দেশ পরিচালনার জন্য সরকার বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এসকল অর্থ আবার জনগণের কল্যাণে সরকার ব্যয় করে। বাংলাদেশ সরকারের আয় এবং ব্যয়ের বিভিন্ন খাত রয়েছে। আয়ের খাতসমূহ থেকে সংগৃহীত অর্থসম্পদই ব্যয় করা হয়।
দেশের সার্বিক উন্নয়ন, জনগনের মৌলিক চাহিদা পূরণের, প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি থেকে রাজস্ব লাভ করে।
বাংলাদেশ সরকার মূলত কর ও কর বহির্ভূত বিভিন্ন উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে। যেমন:
১. আয়কর (Income Tax):
আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স হল একটি প্রত্যক্ষ কর যা আইনানুগ বিভিন্ন ব্যক্তির উপর ধার্য করা হয়ে থাকে। আয়কর বাংলাদেশে সরকারের রাজস্বের একটি অন্যতম উৎস। একজন ব্যক্তির সর্বমোট আয়ের উপর সাধারণত আয়কর ধার্য করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ আইন ২০১৫ এর আওতায়,
মহিলা এবং ৬৫ বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতা ব্যক্তির ক্ষেত্রে আয় যদি বার্ষিক ৩,০০,০০০ টাকার উপরে হয়, তবে তিনি আয়কর প্রদানের উপযুক্ত হবেন।
প্রতিবন্ধী করদাতার ক্ষেত্রে আয় ৩,৭৫,০০০ এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে আয় যদি ৪,২৫,০০০ টাকার উপরে হয়, তবে তিনি আয়কর প্রদানের জন্য বিবেচিত হবেন।
২. মূল্য সংযোজন কর (Value Added Tax or VAT):
সরকারী আয়ের সিংহভাগ আসে মূলত মূল্য সংযোজন করের মাধ্যমে। মূল্য সংযোজন কর একটি পরোক্ষ ধরনের কর যা একটি দেশে উৎপাদিত ভোগ সামগ্রীর উপর বিভিন্ন পর্যায়ে সংযোজিত মূল্যের উপর ভিত্তি করে ধার্য করা হয়। মূল্য সংযোজন করকে ভ্যাট (VAT) বলা হয়। বাংলাদেশে এই ভ্যাটের হার ১৫%।
৩. আবগারি শুল্ক (Excise duty):
আবগারি শুল্ক সরকারের আয়ের একটি অন্যতম উৎস। সরকার বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী যেমন চা, চিনি, তামাক, কেরোসিন, সিগারেট, দিয়াশলাই, প্রসাধনী সামগ্রী, ঔষুধ ইত্যাদির উপর আবগারি শুল্ক আরোপ করে।
৪. বাণিজ্যিক শুল্ক (Business duty):
বিভিন্ন প্রকার বাণিজ্যিক কার্যক্রমের (আমদানি ও রফতানী) উপর ব্যবসায়ীদের যে শুল্ক প্রদান করতে হয় সেটাই হচ্ছে বাণিজ্যিক শুল্ক।
৫. সম্পত্তি কর (Property Tax):
সম্পত্তি কর একটি প্রত্যক্ষ কর। এটি সরকারের রাজস্বের একটি অতি প্রাচীন উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। কোন ব্যক্তির ২৫ বিঘার অধিক জমি থাকলে তখন তিনি সম্পত্তি করের আওতাভুক্ত হন।
৬. রেজিস্ট্রেশন এবং স্ট্যাম্প (Registration and stamping):
রেজিস্ট্রেশন ও স্ট্যাম্প থেকে প্রাপ্ত আয়কে সরকারি আয়ের একটি সুপরিচিত উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। জমি, যানবাহন, ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য প্রকারের সম্পত্তির দলিল করতে রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন হয়। এছাড়া বিভিন্ন দলিল, পাসর্পোট, চিঠিপত্র, মামলা মোকাদ্দমার আবেদনপত্র ইত্যাদির জন্য স্ট্যাম্পের প্রয়োজন হয়। স্ট্যাম্প বিক্রির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় হয়। এভাবেই সরকারকে রেজিস্ট্রেশন ও স্ট্যাম্প বাবদ ফি দিতে হয়।
৭. বিনিয়োগ এবং ঋণ (Investment and debt):
বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ সরকারের আয়ের একটি অন্যতম উৎস। সরকার বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা বিনিয়োগ করে। পরবর্তীতে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ সরকারের আয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
এছাড়া সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক সংস্থাকে নির্দিষ্ট হারে সুদের বিনিময়ে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ প্রদান করে।
৮. রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (State-owned financial institutions):
বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থা থেকে লভ্যাংশ সংগ্রহ সরকারের আয়ের আরেকটি উৎস।
৯. যাতায়াত (Transports):
বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ বিমান, বিআরটিসি ইত্যাদি যাতায়াত সংস্থার মাধ্যমে সরকার জনগণকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব আয় সংগ্রহ করে।
১০. সমুদ্র বন্দর (Sea port):
সরাসর সবচেয়ে বেশি আয় করে থাকে সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে। বর্তমান বাংলাদেশের তিনটি প্রধান সমুদ্র বন্দর (মংলা, পায়রা, এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর) থেকে সরকার প্রচুর রাজস্ব সংগ্রহ করছে।
১১. প্রাকৃতিক সম্পদ (Natural resources):
সরকার বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন, বনজ সম্পদ,মৎস সম্পদ, গ্যাস, কয়লা, এবং চিনামাটি ইত্যাদি বিক্রির মাধ্যমেও রাজস্ব সংগ্রহ করে থাকে।