পদার্থ বিজ্ঞান

বল কাকে বলে? বল কত প্রকার ও কি কি?

1 min read

আজকে আমরা জানবো পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টপিক বল সম্পর্কে । বল কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ নযাবতীয় বিষয়েই আজকের লিখায় ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে চলুন শুরু করা যাক।

বল কাকে বলে?

যা কোনো একটি স্থির বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তাকে গতিশীল করে বা করার চেষ্টা করে অথবা যা গতিশীল বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তার গতির পরিবর্তন করে বা করার চেষ্টা চালায় তাকে বল বলে। যেমন-

১। ধরা যাক, আপনি টেবিলকে ঠেলতে শুরু করলেন এবং টেবিলটির অবস্থানের পরিবর্তন হলো। এটি সম্পন্ন হয়েছে বলের প্রয়োগ এর মাধ্যমে।

২। আবার ধরা যায়, আপনি একটি ফুটবলকে হাত দিয়ে আটকালেন তাহলেও ওটিও বলের প্রয়োগের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে।

অর্থ্যাৎ এখানে স্থির বস্তুকে গতিশীল এবং গতিশীল বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন এর মাধ্যমে বলের প্রয়োগ হয়েছে বলে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।

বলের বৈশিষ্ট্য কি?

১। বল একটি ভেক্টর রাশি। তাই এর মাত্রা ও দিকনির্দেশ দিয়ে বলকে নির্দিষ্ট করা হয়।

২। এটি মূলত কমপক্ষে দুটি বস্তুর একটি মিথস্ক্রিয়া কারণে হয়ে থাকে।

৩। এর সাহায্যে  একটি বস্তুর আকৃতি পরিবর্তন করা যেতে পারে।

৪। এটি কোনো বস্তুর গতির অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে।

৫। যদি কোনো বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল দুটি বলের মাত্রা সমান কিন্তু অভিমুখে বিপরীত দিকে হয়, তাহলে দেহের উপর ক্রিয়াশীল নিট বলের মান শূন্য হবে।

৬। যখন কোন একটি বস্তুর উপর বিপরীত দিকে বলের প্রয়োগ করা হয় তখন তাদের ফলাফল বা নেট বলের মান হল এই বিরোধী বলগুলির মধ্যে পার্থক্য এবং এর ফলের দিকটি হিয় বৃহত্তর বলের মতই।

৭। যদি বলের মাত্রা ও দিক বা উভয়ই পরিবর্তিত হয়, তবে বলের প্রভাবও পরিবর্তিত হয়ে যাবে।

বলের একক কি?

১। CGS এককে (সেন্টিমিটার গ্রাম সেকেন্ড পদ্ধতিতে)  বলের একক ডাইন (Dyne) বা gcm/s2।

২।  এস. আই এককে (স্ট্যান্ডার্ড ইন্টারন্যাশনাল পদ্ধতিতে) বলের একক নিউটন (N) বা Kgm/s 2 এ উচ্চারিত হয়।

৩। F.P.S পদ্ধতিতে বলের একক Poundal (পাউন্ডাল)।

বল এর মাত্রা কি?

বলের মাত্রা হলো= [MLT-2]

বলের রাশি কি?

বল হলো একটি ভেক্টর রাশি যার মান ও দিক উভয়ই আছে।

বল এর সূত্র কি?

বলকে সাধারণত F দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

m ভরের কোনো একটি বস্তুর উপর F বল প্রয়োগ করা হলে ত্বরণ a সৃষ্টি হয়।

এখানে, F = ma  অর্থাৎ ত্বরণ এবং ভরের গুণফল দ্বারা বল পরিমাপ করা হয়।

বল এর প্রকারভেদ

প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের বলের অস্তিত্ব রয়েছে।যেমন-

১। মৌলিক বল।

২। যৌগিক বল।

১। মৌলিক বল কাকে বলে:

যে সকল বল অন্য বলের থেকে উৎপন্ন হয় না কিন্তু অন্যান্য বল এই সকল বলের থেকে সৃষ্টি হয়, তাদেরকে মৌলিক বল বলে।

মৌলিকবল ৪ প্রকার। যথা-

১। মহাকর্ষ

২। তড়িৎ – চুম্বকীয়

৩। সবল নিউক্লীয়

৪। দুর্বল নিউক্লীয়

২। যৌগিক বল কাকে বলে:

যে সকল বল মৌলিক বল থেকে উৎপন্ন বা সৃষ্ট  সে সকল বলকে যৌগিক বল বলে।

যেমনঃ ঘর্ষণ ,টান,স্থিতিস্থাপক ইত্যাদি।

নিম্নে মৌলিক বলের প্রকার সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

মহাকর্ষ বল কাকে বলে:

এই মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যকার এক ধরনের আকর্ষণবল ক্রিয়াশীল রয়েছে, এই আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বল বলে ।

এই মহাকর্ষ বলের পরিমাণ ক্রিয়াশীল বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক হয়ে থাকে।

সকল বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে বস্তুদ্বয়ের মধ্যে গ্রাভিটন নামক এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে  এই মহাকর্ষ বল ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে ।

মহাকর্ষবল মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল নয়।

তড়িৎ-চুম্বকীয় বল কাকে বলে:

দুটি আধানযুক্ত বা চার্জিত বস্তুর মধ্যে এবং দুটি চুম্বক পদার্থের মধ্যে এক ধরনের বল ক্রিয়াশীল বা কার্যকর থাকে, এদেরকে তড়িৎ-চৌম্বক বল বলা হয় ।

চৌম্বক বল এবং তড়িৎ বল  আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ উভয় ধরনেরই হতে পারে ।  ধারণা করা হয়ে থাকে যে , মূলত চার্জহীন এবং ভরহীন ফোটন নামক এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমেই এই তড়িৎ চৌম্বক বল কার্যকর হয়ে থাকে।

সবল নিউক্লীয় বল কাকে বলে:

একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন দুটি সমন্বিত ভাবে অবস্থান করে। এদেরকে সমষ্টিগতভাবে বলা হয় নিউক্লিয়ন ( Nucleon ) বা ভর।

নিউক্লিয়াসের মধ্যে সমধর্মী বা একই ধর্মের ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটনগুলো খুব কাছাকাছি থাকায় এদের মধ্যে কুলঘের বিকর্ষণ বল প্রবল হওয়া উচিত এবং এর ফলে নিউক্লিয়াস ভেঙ্গে যাওয়ার কথা । কিন্তু বাস্তবে অনেক নিউক্লিয়াসই স্থায়ীভাবে অবস্থান করে ।

নিউক্লিয়নের মধ্যে যে মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে তা এত নগণ্য যে এই বল কুলঘের বিকর্ষণ বলকে প্রশমিত (balance) করতে পারে না । সুতরাং নিউক্লিয়াসের মধ্যে  অবশ্যই অন্য এক ধরনের সবল বল কাজ করে যা নিউক্লিয়াসকে ধরে রাখতে পারে । এই বলকে বলা হয় সবল নিউক্লীয় বল ।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে নিউক্লিয়নের মধ্যে মেসন ( Meson ) নামে এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে  এই বল ক্রিয়াশীল হয় । এই বল-

– আকর্ষণধর্মী

– স্বল্প পাল্লা বিশিষ্ট (short range)

-চার্জ নিরপেক্ষ এবং

– নিউক্লিয়াসের বাইরে ক্রিয়াশীল নয়।

দুর্বল নিউক্লিয় বল কাকে বলে:

প্রকৃতিতে এমন কিছু মৌলিক পদার্থ রয়েছে যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে যায় ( যেমন ইউরেনিয়াম , থােরিয়াম ইত্যাদি )। এই সমস্ত নিউক্লিয়াসকে বলা হয়ে থাকে তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস। এই তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে তিন ধরনের রশ্মি বা কণা নির্গত হয় যাদেরকে বলা হয়-

১. আলফা রশ্মি,

২. বিটা রশ্মি এবং

৩. গামা রশ্মি ।

তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে যখন বিটা কণা নির্গত হয় তখন একই সাথে শক্তিও নির্গত হয় । তবে পরিক্ষা করে দেখা যায় যে, নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত শক্তির পরিমাণ বিটা কণার গতিশক্তির চেয়ে পরিমানে অনেক বেশি।

1930 সালে বিজ্ঞানী ডব্লিউ. পাউলি (W. Pauli ) প্রস্তাব করেন যে- অবশিষ্ট শক্তি অন্য এক ধরনের কণা বহন করে যা বিটা-কণার সঙ্গেই নির্গত হয়ে যায় । এই কণাকে বলা হয় নিউট্রিনো (neutrino)।

এই নিউট্রিনো কণা এবং বিটা-কণার নির্গমন চতুর্থ একটি মৌলিক বলের কারণে ঘটে থাকে, যাকে বলা হয় দুর্বল নিউক্লীয় বল । এই  বল সকল নিউক্লীয় বা তড়িৎ চুম্বকীয় বলের তুলনায় অনেকটাই দুর্বল। এই দুর্বল নিউক্লীয় বলের কারণে অনেক নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গন প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সংঘটিত হয় । ধারণা করা হয় যে, বোসন নামক এক প্রকার কণার পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে এই দুর্বল নিউক্লীয় বল কার্যকর হয়ে থাকে।

নিম্নে কিছু বলের ধারনা দেওয়া হলো-

ঘূর্ণন বল কাকে বলে?

স্ক্রুকে খোলার জন্য একটি মোচড়বল প্রয়োগ করা হলে একধরনের ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। এরূপ বলকে ঘূর্ণন বল বলে।

স্পর্শ বল কাকে বলে ?

যে বলের সৃষ্টির জন্য দুটি বস্তুর প্রত্যক্ষরূপে সংস্পর্শের প্রয়োজন হয় তাকে স্পর্শ বল বলে।

অভিকর্ষ বল কাকে বলে?

পৃথিবী যখন কোনো একটি বস্তুর উপর মহাকর্ষ বল প্রয়োগ করে তখন তাকে অভিকর্ষ বল বলে।

মহাকর্ষ বল কাকে বলে?

মহাবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক যে আকর্ষণ বল তাকে মহাকর্ষ বল বলে।

সাম্য বল কাকে বলে?

বলের প্রয়োগ ফলে যদি কোনো বস্তুর ত্বরণ শূন্য হয়ে যায় তখন তাকে সাম্য বল বলে ।

ঘাত বল কাকে বলে?

অতি উচ্চমানের যে বল খুব অল্প সময়ের জন্য ক্রিয়া করে তাকে ঘাত বল বলে। যেমন-  ক্রিকেট বলের ওপর ব্যাট দ্বারা আঘাত করা।

বলের মান এবং ক্রিয়াকালের গুণফল দ্বারা বলের ঘাত বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x