সন্ধি কাকে বলে? সন্ধি কত প্রকার ও কি কি?

সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি। যেমন- আশা + অতীত = আশাতীত। হিম + আলয় = হিমালয়। প্রথমটিতে আ + অ = আ () এবং দ্বতীয়টিতে অ + আ = আ () হয়েছে। আবার, তৎ + মধ্যে =তন্মধ্যে, এখানে ত + ম = ন্ম হয়েছে।

আরো পড়ুন : বিভক্তি কাকে বলে?

সন্ধির উদ্দেশ্য

(ক) সন্ধির উদ্দেশ্য স্বাতাবিক উচ্চারণে সহজপ্রবণতা

(খ) ধ্বনিগত মাধুৰ্য সম্পাদন।

যেমন- আশা; ও অতীত; উচ্চারণে যে আয়াস প্রয়ােজন, আশাতীত; তার চেয়ে অল্প আয়াসে উচ্চারিত হয়। সেরূপ হিম আলয় বলতে যেরূপ শােনা যায়, হিমালয় তার চেয়ে সহজে উচ্চারিত এবং শ্রতিমধুর। তাই যে ক্ষেত্রে আয়াসের লাঘব হয় কিন্তু ধ্বনি-মাধুর্য রক্ষিত হয় না, সে ক্ষেত্রে সন্ধি করার নিয়ম নেই।

যেমন- কচু + আদা + আলু কচ্চাদালু হয় না। অথবা কচু + আলু + আদা = কচ্চান্বাদা হয় না। আমরা প্রথমে খাটি বাংলা শব্দের সন্ধি ও পরে তৎসম (সংস্কৃত) শব্দের সন্ধি সম্বন্ধে আলােচনা করব। উল্লেখ্য, তৎসম সন্ধি মূলত বর্ণ সংযােগের নিয়ম।

বাংলা শব্দের সন্ধি

বাংলা সন্ধি দুই রকমের :

  • স্বরসন্ধি
  • ব্যঞ্জনসন্ধি

স্বরসন্ধি

স্বরসন্ধিধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি মিলে যে সন্ধ হয় তাকে স্বরসন্ধি বলে।

১. সন্ধিতে দুটি সন্নিহিত স্রের একটির লােপ হয়। যেমন-

(ক) অ + এ = এ (অ লােপ), যেমন – শত + এক = শতেক। এবূপ – কতেক।

(খ) আ + আ = আ (একটি আ লােপ)। যেমন – শাঁখা + আরি শাখারি। এরূপ – বূপা + আলি = বূপালি।

(গ) আ + উ = উ (আ লােপ)। যেমন – মিথ্যা + উক = মিথ্যুক। এরূপ – হিসুক, নিন্দুক ইত্যাদি।

(ঘ) ই + এ = ই (এ লােপ)। যেমন – কুড়ি + এক = কুড়িক। এরূপ – ধনিক, গুটিক ইত্যাদি। আশি + এর = আশির (এ লােপ)। এরূপ – নদীর (নদী +এর)।

২. কোনাে কোনাে স্থলে পাশাপাশি দুটি স্বরের শেষেরটি লােপ পায়। যেমন – যা + ইচ্ছা + তাই =যাচ্ছেতাই। এখানে (আ+ই) এর মধ্যে ই লােপ পেয়েছে।

ব্যঞ্জনসন্ধি

স্বরে আর ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে আর ব্যঞ্জনে এবং ব্যঞ্জনে আর স্বরে মিলিত হয়ে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। প্রকৃত বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি সমীভবন ( Assimilation)-এর নিয়মেই হয়ে থাকে। আর তা-ও মূলত কথ্যরীতিতে সীমাবদ্ধ।

১. প্রথম ধ্বনি অঘােষ এবং পরবর্তী ধ্বনি ঘােষ হলে, দুটি মিলে ঘােষ ধ্বনি দ্বিত্ব হয়। অর্থাৎ সন্ধিতে ঘােষ ধ্বনির পূর্ববর্তী অঘােষ ধ্বনিও ঘােষ হয়। যেমন – ছােট + দা =ছােড়দা।

২. হলন্ত র (বন্ধ অক্ষর বিশিষ্ট) ধ্বনির পরে অন্য ব্যঞ্জন ধ্বনি থাকলে র লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনি দ্বিত্ব হয়। যেমন- আর, + না = আন্না, চার + টি = চা্টি, ধর, + না =ধন্না, দুর, + ছাই = দুচ্ছাই ইত্যাদি।

৩. চ- বর্গীয় ধ্বনির আগে যদি ত-বর্গীয় ধ্বনি আসে তাহলে, ত-বর্গীয় ধ্বনি লােপ হয় এবং চ-ব্গীয় ধ্বনির দ্বিত্ব হয়। অর্থাৎ ত-বর্গীয় ধ্বনি ও চ-বর্গীয় ধ্বনি পাশাপাশি এলে প্রথমটি লুপ্ত হয়ে পরবর্তী ধ্বনিটি দ্বিত্ব হয়। যেমন- নাত + জামাই =নাজজামাই (ত্+ জ, = জ্জ), বদ্ + জাত =ক্জাত, হাত + ছানি হাচ্ছানি ইত্যাদি।

৪. প;-এর পরে চ; এবং স;-এর পরে ত এলে চ ও ত এর স্থলে শ হয়। যেমন – পাঁচ + শ = পাশশ। সাত + শ = সাশৃশ, পাঁচ + সিকা = পাশৃশিকা।

৫. হলন্ত ধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে সবেরের লােপ হয় না। যেমন – বােন + আই =বােনাই, চুন + আরি -চুনারি, তিল + এক = তিলেক, বার + এক -বারেক, তিন + এক তিনেক।

6. স্বরধ্বনির পরে ব্যঞ্জনধ্বনি এলে স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হয়। যেমন – কাঁচা + কলা = কঁচকলা, নাতি + বৌ -নাতবৌ, ঘােড়া + দৌড় – ঘােড়দৌড়, ঘােড়া + গাড়ি – ঘােড়গাড়ি ইত্যাদি।

তৎসম শব্দের সন্ধি

বাংলা ভাষায় বহু সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এসব শব্দই তৎসম (তৎ = তার + সম = সমান) তার সমান অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান। এ শ্রেণির শব্দের সন্ধি সংস্কৃত ভাষার নিয়মেই সম্পাদিত হয়ে এসেছে।

বাংলা ভাষায় ব্যবহূত তৎসম সন্ধি তিন প্রকার :

  • স্বরসন্ধি
  • ব্যঞ্জন সন্ধি
  • বিসর্গ সন্ধি।

স্বরসন্ধি

ব্যঞ্জন সন্ধি

স্বরে -ব্যঞ্জনে, ব্যঞ্জনে-স্বরে ও ব্যঞ্জনে-ব্যঞ্জনে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। এদিক থেকে ব্যঞ্জন সন্ধিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

  • ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
  • স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
  • ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি।

ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি

স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি

ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *