হজ্জ করার নিয়মাবলী।

আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই মুসলিম হওয়ায় প্রতি বছর খুব বড় সংখ্যক মানুষ পুন্যলাভের আশায় নিজেদের পাপ মোচনে এবং আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার জন্য  হজ্জ করতে যায়। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই জানে না হজ্জের আসল নিয়ম কানুন কি এবং কিভাবে সঠিক উপায়ে হজ্জ পালন করতে হয়। ফলে এতো টাকা পয়সা আর এতো পরিশ্রম করেও তারা বিশুদ্ধ উপায়ে হজ্জ পালন করতে পারে না শুধুমাত্র তাদের সুক্ষ্ম জ্ঞানের অভাবে৷

তাই আজকে এই লিখার মাধ্যমে কিভাবে হজ্জ পালন করতে হয় এবং কখন কি কাজ করতে হয় তার সম্পূর্ণ ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

আজকে আমাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে-

–  হজ্জ কি?

– হজ্জের নিয়মাবলী গুলো কি কি?

হজ্জ কি?

হজ্জ শব্দের অর্থ- নিয়ত করা, সঙ্কল্প করা,গমন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করা অর্থাৎ  নির্দিষ্ট  দিনে নিয়ত সহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করাই হচ্ছে হজ্জ ।

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ্জ হচ্ছে এমন একটি ইবাদত যেখানে প্রত্যেকটা হাজী কে প্রচুর পরিমানে শারিরীক ও মানষিক পরিশ্রম করতে হয়, প্রচুর পরিমানে টাকা ব্যয় করতে হয়, প্রচুর ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয়। এবং তার পর মক্কায় ‍গিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এবং নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নতের সমন্বয়ে সঠিক নিয়মে এই ইবাদাত সর্ম্পূন করাই হচ্ছে হজ্জ ।

একজন মুসলিমের জীবনের সবচেয়ে দামী উপার্জন হচ্ছে হজ্জ।

তাই সেই দামী জিনিসটি অর্জনের জন্য অবশ্যই সেই সম্পর্কে পূর্বেই যথার্থ ধারনা নিতে হবে। হজ্জের ফরজ, সুন্নাত এবং ওয়াজিব সম্পর্কে ধারনা নিতে হবে।

হজ্জ তিন প্রকার।

যথা-

১। ইফরাদ হজ্জ

২। হজ্বে  তামাত্ত ‍

৩। হজ্বে  কিরান

১। ইফরাদ হজ্জ কি?

হজের সফর শুরু করার সময় যদি মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধা হয় এবং হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করা হয় তবে এই প্রকার হজকে বলা হয় ইফরাদ হজ্জ।

যারা এই প্রকার হজ পালন করে শরিয়তের পরিভাষায় তাদেরকে মুফরিদ বলে।

ইহরাম কিভাবে বাঁধা হয়?

প্রথমে যে জিনিসটি সম্পর্কে  অবগত হতে হবে তা হলো আপনার গন্তব্যস্থল। যদি আপনার গন্তব্যস্থল ঢাকা থেকে মদীনা শরীফ তাহলে এখন ইহরাম বাঁধা নয়  যখন মদীনা শরীফ থেকে মক্কা শরীফ যাবেন, তখন ইহরাম বাঁধতে হবে।

তবে বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। এ ক্ষেত্রে আপনি যদি  ঢাকা থেকে বিমানে ওঠেন তবে তার আগেই ইহরাম বাঁধা ভালো। কেননা জেদ্দা পৌঁছার আগেই ‘ইয়ালামলাম’ মিকাত বা ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থানটি পড়বে। প্রত্যেকটি বিমানে যদিও ইহরাম বাঁধার কথা সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়, কিন্তু ওই সময় অনেকে ঘুমিয়ে থাকেন। যেহেতু ইহরাম বাঁধার আগে এর কাপড় পরিধান করতে হয় তাই বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাটাও খুবই দৃষ্টিকটু। কিন্তু শুধুমাত্র ইহরামের কাপড় পরিধান করলেই ইহরাম বাঁধা হয়ে যাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না নিয়ত করে ‘তালবিয়া’ তথা “লাব্বাইক আল্লাহ হুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক ইন্নালহামদা ওয়াননিয়ামাতা লাকাওয়াল মুলক লাশারিকা লাক” পড়া না হয়।

তাই ইহরামের কাপড় পরিধানের পর সতর্কতামূলক বিমান ছাড়ার পর নিয়ত করে তালবিয়া আরম্ভ করা উত্তম কাজ।

কিন্তু কেউ যদি বিনা ইহরামে মিকাত পার হয় তবে এর জন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে।

তদুপরি গোনাহ হবে। হজ্জ বা উমরাহ পালনকারী ব্যক্তির জন্য বিনা ইহরামে যে নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করা নিষিদ্ধ, তা-ই হলো মিকাত।

বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরের সম্মানার্থে প্রত্যেককে নিজ নিজ মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে।

মিকাত মূলত পাঁচটি:

১. যুল হুলায়ফা বা বীরে আলী: মদীনাবাসী এবং মদীনা হয়ে মক্কায় প্রবেশকারীদের মিকাত।

২.ইয়ালামলাম: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ থেকে  জেদ্দা হয়ে মক্কা প্রবেশকারীদের মিকাত।

৩.আল-জুহফা : সিরিয়া, মিসর এবং সেদিক থেকে আগতদের মিকাত।

৪. কারনুল মানাজিল বা আসসায়েল আল-কাবির : নাজদ থেকে আগতদের জন্য মিকাত এবং

৫. যাতুল ইর্ক : ইরাক থেকে আগতদের জন্য মিকাত।

২। কিরান হজ্জ কি?

যদি একই সঙ্গে হাজ্জ এবং ওমরাহ করার নিয়ত করা হয় এবং উভয়টিই পালন করে তদুপরি হজ্জ ও ওমরাহর জন্য একই ইহরাম বাঁধে, তাহলে এ ধরনের হজ্জকে শরিয়তের পরিভাষায় হাজ্জ্বে কিরান বা কিরান হজ্জ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে কারিন বলা হয়।

৩। তামাত্তু হজ্জ কি?

হজ্জের সহিত ওমরাহকে এইভাবে মিলানো যে ‘মিকাত’ থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা।

এই ইহরামে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম ভেঙে ৭ জিলহজ্ব সেখান থেকেই হজ্জের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে শরিয়তের পরিভাষায় হজে তামাত্তু বলে।

এ প্রকারের হজ পালনকারীকে বলা হয় মুতামাত্তি।

এখন আমরা জানবো হজের ফরয, সুন্নাত এবং এর ওয়াজিব সম্পর্কে –

হজ্জ এর ফর‍য কয়টি ও কি কি?

হজের ফরজ মূলত ৩ টি । যথা-

১ ।  ইহরাম বাঁধা

২। উকূফে আরাফায় অবস্থান করা (অর্থাৎ ৯ জিলহজ্ব তারিখে জোহরের পর থেকে মাগরিবের র্পূব পযর্ন্ত সময় কিছুক্ষনের জন্য হলেও আরাফার ময়দানে অবস্থান করা)

৩। ফরজ তাওয়াফ বা তাওয়াফে জিয়ারত করা ( অর্থাৎ ১০ থেকে ১২ জিলহজ্ব তারিখে সূর্যাস্তের পূর্বে যে কোন সময়ে হজের তাওয়াফ করা)

হজ্জ এর সুন্নাত কয়টি ও কি কি?

হজ্জের সুন্নত মূলত ৬ টি।  যথা-

১ । ইহরাম বাঁধার পূর্বেই পবিত্র, পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন হওয়া ।

২ । জিলহজ্বের ৮ তারিখে মিনায় অবস্থান করা ।

৩ । বেশী বেশী করে তালাবিয়া পাঠ করা ।

৪ । ৯ জিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফায় রওনা হওয়া এবং এই দিন জোহরের নামাজের পূর্বে গোসল করা।

৫ । ১০ জিলহজ্ব সূর্যোদয়ের সামান্য পূর্বে মুজদালিফা হতে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া

৬  । ১০ ,১১, ১২ জিলহজ রাতে মিনায় অবস্থান করা।

হজ্জ এর ওয়াজিব কয়টি ও কি কি ?

হজের ওয়াজিব মূলত ৬ টি। যথা-

১। ৯ জিলহজ্ব রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করা ।

২। সাফা-মারওয়ায় সায়ী করা ।

৩। বিশেষ দিন গুলোতে জামারায় কংকর নিক্ষেপ করা।

৪ । কিরান বা তামাত্তু হজকারীদের কোরবানী করা ।

৫ । মাথার চুল মুন্ডন করা বা ছাঁটা ।

৬ । মীকাতের বাহির থেকে আগমনকারীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা ।

তামাত্তু হজ্জের নিয়ম কি?

১. উমরাহর ইহরাম

তামাত্তু হজ্জে ইহরাম বাঁধা একটি ফর‍য কাজ। ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গোসল বা অজু করে নিতে হবে।

মিকাত অতিক্রম করার আগেই সেলাইবিহীন একটি সাদা কাপড় পরিধান করে নিতে হবে, আরেকটি সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ইহরামের নিয়ত করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিতে হবে।

শুধুমাত্র উমরাহর নিয়ত করে এক বা তিনবার তালবিয়া পড়ে নিতে হবে।

তালবিয়া হলো-“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।”

২. উমরার তাওয়াফ

উমরার তাওয়াফ একটি ফরজ কাজ।

অজুর সহিত ‘ইজতিবা’ সহ তাওয়াফ করতে হবে।

ইহরামের যে কাপড় বা চাদর থাকে সেটি ডান বগলের নিচের দিক থেকে পেঁচিয়ে এনে বাম কাঁধের ওপর রাখাকে বলা হয় ইজতিবা।

হাজরে আসওয়াদকে সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে (যার মেঝেতে সাদা মার্বেল পাথর আর ডান পাশে সবুজ বাতি) দাঁড়িয়ে তাওয়াফের নিয়ত করে নিতে হবে।

তারপর ডান দিকে গিয়ে এমনভাবে দাঁড়াতে হবে যেন হাজরে আসওয়াদ পুরোপুরি সামনে থাকে।

এরপর দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়া লিল্লাহিল হামদ, ওয়াস সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহ” পড়তে হবে।

পরে হাত ছেড়ে দিতে হবে এবং হাজরে আসওয়াদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে ডান দিকে চলতে হবে, যাতে পবিত্র কা’বাঘর পূর্ণ বাঁয়ে থাকে।

পুরুষের জন্য প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নাত। (রমল যার অর্থ-  বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদম রেখে দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলা।)

রুকনে ইয়ামানি কে যদি সম্ভব হয় শুধুমাত্র হাতে স্পর্শ করতে হবে।

রুকনে ইয়ামানি তে এলে “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা আযাবান্নার, ওয়াআদখিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার, ইয়া আযিযু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন” পড়তে হবে।

চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অতঃপর হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে চক্কর সসম্পূর্ণ করতে হবে।

পুনরায় হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করতে হবে।

এইভাবে সাত চক্করের মাধ্যমে  তাওয়াফ শেষ করতে হবে।

হাতে সাত দানার তসবি অথবা গণনাযন্ত্র রাখা উত্তম, তাহলে সাত চক্কর গণনায় কোনো ভুল হবে না।

৩. তাওয়াফের দুই রাকা’আত নামায

তাওয়াফে দুই রাকাআত নামাজ পড়া ওয়াজিব। মাকামে ইবরাহিমের পেছনের দিকে বা হারামের যেকোনো স্থানে তাওয়াফের নিয়তে (মাকরুহ সময় ব্যাতীত) দুই রাকাআত নামায পড়ে দুআ করা উত্তম কেননা এটি দুআ কবুলের সময়।

৪. উমরাহর সাঈ

সাঈ করা একটি ওয়াজিব কাজ।

সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে ( যা এখন আর পাহাড় নেই।

এর মেঝেতে মার্বেল পাথর এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) কা’বা শরিফের দিকে মুখ করে সাঈ-এর নিয়ত করে, মোনাজাতের মতো করে হাত তুলে তিনবার তাকবির বলে দু’আ করতে হবে।

তারপর মারওয়ার দিকে রওনা হয়ে দুই সবুজ দাগের মাঝে (এটি সেই জায়গা, যেখানে হজরত হাজেরা (রা.) পানির জন্য দৌড়েছিলেন) একটু দ্রুত পথ চলে মারওয়ায় পৌঁছালে এক চক্কর পূর্ণ হবে।

মারওয়া পাহাড়ে উঠে কাবা শরিফের দিকে মুখ করে মোনাজাতের ভংগিতে হাত তুলে তাকবির পরে এবং আগের মতো করে চলে সেখান থেকে আবার সাফায় পৌঁছালে দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হবে এভাবে সাতটি চক্করে মারওয়ায় গিয়ে সাঈ শেষ করে দোয়া করতে হবে।

৫. হলক করা

হলক করা একটি ওয়াজিব কাজ।

পুরুষ হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করে সম্পূর্ণ মাথা মু-ন করতে হবে, তবে মাথার চুল ছেঁটেও ছোটো করা যাবে। মহিলা হলে  মাথার চুল এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটতে হবে। এ পর্যন্ত উমরাহর কাজ সম্পন্ন হবে।

হাজ্বের ইহরাম না বাঁধা পর্যন্ত ইহরামের আগের মতো সব কাজ করা যাবে।

৬. হজ্বের ইহরাম

হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা একটি ফরজ কাজ।

হারাম শরিফ বা বাসা থেকে পূর্বের নিয়মে শুধু হজ্বের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ্ব জোহরের আগেই মিনায় পৌঁছে যেতে হবে।

৭. মিনায় অবস্থান

নির্দিষ্ট সময় মিনায় অবস্থান করা একটি সুন্নত কাজ।

৮ জিলহজ্ব তারিখে জোহর হতে ৯ জিলহজ্ব তারিখ ফজর সহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামায মিনায় আদায় করতে হবে এবং এ সময়ে মিনায় অবস্থান করতে হবে।

৮. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান

আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজ্জ্ব এর একটি ফরজ কাজ এবং এটি হজ্বের অন্যতম ফরজ।

৯ জিলহজ্ব তারিখে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হবে।

এইদিন নিজ তাঁবুতে জোহর এবং আসরের নামাজ স্ব স্ব সময়ে আলাদাভাবে আদায় করতে হবে।

মুকিম হলে চার রাকআত পূর্ণ পড়তে হবে।

মসজিদে নামিরায় উভয় নামাজ জামা’আতে পড়লে একসঙ্গে আদায় করা যেতে পারে।

যদি ইমাম মুসাফির হয় আর মসজিদে নামিরা যদি আপনার নিকটবর্তী থাকে, তাহলে নিজ স্থানে অবস্থান করতে হবে। মাগরিবের নামাজ না আদায় করেই মুজদালিফার দিকে রওনা হতে হবে।

৯. মুজদালিফায় অবস্থান:

মুজদালিফায় অবস্থান করা একটি ওয়াজিব এবং সেখানে রাত্রি যাপন করা সুন্নাত।

আরাফায় সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময়ে মাগরিব ও এশা এক আজান ও এক ইকামতে একসঙ্গে আদায় করতে হবে। এখানেই রাত্রি যাপন করতে হবে।

