টিস্যু কাকে বলে? টিস্যুর প্রকারভেদ ও প্রাথমিক ধারনা।

আজকে আমরা জানবো টিস্যু কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে।

টিস্যু কাকে বলে

একই বা বিভিন্ন প্রকারের একগুচ্ছ কোষ একত্রিত হয়ে যদি একই কাজ সম্পন্ন করে এবং তাদের উৎপত্তি ও যদি অভিন্ন হয় তবে তাকে টিস্যু বা কলা বলে।

টিস্যু এর প্রকারভেদঃ

যেসকল কোষ টিস্যু গঠন করে সেসকল কোষের বিভাজন অনুযায়ী এটি ২ প্রকার। যথা-

১. ভাজক টিস্যুঃ

২. স্থায়ী টিস্যুঃ

ভাজক টিস্যু কাকে বলে

যেসকল কোষ  বিভাজনে সক্ষম তাদের ভাজকটিস্যু বলে।

বৈশিষ্ট্য

১. এই টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে সক্ষম।

২. কোষগুলো জীবিত এবং অপেক্ষাকৃত ছোট।

৩. এরা আয়াতাকার,ডিম্বাকার,পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ আকার হয়ে থাকে।

৪. কোষের মধ্যে কোনো আন্তঃকোষীয় ফাঁক থাকে না৷

৫. কোষের নিউক্লিয়াস অপেক্ষাকৃত বড় এবং ঘন সাইটোপ্লাজমে পূর্ণ।

ভাজক টিস্যু এর কাজ

১. শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর বিভাজনে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বাড়ে।

২. পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যুর বিভাজনে উদ্ভিদের প্রস্থ বৃদ্ধি পায়।

৩. ক্ষতস্থান পূরন করে ভাজক টিস্যুর মাধ্যমে।

৪. ভাজক টিস্যুর থেকে স্থায়ী টিস্যুর সৃষ্টি হয়

ভাজক টিস্যু এর প্রকারভেদঃ

উৎপত্তি অনুসারে ভাজক টিস্যু ৩ প্রকার। যথা-

১.প্রারম্ভিক ভাজক টিস্যুঃ মূল বা কান্ডের অগ্রভাগের শীর্ষে একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল রয়েছে যেখান থেকে পরবর্তীতে প্রাইমারি ভাজক টিস্যুর উৎপত্তি ঘটে তাকে প্রারম্ভিক ভাজকটিস্যু বলে ।

২. প্রাইমারি ভাজক টিস্যুঃ যে সকল ভাজকটিস্যু উদ্ভিদের ভ্রুণ অবস্থা থাকাকালীন উৎপত্তি লাভ করে তাকে প্রাইমারি ভাজক টিস্যু বলে ।

৩. সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যুঃ যে ভাজকটিস্যু কোন স্থায়ী টিস্যু হতে পরবর্তী সময়ে উৎপন্ন হয় তাকে সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু বলে।

অবস্থান অনুসারে ভাজক টিস্যু ৩ প্রকার।যথা-

১.শীর্ষস্থ ভাজক: মূল, কান্ড বা এদের শাখা-প্রশাখার শীর্ষে অবস্থিত ভাজক টিস্যু।

২. ইন্টারক্যালরি নিবেশিত ভাজক: দুটি স্থায়ী টিস্যুর মাঝখানে অবস্থিত ভাজক টিস্যু।

৩. পার্শ্বীয় ভাজক: মূল কাণ্ডের পার্শ্ব বরাবর লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত ভাজক টিস্যু।

কোষ বিভাজন অনুসারে ভাজক টিস্যু ৩ প্রকার।যথা-

১. মাস ভাজক টিস্যু কাকে বলে ঃ যে ভাজক টিস্যুর কোষ বিভাজন সব তলে ঘটে তাকে মাস ভাজক টিস্যু বলে।

২. প্লেট ভাজক টিস্যু কাকে বলে ঃ যে ভাজক টিস্যুর কোষ শুধু মাত্র দুই তলে বিভাজিত হয় তাকে প্লেট ভাজক টিস্যু বলে ।

৩. রিব ভাজক টিস্যু কাকে বলে ঃ যে ভাজক টিস্যুর কোষগুলো একটি তলে বিভাজিত হয় তাকে রিব ভাজক টিস্যু বলে ।

কাজ অনুসারে ভাজক টিস্যু ৩ প্রকার। যথা-

১. প্রোটোডার্মঃ যে সকল ভাজক টিস্যুর কোষসমূহ উদ্ভিদ দেহের ত্বক সৃষ্টি করে তাকে প্রোটোডার্ম বলে।

২. প্রোক্যাম্বিয়ামঃ ক্যাম্বিয়াম, জাইলেম ও ফ্লোয়েম সৃষ্টিকারী ভাজক টিস্যুকে প্রোক্যাম্বিয়াম বলে।

৩. গ্রাউন্ড মেরিস্টেমঃ শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যুর যে অংশ বরাবর বিভাজিত হয়ে উদ্ভিদের মূল ভিত্তি তথা কর্টেক্স ,মজ্জা ও মজ্জারশ্মি সৃষ্টি করে তাকে গ্রাউন্ড মেরিস্টেম বলে।

স্থায়ী টিস্যু কাকে বলে

যে টিস্যুর কোষগুলো বিভাজনে অক্ষম, আকার আকৃতি ও বিকাশে স্থায়িত্ব লাভ করেছে তাকে স্থায়ী টিস্যু বলে।

স্থায়ী টিস্যুর কাজঃ

১৷ খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবহন করা।

২। দেহ গঠন ও উদ্ভিদ কে দৃঢ়তা প্রদান করা।

স্থায়ী টিস্যু প্রধানত ২ প্রকার। যথা-

১. প্রাথমিক স্থায়ী টিস্যু – শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু হতে উৎপন্ন।

২. সেকেন্ডারী স্থায়ী টিস্যু – পার্শীয় ভাজক টিস্যু হতে উৎপন্ন।

কোষের আকার, আকৃতি ও কাজের উপর ভিত্তি করে স্থায়ী টিস্যু ৩ প্রকার। যথা-

১. সরল টিস্যু

২. জটিল টিস্যু

৩. ক্ষরনকারী টিস্যু

এই হলো টিস্যু কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ নিয়ে প্রাথমিক ধারনা। টিস্যু সম্পর্কে জানতে হলে এই প্রাথমিক ধারনা টুকু থাকা আবশ্যক।

Similar Posts