Modal Ad Example
অর্থনীতি

সুনীল অর্থনীতি কি? সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ (Blue Economy)

1 min read
সুনীল অর্থনীতি হচ্ছে সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। সুনীল অর্থনৈতিক অঞ্চল একটি দেশের ভারসাম্য অর্থনীতি নিশ্চিত করে।
সুনীল অর্থনীতিতে মূলত একটি দেশের সামুদ্রিক পরিবেশ কিংবা সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই ‘সুনীল অর্থনীতি’ এর আরেক নাম ‘সমুদ্র অর্থনীতি’। এই আর্টিকেলে সুনীল অর্থনীতির সংজ্ঞা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হল।

সুনীল অর্থনীতি কি?

সুনীল অর্থনীতি (Blue Economy) হলো একটি ধারণা যা সামুদ্রিক ও উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, উন্নত জীবিকা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহারকে বোঝায়।
বিশ্বব্যাংক এর মতে, “সুনীল অর্থনীতি একটি ধারণা যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, উন্নত জীবিকা এবং একই সাথে সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।”
জাতিসংঘ সুনীল অর্থনীতিকে মহাসাগর, সমুদ্র এবং উপকূলীয় অঞ্চলের সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের একটি পরিসর হিসাবে উল্লেখ করে। সমুদ্র অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল বিষয় হল টেকসই মাছ ধরা, সমুদ্রের স্বাস্থ্য, বন্যপ্রাণী এবং দূষণ বন্ধ করা।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০% সুনীল অর্থনীতিক অঞ্চলের কাছাকাছি বাস করে, ৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য মহাসাগর ব্যবহার করে এবং ৮০% বিশ্ব বাণিজ্য সমুদ্র ব্যবহার করে অর্জিত হয়। মহাসাগর, সমুদ্র এবং উপকূলীয় অঞ্চল খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে অবদান রাখে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) এর ১৪ নাম্বারে লাইফ বিলো ওয়াটার, অর্থাৎ টেকসই উন্নয়নের জন্য মহাসাগর, সমুদ্র এবং সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং টেকসই ব্যবহারের বিষয়ে এবং সমুদ্রের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দাবি জানায়।
মহাসাগর এবং সমুদ্র খাদ্য, শক্তি এবং খনিজের একটি মূল উৎস। এছাড়াও রয়েছে মৎস্য ও জলজ চাষ, এবং এই সম্পদগুলোর প্রক্রিয়াকরণ এবং বাণিজ্য। কন্টেইনারশিপ, ট্যাঙ্কার এবং বন্দরের জন্য বৈশ্বিক বাজারে সমুদ্র পরিবহন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। সুনীল অর্থনৈতিক অঞ্চল পর্যটন শিল্পের জন্যও বিরাট সম্ভাবনাময় তৈরি করছে যা বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখছে।

সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশ সুনীল অর্থনীতি পরিবেশগত ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। নিচে বাংলাদেশে সুনীল অর্থনীতির সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সমূহ বর্ণনা করা হল।

সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা

১. মৎস্য ও জলজ চাষ: বাংলাদেশের দীর্ঘ উপকূলরেখা এবং বিস্তৃত নদী নেটওয়ার্ক মৎস্য ও জলজ চাষের উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য সুযোগ প্রদান করে। এই খাতগুলো দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নির্বাহের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
২. সামুদ্রিক শক্তি: বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় বায়ু, তরঙ্গ এবং জোয়ার শক্তির বিকাশের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে অবদান রাখতে পারে।
৩. উপকূলীয় পর্যটন: বাংলাদেশের দীর্ঘ উপকূলরেখা, সমুদ্র সৈকত এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উপকূলীয় পর্যটন বিকাশের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা প্রদান করে। এটি উপকূলীয় স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য আয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যাপ্ত বিনোদন ও মনোরম পরিবেশের ব্যবস্থা করতে পারলে এ খাত থেকে আয়ের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে।
৪. সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি: বাংলাদেশের সামুদ্রিক অঞ্চল সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তির বিকাশের সুযোগ প্রদান করে। এটি নতুন ওষুধ, খাদ্য সম্পূরক এবং অন্যান্য পণ্য আবিষ্কার করতে পারে।
৫. সী ফুড প্রসেসিং: বিশাল সমুদ্র উপকূল সী ফুড প্রসেসিং এর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এখান থেকে রফতানিযোগ্য সামুদ্রিক সম্পদসমূহ প্রসেস করা হয়। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের প্রায় সিংহভাগই সুনীল অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে আসে।

সুনীল অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

১. পরিবেশগত অবনতি: বাংলাদেশের সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যার মধ্যে রয়েছে দূষণ, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং আবাসস্থল ধ্বংস। এগুলি সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং সুনীল অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
২. জলবায়ু পরিবর্তন: সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সমুদ্রের অম্লকরণ বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।
৩. সীমিত অবকাঠামো: টেকসই বন্দর, জেটি এবং কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা সহ পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির বৃদ্ধি ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
৪. শাসন ও নীতি: সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা, দুর্বল শাসন, এবং অপর্যাপ্ত নীতি বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
৫. মৎস্য আহরণ ব্যবস্থাপনা (মনিটরিং, কন্ট্রোল ও সার্ভিল্যান্স): পর্যাপ্ত সামুদ্রিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে সুনীল অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারের সরাসরি ব্যবস্থাপনার (যেমন মনিটরিং, কন্ট্রোল ও সার্ভিল্যান্স) মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
5/5 - (34 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x