জীববিজ্ঞান

ক্রোমোজোম কি বা ক্রোমোসোমের ভৌত গঠন ও কাজ।

1 min read

ক্রোমোজোম কি ?

আমরা ক্রোমোজোম বলতে মূলত কি বুঝি- কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত এমন একটি ক্ষুদ্রাঙ্গ যার অনুলিপন ক্ষমতা রয়েছে এবং যা বংশগতীয় উপাদান, মিউটেশন, প্রকরন ইত্যাদি কাজে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

ক্রোমোজোম শব্দটি এসেছে ২টি গ্রিক শব্দ হতে অর্থ্যাৎ গ্রিক ক্রোমা(chroma) অর্থ রঙ এবং সোমা( soma) অর্থ দেহ বা বস্তু।

তাহলে ক্রোমোসোম এর অর্থ হলো রঞ্জিত দেহ বা রংধারনকারী দেহ।

কোনো প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি জীবের দেহকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা নির্দিষ্ট বা ধ্রুবক থাকে যা কখনোও পরিবর্তন হয় না।

যেমন: মানুষের দেহকোষের ক্রোমোসোম সংখ্যা ২৩ জোড়া বা ৪৬ টি যা নির্দিষ্ট এবং ধ্রুবক।

ক্রোমোজোম এর আবিষ্কারক কে ?

১৮৭৫ সালে বিজ্ঞানী স্ট্রেজবার্জার ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন ৷ পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানী ওয়েল্ডেয়ার ১৮৮৮ সালে ক্রোমোজোমের নামকরণ করেন।

১৯৩৩ সালে বোভেরি নামক এক বিজ্ঞানী প্রমান করেন যে ক্রোমোজোম ই বংশগতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে ৷ ১৯৩৫ সালে হেইজ ই সর্বপ্রথম ক্রোমোসোম এর গঠনের বর্ননা করেন।

ক্রোমোজোম এর আকার কি

ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য প্রায় ০.২-৫০ মাইক্রন বা মাইক্রোমিটার এবং এর প্রস্থ প্রায় ০.২-২ মাইক্রন বা মাইক্রোমিটার।

মানুষের ক্রোমোসোম এর দৈর্ঘ্য ৬ মাইক্রন বা মাইক্রোমিটার যা কিনা নির্দিষ্ট।

ক্রোমোজোম এর ভৌত গঠন কি

একটি আদর্শ ক্রোমোজোম এর ভৌত গঠন নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

১. ক্রোমাটিড:

কোষ বিভাজনের মেটাফেজ পর্যায়ে প্রান্তটি ক্রোমোসোমের অনুদৈর্ঘ্য বরাবর দুটি খন্ডে বা ভাগে বিভক্ত হয়ে থাকে। এই ধরনের প্রতিটি খন্ড বা প্রতিটি ভাগকে ক্রোমাটিড বলে।

তাছাড়াও ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের অঞ্চলের দিকে যেই প্রসারিত বাহু থাকে তাদেরকে ক্রোমাটিড বলে আখ্যায়িত করা হয়।

মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশার প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত দেখা যায় যে সেন্ট্রোমিয়ার গুলোর কোনো বিভাজন হয় না। ফলে ক্রোমাটিডগুলি একই সঙ্গে থাকে।

তবে মেটাফেজের মধ্য পর্যায়ের ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করলে দেখা যায় সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হবার ফলে ক্রোমাটিডগুলিও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আবার অ্যানাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোম এর ক্রোমাটিনগুলি স্পিন্ডলের দিকে গমন করতে শুরু করে।

সুতরাং এক্ষেত্রে এটা বলা যায় যে মেটাফেজ পর্যায়ে ক্রোমোজোম গঠনের ক্ষেত্রে দুটি করে ক্রোমাটিড থাকলেও অ্যানাফেজ পর্যায়ে ক্রোমোজোমে থাকে মাত্র একটি করে ক্রোমাটিড।

 

২. ক্রোমাটিন:

ক্রোমাটিডের দৈর্ঘ্য বরাবর এক বা একাধিক সূক্ষ সুতার ন্যায় যে অংশ বা যে তন্তু দেখা যায় তাকে ক্রোমাটিন তন্তু বা ক্রোমোনেমা বলে।

ক্রোমোজোম এর মূল উপাদানই হলো ক্রোমাটিন । আর এই ক্রোমাটিন ই মূলত DNA অনুর প্রোটিন যৌগ। ক্রোমোনেমা মূলত ক্রোমাটিডের প্রাথমিক একটি অবস্থা।

. সেন্ট্রোমিয়ার:

ক্রোমোসোমকে রঞ্জিত করার পর এর যে অংশ রংহীন বা বিবর্ন থাকে তাকে সেন্ট্রোমিয়ার বলে।

৪. মুখ্যকুঞ্চন:

ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার যেই স্থানে থাকে সেই স্থানে ক্রোমোজোমে একটি বিশেষ খাঁজের সৃষ্টি হয়। এই খাঁজকে বলা হয় মুখ্যকুঞ্চন ।

৫. বাহু:

সেন্ট্রোমিয়ারের দুই পাশের যেই ক্রোমোজোমাল অংশ থাকে তাকে বাহু বলা হয়। প্রতিটি ক্রোমোসোমেই সাথারনত দুটি বাহু থাকে।

৬. কাইনেটোকোর:

প্রতিটি ক্রোমোজোম এর সেন্ট্রোমিয়ারে একটি ছোট গাঠনিক অবকাঠামো থাকে যাকে কাইনেটোকোর বলা হয়।

