Health

মধু কি | মধু এর গুণাবলি ও উপকারিতা | মধুর বৈশিস্ট্য

1 min read

মধু কি

মধু একপ্রকার মিষ্টি স্বাদযুক্ত, ঘন তরল পদার্থ। যা মূলত বিভিন্ন ফুলের নির্যাস থেকে মৌমাছি ও পতঙ্গের মাধ্যমে তৈরী হয়।

এটি উচ্চগুনসম্পন্ন ঔষধি গুনসমপন্ন ভেষজ তরল। এর বিশিষ্ট গন্ধের জন্য অনেকে একে চিনি থেকে বেশি প্রাধান্য দেয় এবং অধিক সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধুর স্বাদ, রং, সুগন্ধ এবং ঔষধগুনাবলীর জন্য প্রসিদ্ধ। সুন্দরবনের বেশিরভাগ মধুই কেওড়া গাছের ফুল থেকে উৎপন্ন হয়।

Honey

মধুতে প্রায় ৪৫ ধরনের খাদ্য উপাদান থাকে৷ ফুলের পরাগের মধুতে ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪-৪৩শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫-৩ শতাংশ সুক্রোজ থাকে৷

এতে কোনো চর্বি বা প্রোটিন নেই৷ এছাড়া মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান।

মধুর বৈশিস্ট্য

মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় না।

এটি চিনির তুলনায় অধিক  গুণ মিষ্টি। তরল মধু নষ্ট হয় না, কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস (Plasmolysis) প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া(Bacteria) মারা যায়।

প্রাকৃতিক বায়ুবাহিত ঈস্ট( Yeast)  মধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারণ মধুতে পানির পরিমাণ খুবই অল্প।

প্রাকৃতিক অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রতা থাকে।

আর্দ্রতা যখন ১৮% এর নিচে  থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইজড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।

বিশ্বখ্যাত ছয় মধু

১. মানুকা ( Manuka Honey)

বাজারে যে সব মধু পাওয়া যায় তাদের সবার থেকে বেশি ঔষধিগুণ সম্পন্ন হিসেবে ধরা হয় মানুকা মধুকে ।

একে আবার মধুর রাজাও বলা হয়ে থাকে এবং এর দামও অনেক বেশি

। এতে  এক ধরনের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রয়েছে যা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে।খাঁটি মানুকা মধু মূলত নিউজিল্যান্ডে উৎপাদিত হয়।

মানুকা নামক এক ধরনের ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদের অনিন্দ্য সুন্দর ফুল থেকে উৎপাদিত হয় এই মানুকা মধু।

বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমনঃ পেটের সমস্যা, গলার সমস্যা, সর্দি, কাশি, ক্ষতসহ বিভিন্ন সমস্যায় এটি অনেক কার্যকরী।

২. এলভিস মধু (Elvis Honey)

এটি হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে দামি মধু।

এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই এক কেজি মধুর দাম দিয়ে একটি গাড়ি কিনে ফেলা যায়।

এক কেজি মধুর দাম সাড়ে ছয় হাজার ডলারের থেকে বেশি।

এই মধুর উৎপত্তিস্থল তুরস্কে। এক হাজার ৪০০ মিটার গভীর এক গুহা থেকে সংগ্রহ করা হয়। উচ্চ খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ বলে এর দাম অনেক বেশি।

৩.ইউক্যালিপটাস (Eucalyptus Honey)

ইউক্যালিপটাস মধুর উৎপত্তিস্থল মূলত অস্ট্রেলিয়া ও ক্যালিফোর্নিয়া। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফুল ফোঁটে ইউক্যালিপটাস গাছে।

তখনই এই মধুর সংগ্রহে শ্রেষ্ঠ সময়। তবে অন্য মধুর মতো স্বাদ পাওয়া যাবে না এই মধুতে।

এটাতে রয়েছে একটু হারবাল টেস্ট। প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে এই মধুতে।

সাধারণত মাথাব্যথা ও সর্দিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে এই মধুর জুড়ি নেই।

৪. ক্লোভার (Clover Honey)

এই মধুর উৎপত্তিস্থল কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে। পৃথিবীতে জনপ্রিয় মধুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই ক্লোভার মধু।

এই মধুর বেশির ভাগ সুপারশপেই পাওয়া যায়।

এটি হালকা হলুদ বর্ণ ও ফুলেল সুবাস যে কোনো খাবারকে করবে অতুলনীয়।

তাছাড়া চা-কফি, বারবিকিউ সস ইত্যাদিতে এই মধুর ব্যবহার হয় সব থেকে বেশি।

৫. আলফালফা (Alfa Alfa Honey)

