পিজ্জার ইতিহাস
পিজ্জা এর উৎপত্তি:
পিজ্জা ,পাস্তা, স্টেক ইত্যাদির কিছুই আমাদের দেশীয় খাবার নয়।
আমাদের পূর্বসূরীদের খাবার তালিকার কোথাও আমরা এসব খাবার এর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাবো না।
কেননা তখন এসব খাবারের প্রচলন ছিলো না।
বর্তমান সম্যে আমরা যেভাবে এসব ফাস্টফুড কে আপন এবং সহজলভ্য করে নিয়েছি আমাদের পূর্বপুরুষ রা তা কখনো কল্পনা ও করে নি।
রেস্টুরেন্টে খেতে বসে কখনো পিজ্জার টুকরো হাতে নিয়ে কল্পনা করে দেখেছেন কি কোথায় এয় উৎপত্তি??? কিংবা কিভাবে এই খাবার গুলো সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করলো?
সেই সকল জিজ্ঞাসার উত্তর মিলবে আজকের এই লিখায়।
পিজ্জা’র জন্ম মূলত ভূমধ্যসাগরীয় দেশ ইতালিতে। ইতালির বেশিরভাগ অঞ্চল যেমন সিসিলি, ভেনিস, তুরিন ইত্যাদি একসময় স্বকীয়তা বজায় রেখে চলতো।
পরবর্তীতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইতালি গঠন করে। এসব অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে তেমন স্থিতিশীলতা ছিলনা।
স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যা দরকার তার কিছুই সেখানে ছিলো না।
এজন্য ইতালিয়ান রা ভাগ্যের খুঁজে অনেক আগে থেকেই নিজের দেশ ছেড়ে পাড়ি জমায় অন্যান্য দেশে বিশেষ করে আমেরিকায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও অনেক ইতালিয়ান রা পাড়ি জমায় লাতিন আমেরিকা এবং ইউরোপে।
তারা নিজের দেশ ছাড়লেও নিজেদের খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করতে পারে নি।
যেহেতু তাদের খাদ্য তৈরীর উপাদান অতি সহজলভ্য তাই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা তাদের নিজস্ব খাদ্যাভ্যাস কেই ধরে রেখেছিলো।
পিজ্জার বিস্তার:
যেকোনো খাবারের জনপ্রিয়তা লাভের মূল জিনিস হচ্ছে সে খাবার সম্পর্কে মানুষকে পরিপূর্ণ ধারনা দেওয়া এবং সেই খাবার সম্পর্কে সকল কিছু উপস্থাপন এর বিষয় টি নিশ্চিত করা।
আমাদের ভারতীয় উপমহাদেধে একসময় ব্রিটিশরা বিনামূল্যে চা পাতা বিতরন করতো বাঙালী দের মাঝে । পরবর্তীতে এটি তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিনত হয়।
তখন তারা নিজেদের অভ্যাস এর তাগিদে ব্রিটিশ দের থেকে টাকা দিয়ে চা পাতা কিনে সেই চা পান করতো।
ইতালিয়ানরাও ঠিক একইরকম টেকনিক কাজে লাগায়।
ইতালিয়ান রা সবচেয়ে বন্ধুসুলভ জাতিগুলোর মধ্যে একটি। তারা অন্যান্য জাতিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের নিজস্ব খাবার টেস্ট করায়।
তাছাড়াও অনেক ইতালিয়ান রা বিদেশে গিয়ে আস্ত ইতালিয়ান রেস্টুরেন্ট খুলে বসে।
যেখানে ইউরোপ ও আমেরিকার লোকেরা ইতালিয়ান খাবার খেয়ে মুগ্ধ হয়ে তাদের খাবার কে সাদরে গ্রহন করে নেয়। এভাবেই ইতালিয়ান খাবারের প্রচলন ঘটে।
পিজ্জার জনপ্রিয়তা:
ইতালিয়ান খাবারের সর্বজনগ্রাহ্যতার আরেকটি কারণ হচ্ছে ইতালিয়ান খাবারের উপাদান এবং কাঁচামাল গুলোর সহজলভ্যতা।
কৃষিবিপ্লবের পর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যাপক হারে টমেটো,ক্যাপসিকাম,পুদিনা পাতা,অ্যাসপারাগাস ইত্যাদির ব্যাপক হারে চাষ শুরু হয়।
আর ইতালীয় খাবার গুলোতে এগুলোই ব্যাপক হারে ব্যাবহার করা হয়।
যেহেতু সব জায়গাতেই এই উপাদান গুলো খুব সহজে পাওয়া যায় তাই ইতালীয় খাবার প্রচারে কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হয় না। মূলত এইভাবেই বিশ্বব্যাপী ইতালীয়ান খাবার বিস্তৃতি পায়।
তাছাড়া খুবই অল্প সময়ে এই খাবার প্রস্তুত করা যায় বিধায় এটি সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছে।
ইতালীয়ান খাবারের স্বাদ এতোটাই চমৎকার যে এটি যেকোনো দেশের মানুষ কে এই খাবারের প্রতি আকৃষ্ট করে।
আজকাল চাইনিজ ও মেক্সিকান খাবারের ব্যাপক পরিচিতি থাকলেও তা ইতালিয়ান খাবার কে ছাপাতে পারে নি।
অধিক সহজলভ্যতার দরুন আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং সাধারন মানুষ সকলে এসব পিজ্জা(Pizza),স্প্যাগাটি, পাস্তা,স্টেক এর প্রতি খুব বেশিই আকৃষ্ট।
আর এই ভাবেই পিজ্জা(Pizza) আমাদের আন্তর্জাতিক খাবারের তালিকায় স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এটি সকলের পছন্দের তালিকায় থাকবে সেটি আশা করা যায়।
Also Read: পিজ্জা কি? পিজ্জা এর উৎপত্তি| পিজ্জা কীভাবে আমাদের খাবার হলো?