ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম। ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম

আজকে আমাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে ঈদের নামাজ।

ঈদের নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় এবং এর যাবতীয় নিয়ম কানুন নিয়েই মূলত আজকে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

মুসলিম উম্মাহ্’র জন্য ঈদ হলো প্রধান ও অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষরা প্রতিবছর দুটি ঈদ উদযাপন করে থাকে।

১। ঈদুল ফিতর

২। ঈদুল আযহা।

বছরে এই দুইবার ঈদের নামাজ আদায়ের কারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই এই ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়ম কানুন সুষ্ঠু ভাবে মনে রাখতে পারে না।

তাই ঈদের নামাজের নিয়ম কানুন আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হলো-

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, ‘অতএব তোমার রবের উদ্দেশেই নামাজ পড়ো এবং নহর করো।’ (সুরা আল কাউছার, আয়াত : ২)

আমরা মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য  নামাজ পড়ে থাকি।

তেমনি ঈদের সালাত ও আদায় করা হয় আল্লাহ তা’ আলার সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য আল্লাহকে খুশি করার জন্য।

ঈদের সালাত অন্যান্য স্বাভাবিক সালাতের নিয়ম কানুন থেকে কিছুটা ভিন্ন।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে জামায়াতের সাথে ঈদের সালাত আদায় করতেন।

তাই ছাদহীন খোলা জায়গায় ঈদের সালাত আদায় করা সুন্নাত।

তবে যদি খোলা জায়গায় নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের সালাত আদায় করা যাবে।

ঈদের নামাজ এর শর্তসমূহ:

১। ঈদের নামাজ খোলা জায়গায়, মসজিদ কিংবা বাড়িতে যেখানেই পড়া হোক না কেন, অবশ্যই তা জামায়াতের সঙ্গে পড়তে হবে।

জুমআ নামাজ আদায়ের জন্য যেসব শর্ত প্রযোজ্য হয়, ঈদের নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও ঠিক একই শর্ত প্রযোজ্য।

২। ঈদের নামাজের জন্য কোনো আজান ও ইকামত এর প্রয়োজন নেই।

তবে জুমআর নামাজে যেভাবে উচ্চ আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত এর মাধ্যমে সালাত আদায় করা হয় ঠিক একইভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।

ঈদের নামাজ এর নিয়ত:

নামাজ এর নিয়তঃ ঈদের দুই রাকাআত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কাবাঘরের দিকে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

ঈদের নামাজ এর নিয়ম:

দুই রাকাআত নামাজের প্রথম রাকাআতে-

১। ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধতে হবে।

২। ছানা পড়া(‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা) এই পুরোটা পড়তে হবে।

৩। অতিরক্তি ৩ তাকবির দিতে হবে। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ অর্থ্যাৎ তিন বার সুবহানআল্লাহ বলা যায় এতটুকু সময় বিরত থাকতে হবে।

প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেয়া এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত বেধেঁ নিতে হবে।

৪। আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতেহা পড়া

৫। সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সুরা( সূরা ক্বাফ)  মিলিয়ে পড়া।

তারপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাআত শেষ করা।

দ্বিতীয় রাকাআত এর ক্ষেত্রে-

১। বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতেহা পড়া

২। তার সাথে অন্য সুরা(সুরা ক্বামার)  মিলিয়ে পড়া।

৩। সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দিতে হবে। প্রথম রাকাআতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত কাধ বরাবর উঠিয়ে ছেড়ে দিয়ে তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা।

৪। তারপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে চলে যাওয়া।

৫। এখন অন্যান্য নামাজের মতোই সেজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

ঈদের নামাজের পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদেরকে উদ্দেশ্য করে খুতবা দিবেন।

ঈদের সালাতে খুতবা দেওয়া সুন্নাত এবং তা শুনা ওয়াজিব। খুুতবার মধ্যে নারীদেরকে উদ্দেশ্য করেও কিছু কথা বলা উচিত হবে।

নারীদের যা কিছু করা উচিত তাদেরকে সে নির্দেশনা দিবে এবং যা কিছু থেকে বিরত থাকা উচিত সে সম্পর্কেও তাদেরকে নিষেধ করবে, যেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন। [শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন এর ‘ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম’ পৃষ্ঠা-৩৯৮ এবং ‘ফাতাওয়াল লাজনাহ্‌ আদ-দায়িমা’ (৮/৩০০-৩১৬)]

জাবির বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে তিনি বলেন: “নিশ্চয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে বের হলেন। তিনি খুতবা দেওয়ার আগে নামাজ শুরু করলেন”।[সহিহ বুখারী (৯৫৮) ও সহিহ মুসলিম (৮৮৫)]

তাই খুতবা দেওয়ার আগেই নামাজ সম্পন্ন করে নিতে হবে। নামাজ আদায় শেষে ইমাম সাহেব সকলের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করবেন।

আবু সাঈদ (রাঃ) এর হাদিসে তিনি বলেন- “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হতেন।

তিনি সর্বপ্রথম যা দিয়ে শুরু করতেন তা হল ঈদের নামাজ।

এরপর নামায শেষ করে মানুষের মুখোমুখি এসে দাঁড়াতেন; তখন লোকেরা তাদের কাতারে বসে থাকত।

তিনি তাদের উদ্দেশ্যে ওয়াজ করতেন, তাদেরকে উপদেশ দিতেন, আদেশ-নিষেধ করতেন।

যদি কোন অভিযান প্রেরণ করতে চাইতেন পাঠিয়ে দিতেন। যদি কোন নির্দেশ জারী করতে চাইতেন সেটা জারী করতেন। এরপর প্রস্থান করতেন”।

আশা করছি ঈদের সালাত সম্পর্কে আপনাদের সঠিক ধারনা দিতে সক্ষম হয়েছি। মহান আল্লাহ তা’আলা মুসলিম জাতিকে সঠিক নিয়মে সালাত আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Similar Posts