Tesla কি
Tesla একটি আমেরিকান গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে, কিন্তু জ্বালানি তেলের ব্যবহারের ফলে জলবায়ুর রক্ষা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বর্তমান বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় 97,103,871 ব্যারেল জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয়।এই তেলের ব্যবহার পৃথিবী উষ্ণ করে তুলছে প্রতিনিয়ত।
তাই এই জ্বালানি তেল ব্যবহার কমাতে বিশ্বনেতারা উদগ্রীব হয়ে উঠেছে।
কিন্তু এই জ্বালানি তেলের ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
সারাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় জ্বালানি তেল এই জন্য পৃথিবী কে রক্ষার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।
রবার্ট অ্যান্ডারসন 1832 থেকে 1839 সালের মাঝে ইলেকট্রিক কার আবিষ্কার করেন।
এটি বাজারে নিয়ে আসেন 1881 সালে কিন্তু তখন পর্যন্ত এটি তেমন ভাবে প্রচলিত ছিল না এর প্রধান কারণ ছিল জ্বালানি তেলের প্রাচুর্যতা ।
এই ধারণার পরবর্তী পরিবর্তন করতে শুরু করে একুশ শতকে।
একুশ শতকের শুরুর দিকে অনেক মোটরস কোম্পানি ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির আগ্রহ দেখায়।ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির স্বপ্ন নিয়ে 2003 সালের পহেলা জুলাই দুইজন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টার্পেনিং এর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে Tesla।
তারা কোম্পানির নাম রাখেন বিজ্ঞানী নিকোলা Tesla এর নামানুসারে। মানুষকে আরও উন্নত অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ও কম দামে বৈদ্যুতিক গাড়ি উপহার দেয়ার লক্ষ্য নেয় Tesla।
উত্থান
2003 সালে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর এবারহার্ড সিইও এবং টার্পেনিং সিএফও হিসেবে কোম্পানিটি চালনা শুরু করেন ।
কিন্তু দেখা যায় একটি গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে হলে প্রয়োজন বিপুল সংখ্যক কর্মী যার জন্য প্রয়োজন অর্থের। প্রথমদিকে কোম্পানিটি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।
তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটে এলন মাস্ক নামক ম্যাজিক ম্যানের।
2004 সালের ফেব্রুয়ারিতে এলন মাস্ক 6.5 মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন যার ফলে সবচেয়ে বড় শেয়ার তিনি কিনে নেন এবং তিনি Tesla এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন ।
2006 সালে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রেইন এবং লেরি পেজ Tesla তে বিনিয়োগ করেন ।
একই বছর চেয়ারম্যান এলন মাস্ক কোম্পানিটি মাস্টারপ্ল্যান প্রকাশ করেন।
পরিকল্পনাটা ছিল অনেকটা এরকম প্রথমে বিলাসবহুল স্পোর্টস কার তৈরি করবে এই বিলাসবহুল স্পোর্টস কার বিক্রি করে তাদের যে আয় হবে সেই আয় দিয়ে মিড বাজেটের ইলেকট্রিক কার তৈরি করবে।
সেই কার বিক্রি হবে এবং তা থেকে তারা স্বল্পমূল্যের কার তৈরির দিকে এগোবে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যায় Tesla।
2008 সালে তাদের প্রথম ইলেকট্রিক কার রোড স্টার বাজারে নিয়ে আসার পূর্বে Tesla নতুন এক সমস্যার সম্মুখীন হয় যেটি ছিল মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব।
এই সমস্যার জের ধরে এলন মাস্ক এবারহার্ড কে সিইও পদ থেকে সরিয়ে নিজেই সিইও পদে বসেন।
এরপরেই মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টার্পেনিং Tesla থেকে বেরিয়ে যান এবং এরপরেই বাজারে আসে এর বহুল প্রতীক্ষিত রোডস্টার।
রোডস্টার(Tesla Roadster)
কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর 2008 সালে সর্বপ্রথম তাদের তৈরি প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি রোড স্টার বাজারে নিয়ে আসে।
এর ব্যাটারি ছিল 6831 টি পৃথক সেল বিশিষ্ট লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি।
একবার চার্জ এটি প্রায় 250 মাইল অতিক্রম করতে পারতো এবং প্রায় 4 সেকেন্ডে 60 মইল গতি তুলতে সক্ষম।
এটি 125 মাইল প্রতি ঘণ্টায় চলতে সক্ষম।
2009 সালে Tesla 187 মিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয় এবং ইলন মাস্ক আরো 70 মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন।
ফেব্রুয়ারি 2009 সাল পর্যন্ত তারা 147 টি গাড়ি বিক্রি করে।একই বছর Tesla আমেরিকান এনার্জি ডিপার্টমেন্ট থেকে 465 মিলিয়ন ডলার ঋণ পায়।
2012 সালে Tesla তাদের মডেল এক্স বাজারে নিয়ে আসে যার মূল্য নির্ধারণ করা হয় 76 হাজার ডলার যা পূর্বের রোডস্টার এর থেকে অনেক কম।
ফলে এই গাড়িটি বাজারে আসার সাথে সাথেই মানুষের মন জয় করে নেয় এবং তার জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে।
একই বছর আমেরিকার 6 টি স্থানে তাদের দ্রুত চার্জিং স্টেশন তৈরি করে।
2014 সালে Tesla গ্রাহকদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমেরিকার নেভাদায় তাদের প্রথম গিগা ফ্যাক্টরি চালু করে।
Tesla এর মাস্টারপ্ল্যান
2015 ও 2017 সালের মডেল এক্স এবং মডেল 3 নামের দুটি গাড়ি নিয়ে আসে তাদের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে।
এর মাঝে মডেল 3 ছিল স্বল্পমূল্যের গাড়ি। যার মূল্য ছিল 36 হাজার 200 ডলার।
এ গাড়িদুটিও পূর্বের মত গ্রাহকদের মন জয় করে নেয়।
Tesla তাদের মাস্টারপ্ল্যানের শেষ অংশ হিসেবে 2019 সালে বাজারে নিয়ে আসে Tesla মডেল ওয়াই।
যার মূল্য নির্ধারণ করা হয় 40 হাজার ডলার।
এভাবে Tesla মাত্র 13 বছরে বিলাসবহুল গাড়ি থেকে মধ্যম আয়ের মানুষের গাড়ি তৈরি করে এবং তাদের মাস্টারপ্ল্যান সম্পন্ন করে।
ভবিষ্যতে Tesla সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের সাইবেরট্রাক নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে যার জন্য ইতিমধ্যেই তারা প্রায় আড়াই লক্ষ অর্ডার পেয়েছে।
2019 সালে সারা বিশ্বে যত বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়েছে তার মাঝে 12% Tesla এবং আমেরিকাতে 75%।
সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় বৈদ্যুতিক গাড়ি পৌঁছে দিতে Tesla যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার অনেকটাই তারা পূরণ করতে পেরেছে।