আজ আমরা জানবো সন্ধি কাকে বলে ও এর প্রকারভেদ।
সন্ধি কাকে বলে
বাংলা ব্যাকরনের ক্ষেত্রে সন্ধি এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে শব্দ গঠন করা হয়। এটাকে মূলত শব্দ গঠনের মাধ্যম ধরা হয়ে থাকে।
সন্ধি শব্দের অর্থ হলো- মিলন। অর্থ্যাৎ মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে যদি দুটি ধ্বনি একত্রে মিলিত হয় বা একটি ধ্বনি লোপ পেয়ে যায় অথবা একটি ধ্বনির প্রভাবে পড়ে অন্য আরেকটি ধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে যায় তবে তাকে সন্ধি বলা হয়।
খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে- সন্নিহিত দুইটি ধ্বনির মিলনকেই সন্ধি বলা হয়।
ব্যাকরনবিদগন বিভিন্ন ভাবে সন্ধির সংগা প্রদান করেছেন। যেমন-
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতে- বর্ণদ্বয়ের মিলন কে সন্ধি বলে।
অশোক মুখোপাধ্যায় এর মতে- একান্ত সন্নিহিত বা অব্যবহিত দুটি ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি।
ড. সুকুমার সেন এর মতে- পরষ্পর অত্যন্ত সন্নিহিত দুই বর্ণের মিলনকে সন্ধি বলে।
জ্যোতিভূষন চাকী এর মতে- দ্রুত উচ্চারনের ফলে পরষ্পর সন্নিহিত ধ্বনির পরিবর্তন হয়। এতে দুটি ধ্বনির মিলন, পরিবর্তন কিংবা লোপ হতে পারে।এরূপ মিলন বা লোপ বা পরিবর্তন কে সন্ধি বলে।
ড. মুহাম্মদ এনামুল হক এর মতে- একাধিক ধ্বনির মিলন, লোপ না পরিবর্তন এর নাম সন্ধি।
সন্ধির উপাদান –
সন্ধির কয়েকটি প্রধান উপাদান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম-
১. ধ্বনি
২. বর্ণ
৩. পূর্বপদ ও
৪. পরপদ
সন্ধি এর বৈশিষ্ট্য কাকে বলে
সন্ধির ক্ষেত্রে ধ্বনির মিলন ৪ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন—
(১) উভয় ধ্বনি মিলে একটি ধ্বনিতে পরিণত হতে পারে।
(২) একটি ধ্বনির পরিবর্তন হতে পারে।
(৩) একটি ধ্বনি লোপ পেয়ে যেতে পারে।
(৪) উভয় ধ্বনি পরিবর্তিত হয়ে নতুন একটি ধ্বনির সৃষ্টি করতে পারে।
সন্ধির মাধ্যমেই নতুন শব্দ গঠিত হয়, বাক্যের গঠন সুদৃঢ় হয় এবং বাক্য শ্রুতিমধুর ও সুন্দর হয়।
সন্ধির প্রয়োজনীয়তা-
১. উচ্চারনের ক্ষেত্রে কম সময় লাগে।
২. ধ্বনিগত মাধুর্য রক্ষিত হয় এবং ভাষা সহজ ও সাবলীল হয়।
৩. এটি উচ্চারন কে অত্যন্ত দ্রুত ও সহজ করে তুলে।
৪. এর জন্য কোনো শব্দ আকারে ছোট হয়।
সন্ধির প্রকারভেদ –
সন্ধিকে মূলত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
১. খাঁটি বাংলা সন্ধি
২. তৎসম বা সংস্কৃত সন্ধি
খাঁটি বাংলা সন্ধি কাকে বলে–
তৎসম ছাড়া অর্থ্যাৎ তদ্ভব,দেশি ও বিদেশী যেসকল শব্দ বাংলায় গৃহীত ও প্রচলিত এবং সন্ধির সকল নিয়ম কানুন মেনে চলে তাকে খাঁটি বাংলা সন্ধি বলে।
এই বাংলা সন্ধি সাধারনত দ্রুত উচ্চারনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যেমন- হাত + ছাড়া= হাচ্ছাড়া।
খাঁটি বাংলা সন্ধিকে আবার ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. বাংলা স্বর সন্ধি