আলফালফা মধুটি মূলত উৎপাদন করা হয় কানাডায়।

হালকা নীল ও হালকা বেগুনি বর্ণের আলফালফা ফুল থেকে তৈরি হয় এই মধু। এই মধুতে রয়েছে হালকা ফুলেল সুবাস।

সাধারণত যে সব খাবার বেক করে তৈরি করা হয় সে সব খাবারে এটি ব্যবহার করে তার।

যেমন: কেক, বিস্কিট, দই  ইত্যাদি। এই মধুতে রয়েছে বিশেষ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

বিশেষ করে যারা অ্যানিমিয়া ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এই মধুটি বিশেষ উপকারী।

৬. ল্যাভেন্ডার মধু (Lavender Honey)

ল্যাভেন্ডার ফুল থেকে উৎপন্ন এই মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো এসিড, চিনি এবং দেহের জন্য উপকারী এনজাইম, ভিটামিন সি ইত্যাদি।

তাছাড়া প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান তো রয়েছেই।

ত্বকের বিভিন্ন ধরনের চুলকানি, অ্যালার্জি, ফাঙ্গাল ইনফেকশনে সাধারণত এই মধুর ব্যবহার হয়।

সাধারণভাবে বলা যায়- মধু হলো লাখ লাখ মৌমাছির অক্লান্ত শ্রম আর সেবাব্রতী জীবনের দান।

মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে পাকস্থলীতে রাখে।

তারপর সেখানে মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়।

এরপর মুখ হতে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে জমা করা হয় এবং তা আমাদের নানান উপকারী কাজ করে থাকে।

মধুর উপকারিতা

হিউম্যাকটেন্ট

মধু হিউম্যাকটেন্ট যৌগে ভরপুর। এই যৌগটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজ করে এবং ত্বকের উপরিভাগের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এই হিউম্যাকটেন্ট যৌগটিই মূলত ত্বককে নমনীয় করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক দীর্ঘদিন বার্ধক্যের ছাপ মুক্ত থাকে। প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু- রঙ চা বা দুধের সাথে খাওয়া যেতে পারে।

সেই সাথে আমাদের রোজকার ব্যবহৃত ফেস প্যাকেও মাত্র এক চামচ মধু যোগ করা যেতে পারে। মধু ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষকে দূর করে ও মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া রোধ করে।

অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল

মধু শরীরের ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গায় চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান।

এটি ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিহত করে। কোথাও পুড়ে বা কেটে গেলে ক্ষত স্থানে মধুর একটি পাতলা প্রলেপ দিয়ে দি্লে ব্যথা কমবে ও দ্রুত তা নিরাময় করা যাবে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল

মধুতে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা ক্ষত পরিষ্কার হতে সাহায্য করে ও ব্যথা, ঘ্রাণ, পুঁজ ইত্যাদি হ্রাস করে দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে।

অ্যান্টিফাঙ্গাল

মধুতে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান যা ছত্রাক ও অন্যান্য কারনে ক্ষতিগ্রস্থ ত্বককে ঠিক করতে সাহায্য করে ও নতুন ত্বক গঠনে ভূমিকা রাখে।

চর্মরোগ হলে নিয়মিত আক্রান্ত স্থানে এক চামচ মধুর সাথে অল্প পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অতিবেগুনি রশ্মি প্রোতিরোধক

মধুতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে এবং শরীরের চামড়াকে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। অনেকটা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে ।

রোদে পোড়া ত্বককে স্বাভাবিক করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক চামচ মধুর সাথে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ফেস প্যাকের মতন লাগালে রোদে পোড়া জনিত কালো দাগ দূর হয়ে চেহারা হবে ঝলমলে উজ্জ্বল।

গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং শর্করা

মধুতে বিদ্যমান গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং শর্করা শরীরে শক্তি সবরাহের কাজ করে। প্রতিদিন সকালে ১ চামচ মধু সারাদিনের জন্য দেহের পেশীর ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে ।

ক্যালসিয়াম

প্রতিদিন ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে মধুতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। এভাবে মধু রক্তস্বল্পতা রোগকে প্রতিরোধ করে।

ঠোঁটের ওপরের শুষ্ক ভাব দূর

মধু ঠোঁটের ওপরের শুষ্ক ত্বক ও কালচে ভাব দূর করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করে তুলতে সহায়তা করে। রাতে ঘুমের পূর্বে নিয়মিত ঠোঁটে মধু লাগালে ঠোঁট হয়ে উঠবে নজর কাড়া সুন্দর।

5/5 - (31 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x