বৃক্ক বিকল কি?
বৃক্ক বিকল একটি প্রচলিত সমস্যা সারা বিশ্বজুরে।বৃক্ক বা কিডনি এর কতগুলো কাজ রয়েছে। এটি আমাদের শরীরের তরলের ব্যবস্থাপনা করে, রক্তচাপের ব্যবস্থাপনা করে, রক্ত ব্যবস্থাপনা করে, শরীরের তাপমাত্রার ব্যবস্থাপনা করে এবং আমাদের শরীরের নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh33-BDJpls9_25AXX2TJ0zZQkIzYFHjFj8k6m0BfOAE2_19p561-fYtUYfyN2F-kOwuELniJRXTZbjd11u8tJrltuiUktYdiYQ2bN5056MR53TWBxKoGzMJcntgojBabqv5acTwwCIO9DketaUp_sOGXtnXC48WrHYaBTVlxXxADNkyK4OAGkl9ASM8dg/s1600/kidney-fail-300x215.jpg)
আমরা যে জিনিসগুলো খাচ্ছি, তার যে বর্জ্য সেগুলো নিষ্কাশনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বৃক্ক। এখন বৃক্ক যদি তার এই কাজগুলো করতে না পারে, তাহলে আমরা একে বলি কিডনি ফেইলিউর বা বৃক্ক বিকল।
বৃক্ক বিকল এর ধরন:
বৃক্ক বিকল দুই ভাবে হতে পারে। যথা-
১. হঠাৎ করে বৃক্ক বিকল
২. ধীরগতিতে বৃক্ক বিকল।
বৃক্ক মূলত হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করতে পারে অথবা আস্তে আস্তে সময় নিয়ে কাজ বন্ধ করতে পারে।
বৃক্ক বিকল এর কারণ:
১. একিউট বা হঠাৎ বৃক্ক বিকলঃ
এটি আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডায়রিয়াজনিত কারণে হয়ে থাকে। তরল বের হয়ে যাওয়ার কারণে হয়।
যা ডায়রিয়ার জন্য হতে পারে অথবা হঠাৎ করে রক্তপাত হলে, দুর্ঘটনা হলে সেক্ষেত্রে হতে পারে।
আবার নারীদের ক্ষেত্রে প্রসবের সময় হতে পারে। তবে আমাদের দেশে বেশিরভাগ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে- ডায়রিয়া, কলেরা বা বিভিন্ন গ্যাসট্রোএনট্রাইটিস সমস্যার কারণে হয়।
আজকাল আরেকটি প্রধান কারণ হলো ওষুধ। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ- অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যাথার ওষুধ এর কারনে কিডনি বিকল হতে পারে।
২. ধীর গতিতে বৃক্ক বিকলঃ
ক্রনিকের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ কিডনি রোগঃ
-অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসজনিত অথবা উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়।
– এ ছাড়া ক্রনিক নেফ্রাইটিক সিনড্রমের কারণেও এ ধরনের কিডনি রোগ হতে পারে।
সময়মতো কিংবা যথাযথ চিকিৎসা না করালে আকস্মিক কিডনি রোগও ক্রনিক রোগে পরিণত হতে পারে।
এই সকল রোগের কারনে রোগীর বৃক্ক বিকল হয়ে যেতে পারে আর এটি মূলত খুবই ধীর একটি প্রক্রিয়া।
বৃক্ক বিকল এর লক্ষনঃ
১. বৃক্ক বিকলের প্রধান উপসর্গই হলো প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যাওয়া, এমনকি অনেক সময় প্রস্রাব কমতে কমতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রস্রাবে পরিবর্তন- যেমনঃ প্রস্রাব বেশি বা কম, রং ঘোলা, লালচে বা রক্ত যাওয়া, অনেক সময় প্রস্রাবের বেগ অনুভব হলেও প্রস্রাব হয় না, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালাপোড়া, সঙ্গে জ্বর এবং পিঠের পেছনে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
২. চোখ বা চোখের পাতার নিচে, এমনকি মুখ ফুলে যেতে পারে। এর সঙ্গে পায়ে পানি আসতে পারে।
৩. অরুচি, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, এমনকি বমি হয়েও যেতে পারে।
৪. কোমরের দুই পাশে এবং তলপেটেও ব্যথা হতে পারে।
৫. উচ্চ রক্তচাপ, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, সঙ্গে কাশি, এমনকি চিৎ হয়ে রোগী শুয়ে থাকতে পারে না।
৬. অনেক ক্ষেত্রে টনসিল বা খোসপাঁচড়া হওয়ার দু-তিন সপ্তাহ পর এ ধরনের নেফ্রাইটিস হতে পারে।
বৃক্ক বিকল এর প্রতিকার:
বৃক্ক বিকল হলে এর দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যথা-
১. ডায়ালাইসিস
২. বৃক্ক প্রতিস্থাপন।
ডায়ালাইসিস:
বৃক্ক অসম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় রক্ত হতে বর্জ্য পদার্থ ও অপ্রয়োজনীয় পানি অপসারণ করাকে ডায়ালাইসিস বলে।
প্রক্রিয়াঃ
যে মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয় তাকে ডায়ালাইসিস মেশিন বলা হয়।
ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এই মেশিনের ডায়ালাইসিস টিউবটি আক্রান্ত রোগীর হাতের কব্জির এবং অন্য প্রান্ত ঐ হাতের কব্জির সাথে সংযোজন করা হয়। ধমনী থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস টিউবের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। এর প্রাচীর আংশিক বৈষম্যভেদ্য হওয়ায় ইউরিয়া, ইউরিক এসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। পরিশোধিত রক্ত রোগীর দেহের শিরার মধ্য দিয়ে দেহের ভিতর পুনরায় প্রবেশ করে। ডায়ালাইসিস টিউবটি এমন একটি তরলের মধ্যে ডোবানো থাকে যার গঠন রক্তের প্লাজমা রক্তরসের মতো।
এভাবে ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্যপদার্থ বাইরে নিষ্কাশিত হয়।
তবে এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষে প্রক্রিয়া।
বৃক্ক প্রতিস্থাপনঃ
যখন কোন ব্যক্তির বৃক্ক বিকল বা অকেজো হয়ে পড়ে তখন কোন সুস্থ ব্যক্তির কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করাকে কিডনি বা বৃক্ক প্রতিস্থাপন বলে।
যাদের কিডনি নেওয়ার উপযোগী-
- i) কোনো নিকট আত্মীয়ের কিডনি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন।
- ii) মৃত ব্যক্তির কিডনি কে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন মৃত ব্যক্তি বলতে ”ব্রেন ডেড “মানুষকে বোঝায়।
পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ কিডনি অকেজো রোগীর কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে সুস্থভাবে জীবন যাপন করছে। একটি কিডনি কর্মক্ষম থাকলে সেটি দিয়ে সুস্থ ভাবে জীবন ধারণ করা সম্ভব, একটি সুস্থ কিডনি প্রতিস্থাপন করে রোগের চিকিৎসা করা যায়।
তবে দেখতে হবে যে টিস্যু ম্যাচ করে কি না। পিতামাতা, ভাই বোন এবং নিকট আত্মীয়ের কিডনির টিস্যু ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই তাদের কাছ থেকে কিডনি সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন করা অধিক ভালো।