প্রকৃতির অধাতু অক্সাইড তৈরি করে।
10. ধাতুর কিছু উদাহরণ হল রূপা, অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, সীসা, নিকেল, তামা, টাইটানিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, কোবাল্ট, দস্তা ইত্যাদি। অ-ধাতুর কিছু উদাহরণ হল নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, আর্গন, জেনন, ক্লোরিন ইত্যাদি।