২. বাংলা ব্যাঞ্জন সন্ধি।
বাংলা স্বর সন্ধি কাকে বলে-
স্বরধ্বনির সহিত স্বরধ্বনির মিলনের মাধ্যমে যে সন্ধি সৃষ্টি হয় তাকে বলে স্বর সন্ধি।
যেমন-
তিল+ এক= তিলেক
মা+ এ= মায়ে
ছেলে+ আমি= ছেলেমি।
বাংলা স্বর সন্ধি আবার ২ ধরনের।যথা-
১. অন্তঃ সন্ধি – শব্দ গঠনকালে প্রকৃতি ও প্রত্যয় এই দুটি শব্দের মধ্যকার যে সন্ধি তাকে অন্তঃ সন্ধি বলে। যেমন- লো+ অন= লবন।
২. বহিঃ সন্ধি – দুটি ভিন্ন শব্দের সন্নিহিত দুটি ধ্বনির মধ্যে যে মিলন হয় তাকে বহিঃ সন্ধি বলে। যেমন- ছোটো+ এর= ছোটোর।
বাংলা ব্যাঞ্জনসন্ধি কাকে বলে–
স্বরধ্বনি+ ব্যাঞ্জনধ্বনি
ব্যাঞ্জনধ্বনি+ স্বরধ্বনি কিংবা,
ব্যাঞ্জনধ্বনি+ ব্যাঞ্জনধ্বনি এরুপ মিলনকে বাংলা ব্যাঞ্জন সন্ধি বলা হয়ে থাকে। যেমন- পিছে+ মোড়া= পিছমোড়া।
বাংলা ব্যঞ্জন সন্ধি ও ২ প্রকার। যথাঃ
১. অন্তঃসন্ধি। যেমন- সাত+ জন্ম= সাজ্জন্ম
২. বহিঃসন্ধি (চলৎ+ চিত্র= চলচ্চিত্র)
সংস্কৃত বা তৎসম সন্ধি কাকে বলে
তৎ অর্থ তার, আর সম অর্থ সমান অর্থাৎ, তৎসম অর্থ তার সমান বা সংস্কৃতের সমান।
বাংলা ভাষায় এমন বহু সংস্কৃত শব্দ অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এসব শব্দই মূলত তৎসম সন্ধি।
সংস্কৃত বা তৎসম সন্ধি ৩ প্রকার। যথাঃ
১. স্বর সন্ধি
২. ব্যঞ্জন সন্ধি
৩. বিসর্গ সন্ধি
বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে–
পূর্বপদের বিসর্গের সহিত পরপদের ব্যাঞ্জন বা স্বরধ্বনির মিলনকেই বিসর্গ সন্ধি বলে।
শুধুমাত্র সংস্কৃত শব্দেই এর আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
বিসর্গ সন্ধি আবার ২ প্রকার। যথা –
১. র জাত বিসর্গ সন্ধি
২. স জাত বিসর্গ সন্ধি
১. র জাত বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে
শব্দের শেষে যদি র থাকে কিন্তু উচ্চারণের সময় সেই র লোপ পেয়ে যখন বিসর্গে পরিণত হয়, তখন তাকে র জাত বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন- অন্তর= অন্তঃ, স্বর= স্বঃ ইত্যাদি।
২. স জাত বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে
শব্দের শেষে যদি স থাকে কিন্তু উচ্চারণের সময় সেই স লোপ পেয়ে যখন বিসর্গে পরিণত হয়, তখন তাকে স জাত বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন- তেজস্= তেজঃ, আশীষ্= আশীঃ ইত্যাদি।
আবার এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে উচ্চারণের পরিশ্রম কম হয় কিন্তু ধ্বনি-মাধুর্যতা লঙ্ঘিত হয়, সেই সব ক্ষেত্রে সন্ধি করার কোনো নিয়ম নেই অর্থাৎ সন্ধি করা নিয়ম লঙ্ঘিত হয়, কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে না।
যেমন- কচু + আদা + আলু = কচ্চাদালু হয় না। অথবা, কচু + আলু + আদা = কচ্চাল্বাদা হয় না।
আজকে এই পর্যন্তই।আশা করছি সন্ধি কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ নিয়ে আপনাদের সঠিক ধারনা দিতে পেরেছি। ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