ছাত্রীকে শিক্ষকের কুপ্রস্তাব ও যৌন হয়রানির অডিও ফাঁস, এলাকা জুড়ে তোলপাড়

ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায়। উপজেলার পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক মাসুদ রানা। সম্প্রতি তার একটি অশ্লীল আপত্তিকর অডিও ফাঁস হয়েছে৷ গতকাল ৮ জুন বিকেলে দিকে ফেসবুকে অডিওটি ছড়িয়ে পড়লে  কুতুবপুরজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় ৷

ছয় মিনিটেরও বেশি দৈর্ঘ্যের ফাঁস হওয়া অডিওতে মাসুদ রানাকে  বিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীকে   কুপ্রস্তাব দিতে শোনা যায়৷

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ছাত্র-ছাত্রীদের তোপের মুখে ওই শিক্ষক মাসুদ রানাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে৷ কিন্তু মাসুদ রানার দৃষ্টান্তমূলক  শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ- প্রতিবাদ অব্যাহত চালিয়ে যাচ্ছে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ।

আরো জানা যায়, গণিতের শিক্ষক মাসুদ রানার বিরুদ্ধে এর আগেও যৌন হয়রানির অনেক অভিযোগ এনেছেন শিক্ষার্থীরা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী  জানায় যে , ক্লাসে, কোচিংয়ে ও মুঠোফোনে অনেককেই কুরুচিপুর্ণ প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি৷

কিন্তু এ ব্যাপারে স্কুলের এডহক কমিটির সদস্য রেজাউল করিমকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি৷ বরং রেজাউল করিমের সাথে সুসম্পর্কের দোহাই দিয়ে মাসুদ রানা দীর্ঘ বছর তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গতকালের ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ তারই উদাহরণ৷

হয়রানির স্বীকার ওই ছাত্রী জানান, মাসুদ রানা প্রায়ই তাকে ক্লাসে ও মোবাইল ফোনে উত্ত্যক্ত করতেন৷ তাকে কল দিয়ে আপত্তিজনকভাবে ভিডিও কলে আসতে বলতেন। শেষমেশ তিনি মাসুদ রানার কথাগুলো রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেন৷

ক্লিপটি প্রকাশ্যে আসার পরে তা ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লাগে রেজাউল করিমসহ অন্যান্যেরা৷ কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ছাত্রছাত্রীরা একজোট হয়ে মাসুদ রানার যথাযথ শাস্তিসহ স্কুলের শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনা, অনিয়ম- দুর্নীতি বন্ধের দাবি তুললে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়৷ ফলে তড়িঘড়ি করে মাসুদকে সাময়িক বহিস্কার করে ছাত্রছাত্রীদের ঘরে ফিরে যেতে বলা হয়।

তবে ‘গুরু পাপে লঘু শাস্তি’র এমন উদাহরণে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা৷ রাব্বি নামের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, পাগলা স্কুলকে কিছু লোক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে৷ ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, একচ্ছত্র দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতায় এই স্কুল এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

রেজাউল করিম ও কয়েকজন শিক্ষক সিন্ডিকেট করে স্কুলকে লুটেপুটে খাচ্ছেন৷ জমি ব্যবসায়ী রেজাউল করিম স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্কুলটিতে কর্তৃত্ব ধরে রেখেছেন।

কিছুদিন পরপরই তারা একেক অপকর্ম করে ধরা খায়, আমরা আন্দোলনে নামলেই আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়ি যেতে বলে। এভাবে একটি স্কুল চলতে পারে না।

একই অভিমত অভিভাবকদেরও। তারা বলছেন, এই স্কুলে ছেলেমেয়ে পড়ে, সেই পরিচয় দিতেও আমাদের এখন লজ্জা লাগে৷ ইচ্ছেমতো বেতন বৃদ্ধি, নানান অজুহাতে টাকা নেওয়া হলেও শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে৷ সেইসাথে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির যে ঘটনাগুলো উঠে আসছে তাতে আমরা আতঙ্কিত।

ওই শিক্ষকের বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বলেন, ছাত্রীর সাথে অডিও ফাঁসের ঘটনায় স্কুলশিক্ষক মাসুদ রানাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আমরা স্কুলে জরুরি মিটিংয়ে বসেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে অডিও ফাঁসের ঘটনায় তদন্ত করা হবে এবং মাসুদ রানা দোষী প্রমাণিত হলে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।

অডিও ক্লিপের সত্যতা স্বীকার করে মুঠোফোনে শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি ভুল করে ফেলেছি, খুব চাপে আছি৷’

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *