পনির কি? | পনির কেন খাবেন? | পনির এর স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ
দুধ থেকে তৈরী খাবার প্রতিদিনের ক্যালসিয়াম চাহিদার মধ্যে অনেকটাই পূরণ করে। এগুলোর মাঝে পনির, ওটার , দই ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য খাবার। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পনিরের মতো দুগ্ধজাত খাবার থাকা উত্তম কারণ পনির অতিশয় ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক পনির কি ও এর পুষ্টিগুন সম্পর্কে।
পনির কি?
পনির একটি প্রাচীন খাদ্য। গাভী এবং অন্যান্য প্রাণী থেকে নেওয়া দুধ থেকে প্রায় ১০০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে এটি তৈরি করা শুরু হয়েছে।
ইউরোপ, মধ্য এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে যেখানে চীজ মেকিং উদ্ভত হয়েছিল সেখানে কোন চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়না।
তবে প্রথাটি রোমান যুগের আগে ইউরোপের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।
পনিরকে সাধারনত বার্গার, পিৎজা, মেক্সিকানডিশ, সালাড এবং স্যান্ডউইচ এর মত জনপ্রিয় খাবারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এটি একটি স্ন্যাকস বা একটি এপিটাইজার হতে পারে। এটি সসেজ, সুপ, পেস্ট্রিস এবং অন্যান্য খাবারের সাথে যোগ করা যেতে পারে।
চীজ মূলত গরু, ভেড়া, ছাগল, এবং অন্যান্য প্রাণীর দুধ থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত ধরনের চীজ উৎপাদিত হয়।
এর পোর্টেবিলিটি, দীর্ঘজীবন এবং চর্বি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, এবং ফসফরাসের জন্য এটি অত্যন্ত মূল্যবান।
পনির বেশি কমপ্যাক্ট এবং দুধের চেয়ে বেশিদিন থাকে। যদিও এটি কতক্ষণ ভালো থাকবে তা পনিরের ধরনের উপর নির্ভর করে। পনিরের প্যাকেটের লেবেল প্রায়ই দাবি করে যে এটি খোলার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে খাওয়া উচিত।
সাধারণভাবে বলা যায়, হার্ড পনির নরম পনিরের চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।
যদিও বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এটি পুষ্টির একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং এটি ব্যাপকভাবে খাওয়া হয় তবে এর ব্যবহার সর্বজনীন নয়। পনির ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস, সুস্থ হাড় এবং দাঁত, রক্তজমাট বদ্ধকরণ, ক্ষত নিরাময় এবং স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখার একটি মূল উৎস।
তাছাড়াও পনিরে রয়েছে vitamin A, vitamin B12, zinc, phosphoras, riboflavin ইত্যাদি।
পনির এর ধরণ
পুরো পৃথিবীতে অগণিত পনিরের ধরন রয়েছে । সাধারনত দুধের সাথে আরো অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে এই পনির গুলো তৈ্রী করা হয়ে থাকে।কিছু পনিরের ধরন নিম্নরুপঃ
- Brie
- Cheddar
- Feta
- Gouda
- Mozzarella
- swiss ইত্যাদি।
এগুলোই মুলত পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় চীজের ধরন যা মুটামুটি সব দেশেই চলে।
পনির এর রেসিপি
উপকরণ-
১। দুধ- ১ লিটার
২। লেবুর রস/ ভিনেগার- ১ কাপ
বানানোর পদ্ধতি
১। প্রথমে দুধ টাকে ভালো ভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে ৷
২। এরপর চুলা অফ করে তাতে পরিমান মতো লেবুর রস বা ভিনিগার দিয়ে সেটাকে চামচ দিয়ে পুরো দুধ টাকে নেড়ে ঢেকে রাখতে হবে ৷
৩। এরপর দশ মিনিট পর ঢাকনা টি খুলে দেখা যাবে সমস্ত দুধ টা কেটে দুধের ছানা আর পানি আলাদা হয়ে গেছে।
৪। এরপর পাতলা সুতি কোনো কাপড়ে ছানা টা কে ছেকে পানি ঝড়িয়ে নিতে হবে।
৫। পানি ঝরে যাওয়ার পর পুটলি টাকে একটা প্লেটের উপর সমান ভাবে বসিয়ে ভারী কিছু বা মসলা বাটা পাথরের শিল দিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে হবে ৪-৫ ঘন্টা ।
৬. এরপর পুরো ছানা ভালোভাবে সেট হয়ে গেলে পনির তৈরি হয়ে যাবে ।
পনির এর সাতটি স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ
১.হাড় গঠন
ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা, এবং ভিটামিন এ, ডি, এবং কে এর উৎস। এটি শিশুদের এবং তরুণ প্রাপ্ত বয়স্কদের স্বাস্থ্যকর হাড়ের বিকাশে এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।
২. দাঁতের সুরক্ষা
পনির দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। ক্যালসিয়াম দাঁত গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পনির ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস। এটি দাঁতের গহ্বরের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
৩. রক্তচাপ কমানো
পরিসংখ্যান করে দেখা যায় যে যারা বেশী পনির খায় তাদের রক্তচাপ কম থাকে। যদিও কিছু কিছু পনিরে চর্বি এবং সোডিয়াম থাকে। কটেজ পনির হালকাস্বাদের এবং কম চর্বি যুক্ত হয়। ক্যালসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৪. সুস্থ রক্তপ্রবাহ
গবেষক দের মতে দুগ্ধজাত পণ্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, গ্লুটথিয়নের একটি ভাল উৎস হতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য এবং বয়স-সম্পর্কিত নিউরোডিজেনারেশন প্রতিরোধের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. কোলেস্টেরল
২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি ছোট্ট গবেষণায় দেখা যায় এটি রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৬. স্বাস্থ্যকর ওজন
যেহেতু পনির ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস, তাই লোকেদের ওজন কমানোর জন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
৭. ওমেগা -3 ফ্যাটিঅ্যাসিড
এগুলি কিছু ধরণের পনিরে পাওয়া গেছে। ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম এবং মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
পনির কিভাবে খাবেন?
১. এটি সাধারণত স্যালাড কিংবা যেকোনো রান্নার ওপর ছড়িয়ে খাওয়া যেতে পারে।
২. মোজারেলা পনির পিৎজার ওপর ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. বেশ কিছু ফলের রসের মধ্যে এটি দেওয়া হয়ে থাকে।
৪. মাংস দিয়ে ফাঁপা বল তৈরী করে বলের ভেতর পনির যোগ করতে পারেন। এটি একটি নতুন ধরনের রেসিপি হবে।
৫. বিভিন্ন ফলের মাঝখানে পনিরের টুকরো যোগ করে নতুনত্ব স্বাদের খাবার খেতে পারেন।
৬. ডিমের অমলেট এর ভেতরে পনির দিয়ে অমলেট তৈরি করতে পারেন।
৭. যেকোনো ধরনের প্যাটিস খাওয়ার সময় তার ভেতরে এটি যোগ করে খেতে পারেন।
৮. পাউরুটির ভেতরে দিয়ে খেতে পারেন ইত্যাদি।
পনির এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
যে কোনো জিনিসই অত্যধিক মাত্রায় গ্রহণ করার ফলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
Cheese বা পনিরের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেগুলো অত্যধিক মাত্রায় গ্রহণ করার ফলে লক্ষ্য করা যায়। তবে যাদের দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর এলার্জির সম্ভাবনা রয়েছে তাদের না খাওয়াই ভাল।
হূদরোগ: অতিরিক্ত পনির খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যদি প্রতিদিন গড়ে ১০০ গ্রাম অথবা বেশি পরিমাণে খান, তাহলে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি ১০-১৮% বাড়তে পারে।
ওবিসিটি: পনিরে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে,
যে কারণে মানুষ মোটা হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত পনির খেলে আপনার ওজন বেড়ে যাবে এবং অনেক শারীরিক অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কনস্টিপেশন: পনিরের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেল, এবং ফ্যাট একসাথে রয়েছে এবং এর মধ্যে যদি কোন উপাদান আপনার শরীর হজম করতে না পারে তাহলে আপনার কনস্টিপেশন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত পনির গ্রহণের ফলে প্রায় সবার কনস্টিপেশনের সমস্যা হতে দেখা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ: পনিরের প্রচুর পরিমাণে সেচুরেটেড ফ্যাট আছেে।
এটি উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে এবং এই উচ্চ রক্তচাপ থেকে স্ট্রোক হতে পারে।এলার্জি: পনিরে অনেক প্রকারের উপাদান রয়েছে যা মানব শরীরে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
পনিরের এসব উপাদান আপনার শরীল সহ্য নাও করতে পারে তাই বেশি পরিমাণে পনির খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।