১০ই জিলহজ্ব ফজরের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় মুজদালিফায় অবশ্যই অবস্থান করতে হবে কেননা  এটি ওয়াজিব। তবে যারা দুর্বল, অপারগ ও নারীদের বেলায় এটা অপরিহার্য না।

রাতের বেলা ছোট ছোট ছোলার দানার মতো ৭০টি কঙ্কর সংগ্রহ করে রাখতে হবে। মুজদালিফায় কঙ্কর খুব সহজেই পাওয়া যায়।

১০. কঙ্কর নিক্ষেপ:

প্রথম দিন কঙ্কর নিক্ষেপ করা। ১০ ই জিলহজ্ব ফজর থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু বড় জামারাকে (বড় শয়তান) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে যা মূলত ওয়াজিব। এ সময়ে সম্ভব না হলে এ রাতের শেষ পর্যন্ত কঙ্কর মারা যাবে।

যারা দুর্বল তারা ও নারীদের জন্য রাতেই কঙ্কর মারা উত্তম ও নিরাপদ। (কঙ্কর নিক্ষেপের স্থানে বাংলা ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।)

১১. কুরবানি করা:

হজ্জে গিয়ে কুরবানি করা ওয়াজিব।

১০ ই জিলহজ্ব কঙ্কর নিক্ষেপের পরই কেবল কুরবানি নিশ্চিত পন্থায় আদায় করতে হবে।

কুরবানির পরে কেবল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদর্শের অনুসরণ করে মাথা হলক করা ওয়াজিব। তবে চাইলে চুল ছোটও করা যেতে পারে।

খেয়াল রাখতে হবে: কঙ্কর মারা, কুরবানি করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি ও ওয়াজিব।

এগুলো ধারাবাহিকতা রক্ষা না করলে দম বা কাফফারা দিয়ে হজ্জ শুদ্ধ করতে হবে।

তবে বর্তমানে এই সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় হজ্জে ইফরাদ করা। যেখানে কুরবানি নেই।

হজ্বের পরে কেউ ওমরা পালন করতে চাইলে ১৩ জিলহজ্জ তারিখ দিবাগত রাত থেকে উমরাহ পালন করা যাবে।

১৩. কঙ্কর নিক্ষেপ

কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।

১১ ও ১২ জিলহজ্ব তারিখে কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ১১-১২ জিলহজ্ব দুপুর থেকেই এই সময় আরম্ভ হয়ে যায়।

ভিড় এড়ানোর জন্য আসরের পর থেকে অথবা সুবিধাজনক সময়ে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে- প্রথমে ছোট, মধ্যম ও তারপর বড় শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে।

ছোট জামারা থেকে শুরু করে বড় জামারায় শেষ করতে হবে।

সম্ভব না হলে শেষরাত পর্যন্ত কঙ্কর মারা যাবে। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতেই নিরাপদ।

১৪. মিনা ত্যাগ:

১৩ জিলহজ্ব তারিখে মিনায় অবস্থান করতে না চাইলে ১২ জিলহজ্ব সন্ধ্যার আগে অথবা সন্ধ্যার পর ভোর হওয়ার আগেই মিনা ত্যাগ করতে হবে।

সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতেই হবে এটা সঠিক নয়। তবে সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করাই উত্তম।

১৫. বিদায়ী তাওয়াফ

বিদায়ী তাওয়াফ হলো ওয়াজিব কাজ।

বাংলাদেশ থেকে আগত হজ্জ যাত্রীদের হজ্জ শেষ করে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হয়।

তবে হজ শেষ করার পর যেকোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়।

নারীদের মাসিকের কারণে বিদায়ী তাওয়াফ করতে না পারলে এতে কোনো ক্ষতি নেই।

আর এর জন্য দম বা কাফফারা দেওয়ারও প্রয়োজন হয় না।

আশা করছি আজকের আলোচনায় আপনাদের হজ্জ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারনা দিতে পেরেছি। লিখাটি ভালো লাগলে নিজের আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