মেথি কি | মেথি খাওয়ার উপকারিতা | মেথি খাবেন যে কারণে
মেথি কি
মেথি একটি বর্ষজীবি গাছ যাতে মাত্র একবার ফুল ও ফল হয়। মেথিকে মসলা, খাবার, পথ্য তিনটিই বলা চলে।এর স্বাদ তিক্ত ধরনের।
এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় এবং ইউনানী,ভেষজ এবং কবিরাজী চিকিৎসায় এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।
মেথি খাওয়ার উপকারিতাঃ
১.ওজন কমাতে
প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে জন্ম নেয় মেথি। এগুলো চিবিয়ে গিলে খাওয়া যায় যা পাকস্থলীর ফাঁকা স্থান পূর্ণ করে। এতে ওজন কমানোর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
খুব বেশি নয়, সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন সামান্য মেথি চিবিয়ে খেলেই ওজন কমাতে ভূমিকা রাখবে।
স্থূলতা কমাতে প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করা যেতে পারে। এই পানি পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
২. গলা পরিস্কারে
জ্বর ও খুসখুসে গলার জন্য লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এক টেবিল চামচ মেথি গুড়া মিশিয়ে খেলে জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আবার এতে রয়েছে মুসিলেজ নামের এক ধরনের যৌগ, যা গলার খুসখুসে ভাব দূর করে।
৩.চুল পড়া রোধে
স্বাস্থ্যহীন চুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেয় মেথি। চুল পড়া রোধে বহুকাল ধরে মেথির ব্যবহার চলে আসছে। এটি খেতেও পারেন অথবা পেষ্ট বা গুড়া করেও মাথায় দিতে পারেন।
মেথি বাটা সারা রাত নারিকেল তেলের মধ্যে চুবিয়ে রেখে সকালে চুলে মাখুন। ঘণ্টাখানেক পর গোসল করে ফেলুন।
৪.হজমে সহায়ক
বুকে বা পেটের ওপরের দিকে এসিডের প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয় মেথি। সেই সঙ্গে বদহজমের সমস্যায় ওষুধের মতো কাজ করে।
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।যা দেহের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে বের করে দেয়।
উপকার পেতে শুধু পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে খেলেই হবে।
৫.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
দেহে গ্লুকোজের মাত্রা দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মেথি।
এর অ্যামাইনো এসিড অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন ক্ষরণে সহায়তা করে। এতে দেহে গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস্ব পায়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬.উজ্জ্বল ত্বকের জন্য
রূপচর্চায়ও মেথিকে শীর্ষে রাখা যায়। সারা দেহে বয়ে বেড়ানো নানা ক্ষতিকর উপাদান চেহারায় বলিরেখা ফেলে দেয়।
এ ছাড়া চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল সৃষ্টি করে। মেথি দেহের সব অপ্রয়োজনীয় উপাদান বিদায় করে।
৭.খুশকি দূর করতে
বিশেষ ধরনের চুলে প্রচুর খুশকির উৎপাত ঘটে। মাথার শুষ্ক ও মৃত ত্বক থেকে খুশকি হয়।
গোটা রাত পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে তা পেস্ট তৈরি করে এতে ইচ্ছে হলে দই মেশাতে পারেন।
এরপর এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি চলে যাবে।
৮. সন্তান জন্মদানে
সন্তান জন্মদানকে কিছুটা সহজ করতে জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণের যন্ত্রণা কমাতে মেথির অবদানের কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে অতিরিক্ত খাওয়া হলে গর্ভপাত বা অপরিণত শিশুর জন্মদানের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
৯. হরমোন নিয়ন্ত্রনে
তাছাড়া নারীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়েও এর উপকারিতা রয়েছে। মেথিতে রয়েছে সাইটো-ইস্ট্রোজেন, যা নারীদেহে প্রোলেকটিন নামের হরমোনের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটায়।
এই হরমোন নারীদেহকে সুগঠিত করে। এবং ঋতুকালীন বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয় মেথি।
যাদের জন্য নিষিদ্ধ
গর্ভবতী মা, স্পেশাল মেডিকেশন যেমন-ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস রোগী, ব্লাড প্রেশার, ব্লাড থিনিং, থাইরয়েড ইস্যু, অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রভৃতি ক্ষেত্রে এড়িয়ে যেতে হবে।
বাচ্চা বা ছোটদের সরাসরি খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
মেথি যেভাবে খাবেন
৩-৫ গ্রাম বা প্রায় এক চা-চামচ পরিমাণ মেথি ১৮-২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পানি খাওয়া যেতে পারে অথবা গুঁড়া করে ভিজিয়ে সেই পানি খাওয়া যেতে পারে।
সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে সর্বোচ্চ পুষ্টি পেতে গুঁড়া করার সময় না ভেজে নেওয়াই ভালো।
এ ছাড়া বিভিন্ন তরকারিতে দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়, স্প্রাউট করে খেলে বেশি পুষ্টি পাওয়া যাবে। মেথির শাক খাওয়াও অনেক উপকারী।