এর আকৃতি অনেকটা গোলাকার চাকতির মতো। এই চাকতির মধ্যেই মাইক্রোটিউবিউল গুলো যুক্ত থাকে। এই মাইক্রোটিউবিউল এর সংখ্যা সাধারনত ৪-৪০ টির মতো হয়ে থাকে।

৭. ক্রোমোমিয়ার:

মিয়োসিস কোষ বিভাজনের প্যাকাইটিন উপপর্যায়ে ক্রোমোজোমের উপর যে গোলাকার দানার ন্যায় অংশগুলো থাকে তাকে ক্রোমোমিয়ার বলে। ইন্টারফেজ দশায় জটিল অনুবীক্ষন যন্ত্রের মাধ্যমে এই ক্রোমোমিয়ার গুলো দেখা যায়।

৮. গৌন ‍কুঞ্চন:

ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়াও কোন কোন ক্রোমোসোমে এক বা একাধিক কুঞ্চিত খাঁজ কাটা অংশ দেখা যায় তাকে গৌন কুঞ্চন বলে।

৯. স্যাটেলাইট:

গৌন কুঞ্চন এর সাহায্যে পৃথক করা গোলাকার অংশটিকে স্যাটেলাইট বলা হয়। স্যাটেলাইট যুক্ত যেই ক্রোমোজোম তাকে বলা হয় সেট ক্রোমোসোম বলে।

১০. টেলোমিয়ার:

বিজ্ঞানী মুলার ই সর্ব্প্রথম টেলোমিয়ার এর উদ্ভাবন করেন। ক্রোমোসোমের প্রান্তের যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ন অঞ্চল রয়েছে তাকে টেলোমিয়ার বলে।

১১. ম্যাট্রিক্স:

ক্রোমাটিন তন্তুর চারদিকে পেলিকল এর দ্বারা আবৃত যে স্তর থাকে তাকে ম্যাট্রিক্স বলে।

ক্রোমোজোম এর প্রকারভেদ কি কি ?

ক্রোমোজোম এর প্রকারভেদ নিম্নরূপ-

কাজ, দেহ গঠন ও লিঙ্গ নির্ধারনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ক্রোমোজোম দুই ধরনের। যথা-

১. অটোসোম

২. সেক্স ক্রোমোসোম

১. অটোসোম কি

যে সকল ক্রোমোসোম দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রন করে এমন জিন বহন করে তাদেরকে অটোসোম বলে। অটোসোমের সেটকে A চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। মানুষের দেহ কোষে সর্বমোট ২২ জোড়া অটোসোম থাকে।

২. সেক্স ক্রোমোজোম কি

যে সকল ক্রোমোসোম জীবের লিঙ্গ নির্ধারন করে এবং লিঙ্গ নির্ধারনকারী জিন বহন করে তাদেরকে সেক্স ক্রোমোসোম বলে। এরা দুই ধরনের যথা- X ও Y । পুরুষে থাকে XY এবং স্ত্রীতে থাকে  XX ক্রোমোজোম। মানুষের দেহে মোট এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে।

সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যা অনুযায়ী ক্রোমোজোম ৫ প্রকার। যথা-

১. মনোসেন্ট্রিক – সেন্ট্রোমিয়ার এর সংখ্যা থাকে ১টি।

২. ডাইসেন্ট্রিক- এখানে ২টি সেন্ট্রোমিয়ার থাকে।

৩. পলিসেন্ট্রিক- এই ক্ষেত্রে ২ এর অধিক সেন্ট্রোমিয়ার দেখা যায়।

৪. ডিফিউজড- সেন্ট্রোমিয়ারগুলো নির্দিষ্ট স্থানে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় না।

৫. অ্যাসেন্ট্রিক-এক্ষেত্রে কোন সেন্ট্রোমিয়ারই থাকে না।

সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ক্রোমোজোম ৪ প্রকার। যথা-

১. মেটাসেন্ট্রিক

২. সাবমেটাসেন্ট্রিক

৩. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক

৪. টেলোসেন্ট্রিক

১. মেটাসেন্ট্রিক:

যে সকল ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার একদম মাঝামাঝি অবস্থান করে তাদেরকে মধ্যকেন্দ্রিক বা মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর আকৃতি অনেকটা ইংরেজী V অক্ষরের মতো।

২. সাব-মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম কি:

যে সকল ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার মাঝখান একটু একপাশ হয়ে  অবস্থান করে তাদেরকে সাব-মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর আকৃতি প্রায় ইংরেজী L অক্ষরের মতো।

৩. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম কি:

যে সকল ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি এক প্রান্তের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে থাকে তাদেরকে অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর আকৃতি অনেকটা ইংরেজী J অক্ষরের মত।

৪. টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম কিক্রোমোজোম কিক্রোমোজোম কি:

যে সকল ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একবারে প্রান্তে অবস্থান করে থাকে তাদেরকে টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম বলে। এর আকৃতি ইংরেজী I অক্ষরের মতো দেখায়।

ক্রোমোজোম এর কাজ কি ?

ক্রোমোজোম এর কাজগুলো হলো-

১. বংশানুক্রমে এক জীবের বৈশিষ্ট্য অন্য আরেক জীবে বহন করে নিয়ে যায়।

২. জীবের বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে ধারন করে রাখে।

৩. বংশগতির মূল উপাদান যেই জিন তা ধারন করে।

৪. প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য mRNA তৈরী করে।

৫. জীবের লিঙ্গ নির্ধারনে প্রধান ভূমিকা রাখে।

5/5 - (33 votes)
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x