ণ-ত্ব বিধান কাকে বলে?
যে বিধি বা নিয়ম অনুসারে বাংলা শব্দের বানানে দন্ত-ন পরিবর্তিত হয়ে মূর্ধন্য-ণ হয়, তাকে ণ-ত্ব বিধান বলে।
ণ-ত্ব বিধানের নিয়ম
১. সাধারণভাবে র, ষ, ক্ষ-এ তিন অক্ষরের পরে মূর্ধন্য-ণ ব্যবহৃত হবে।‘র’ বলতে : র, ঋ, রেফ্, র-ফলা, ঋ-কার এগুলোকেই বুঝায়।
আরো পড়ুন : কাল কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
যেমন-
র : কারণ, ধারণ, মরণ, ঋণ, কর্ণ, চুর্ণ, দীর্ণ, পর্ণ, ঘ্রাণ, প্রাণ, প্রণয়, ব্রণ, যন্ত্রনা, ঘৃণা, তৃণ, মৃণাল ইত্যাদি।
ষ : ষণ্ড, ষাণ্মাসিক, ঘর্ষণ, কর্ষণ, দূষণ, বর্ষণ, ভীষণ ইত্যাদি।
ক্ষ : ক্ষণ, ক্ষণিক, ক্ষীণ, ক্ষুণ্ন, ক্ষৌণী ইত্যাদি। লক্ষ্যণীয় : ক+ষ=ক্ষ। অর্থাৎ, এ সংযুক্ত বর্ণ ক্ষ-এর ভতরে ষ রয়েছে। তাই এ অক্ষরটির পর মূর্ধন্য-ণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
২. র, ক্ষ, রেফ্, র-ফলা, ঋ-কার এবং ক্ষ-এর পরে যদি ক, খ, গ, ঙ, প, ফ, ব, ভ, ম এবং য, য়, হ-এই ১৩টি বর্ণের যে-কোনো ১টি বা ২টি বর্ণ আসে, তবে তার পরেও মূর্ধন্য-ণ হবে।
যেমন-
অপরাহ্ণ, পরায়ণ, পাষাণ, রক্ষিণী, রোপণ, কৃপণ, কৃপাণ, হরণ, মরণ, চরণ, করণ, অর্পণ, চর্বণ, পূর্বাহ্ণ, গ্রহণ, অগ্রহায়ণ, গ্রামীণ, প্রাঙ্গণ, বর্ষণ, ভ্রাম্যমাণ, শ্রবণ, দ্রবণ, প্রাণ্, ঘ্রাণ, ত্রাণ ইত্যাদি।
৩. তবে উপরের নিয়মের কিছু ব্যতিক্রমও আছে।
যেমন-অয়ুষ্মান, গরীয়ান, চক্ষুষ্মান, বর্ষীয়ান, শ্রীমান ইত্যাদি।
৪. তাছাড়া এমন শব্দ অনেক আছে, যেখানে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ বসে। কোনো নিয়মের সূত্রে সেগুলোকে ফেলা যায় না, সেগুলো স্বত:সিদ্ধ শব্দ। তাই এ জাতীয় শব্দগুলো মুখস্থ করে বা লিখে লিখে অভ্যাস করে আয়ত্ব করতে হয়।
এরকম কিছু শব্দ নিয়ে একটি ছড়া রচনা করা যেতে পারে-অণু, কণা, নিক্কণ, চিক্কণ, কণিকা, গণিকা, কাণম, উৎকুণ, কর্ণ, মণি, কণ্কন, বাণ, শাণ, কল্যাণ, পিণাক, কফোণি, লাবণ্য, ফণি, বণিক, নিপুণ, পাণি, চাণক্য, পণ, মাণিক্য, গণ, বীণা, বেণু, বেণী, বাণী, গুণ, তূণ, ঘূণ, মৎকুণ, বাণিজ্য, কিণ, কোণ, পুণ্য, গৌণ, লবণ, পণ্য, ভণিতা, শোণিত, শোণ, স্থাণু, শণ, ভাণ, আপণ, বিপণি, এণ-এই পণ্ঞ্চাশ, নিত্যসিদ্ধ, ণ-কার এদের বিধির বাইরে বাস।
৫. ট, ঠ, ড, ঢ,-এ চারটি বর্ণের পূর্বে যদি ন্ ধ্বনি থাকে এবং ঐ ‘ন’ সহযোগে যদি যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, তাহলে তা সর্বদা মূর্ধন্য-ণ হবে।
যেমন-কণ্টক, কণ্ঠ, ঘণ্টা, ঠাণ্ডা, দণ্ডা, লণ্ডন ইত্যাদি।
৬. উত্তর, পর, পার, রবীন্দ্র, চান্দ্র, নার-শব্দের পরে ‘অয়ন’ শব্দ যুক্ত হলে দন্ত-ন এর বদলে মূর্ধন্য-ণ হয়।
যেমন-
উত্তর+অয়ন=উত্তরায়ণ; পর+অয়ন=পরায়ণ;
রবীন্দ্র+অয়ণ=রবীন্দ্রায়ণ; নার+অয়ন=নারায়ণ;
৭. হসন্ত দন্ত ‘ন’ স্থানে মূর্ধন্য ‘ণ’ হয় না।
যেমন-বন্ধন, বৃন্দ, গ্রন্থন ইত্যাদি।
ণ-ত্ব বিধানের ব্যতীক্রম
১. ত, থ, দ, ধ-এই চারটি বর্ণের পূর্বে যদি ‘ন’ ধ্বনি থাকে এবং ঐ ‘ন’ সহযোগে যদি যুক্তবর্ণ তৈরি হয়, তাহলে তা সর্বদা দন্ত-ন হবে।
যেমন-অন্ত, কান্ত, প্রান্ত, পন্থা, অন্দর, খন্দ, ছন্দ, বন্দি, অন্ধ, গন্ধ, বন্ধন ইত্যাদি।
২. এই ণ-ত্ব বিধান বিদেশি শব্দ অথবা নামের বানানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
অর্থাৎ এ সকল ক্ষেত্রে মূর্ধন্য-ণ এর স্থলে ‘দন্ত-ন’ ব্যবহৃত হবে। যেমন-গ্রিন(গ্রিণ নয়), ব্রেইন(ব্রেইণ নয়), ড্রেন(ড্রেইণ নয়), ইস্টার্ন(ইস্টার্ণ নয়), আলবেরুনি(আল বেরুণি নয়) ইত্যাদি।
৩. কতগুলো তদ্ভব শব্দে দন্ত ‘ন’ এবং মূর্ধন্য ‘ণ’ দুটোই ব্যবহৃত হয়।
যেমন-
সোনা-সোণা, রাণী-রানি, পরণ-পরন, ঠাকুরাণী-ঠাকুরানী ইত্যাদি।
সমাসবদ্ধ দু্ই পদেরই অর্থের প্রাধান্য থাকায় নিচের শব্দগুলোতে ‘মূর্ধন্য-ণ’ এর পরিবর্তে ‘দন্ত্য-ন’ ব্যবহৃত হবে। যেমন-ত্রিনয়ন, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম ইত্যাদি।
৫. খাঁটি বাংলা বা তদ্ভব শব্দে সর্বদা দন্ত্য-ন হবে।
যেমন-ঝরনা, পুরান, ধরন, কেরানি ইত্যাদি।