Islamic

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা – ব্যাখ্যা।

1 min read

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা – ব্যাখ্যা।

ইসলাম হলো আল্লাহ তায়ালার প্রবর্তিত ধর্ম বা জীবন বিধান। কারণ মানবজীবনের সকল বিষয় ও সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধানের দিকনির্দেশনা এতে দেওয়া হয়েছে। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কাজকর্মের যথাযথ দিক নির্দেশনা ইসলামে বিদ্যমান। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সকল বিষয়ই ইসলামে যথাযথভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বা পরকালের অবস্থার বর্ণনাও ইসলামে রয়েছে। এজন্য ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা বলা হয়।

ইসলামঃ একমাত্র ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।

আল-হামদুলিল্লাহ। ওয়াস-স’লাতু ওয়াস-সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ।

আয়ুযুবিল্লাহি মিনাস-সায়ত্বনির রাযিম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। “ইন্নাদ্বীনা ইন্দাল্লাহিল ইসলাম”-সূরা আল্-ইমরান, আয়াত-১৯। অর্থঃ “নিসন্দেহে (মানুষের) জীবন-বিধান হিসাবে আল্লাহ তায়ালার কাছে একমাত্র (গ্রহণযোগ্য) ব্যবস্থা ইসলাম।”
রাব্বিশ রাহলে সাদ্রি ওয়া ইয়াস্ সিরলি আমরি ওয়াহলুল উক্-দাতাম্মিল্লিছানি ইয়াফক্কাহু ক্কাওলী।

প্রিয় পাঠক, আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন “যা’লিকাল কিতাবু লা’রাইবা ফিহি হুদাল্লিল মুতাক্কিন” সুরা বাকারা, আয়াত-০২। অর্থঃ ইহা সেই কিতাব যাহাতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই, আর এটি খোদাভীরুদের জন্য পথনির্দেশিকা।

মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী মহাগ্রন্থ আল-কুরআন ও রাসুল(সাঃ) এর হাদিসের(কথা, কাজ ও সমর্থন) মাধ্যমে ইসলামের বিধি-বিধানগুলো মসুলমানদের উপর কার্যকর হয়েছে। সকল মসুলমানকে অবশ্যই আল-কুরআন ও হাদিসের বিধি-নিষেধগুলোকে নিজে মান্য করা ও সামাজিক জীবনে তাহার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা-সাধনা করা বাধ্যতামূলক। “যদি কেউ ইসলাম ব্যাতিত অন্য কোন জীবন-বিধান অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে সে ব্যবস্থা কখনও গ্রহন করা হবে না, পরকালে সে চরম ব্যার্থ হবে।” – সূরা আল-ইমরানঃ ৮৫

ইসলাম পরিচিতি
ইসলাম আরবী শব্দ। এটি এসেছে “সিলম”বা “সালাম” ধাতু থেকে। “সিলম” বা “সালাম” এর অর্থ শান্তি, চুক্তি বা সন্ধি। ইসলামের আবিধানিক অর্থ অনুগত হওয়া, আনুগত্য করা, আত্বসমর্পন করা, শান্তির পথে চলা ও মসুলমান হওয়া। অনুগত হওয়া মানে কাহারো প্রিয়ভজন হতে চেষ্টা বা সাধনা করা, আনুগত্য করা মানে কাহারো নেতৃত্ব ও কতৃত্বকে গ্রহনের মাধ্যমে তার আদেশ ও নিশেধসমুহ মান্য করা, আত্বসমর্পন অর্থ হচ্ছে কাহারো স্রেষ্টত্ব স্বীকার করা। এক কথায়, ইসলাম হচ্ছে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সমর্পনের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা।

মানুষ তার সারা জীবনে যা কিছু করে যেমন- ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় বা আধ্যাত্বিক এবং সামগ্রিক কর্মতৎপরতা ইসলামের আদেশ-নিষেধের আওতাভূক্ত্। ইসলাম শুধুমাত্রই একটি ধর্মের বা মতের নাম নয়, বরং ধর্ম হচ্ছে ইসলামের একটি শাখা। ইসলাম মানব জীবনের সর্বময় স্তরের যাবতীয় কর্মতৎপরতা পরিচালনার পথ-প্রদর্শন করে।

“হে মুহাম্মাদ (সাঃ) বল, আমার রব নিঃসন্দেহে আমাকে সঠিক নির্ভূল পথ দেখাইয়া দিয়াছেন।সম্পূর্ণ ও সর্বতভাবে নির্ভূল দ্বীন, তাহাতে বক্রতার কোন স্থান নাই। ইহা ইব্রাহীমের অবলম্বিত পথ ও পন্থা, যাহা সে ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও একমূখীতার সহিৎ গ্রহণ করেছিল এবং সে মুসলিমদের মধ্যে ছিল। বল, আমার নামায, আমার সর্বপ্রকার ইবাদত অনুষ্ঠান সমুহ, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু সবকিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহর’ই জন্য।” সূরা আল-আনআম ১৬১-১৬২।

আবু হুরাইরা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল(সাঃ) জনসমক্ষে বসে ছিলেন, এমন সময় তার কাছে এক ব্যাক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কি? তিনি বললেন, ঈমান হলোঃ আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেস্তাগনের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তার সাথে সাক্ষাতের প্রতি এবং তার রাসুলগনের প্রতি। আপনি বিশ্বাস রাখবেন পূনরুথ্থানের প্রতি। তিনি (লোকটি) জিজ্ঞাসা করলেন ইসলাম কি? তিনি(রাসুল সাঃ) বললেনঃ ইসলাম হলো আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তার সাথে শরীক করবেন না। নামাজ কায়েম(প্রতিষ্ঠিত) করবেন, ফরজ যাকাত আদায় করবেন এবং রমজান-এর সাওম পালন করবেন। ঐ ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ইহসান কি? তিনি(রাসুল সাঃ) বললেন, আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবেন যেন আপনি তাকে(আল্লাহকে) দেখছেন, আর যদি আপনি তাকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে) তিনি(আল্লাহ) আপনাকে দেখছেন। ঐ ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, কিয়ামত কবে? তিনি(রাসুল সাঃ) বরলেনঃ এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামত সমূহ বলে দিচ্ছিঃ বাঁদী যখন তার প্রভূকে প্রসব করবে এবং ঊটের নগন্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মানে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এরপর তিনি(রাসুল সাঃ) সূরা লুকমানের ৩১ থেকে ৩৪ নং পর্যন্ত আয়াত পাঠ করলেন। এরপর ঐ ব্যাক্তি চলে গেলে তিনি(রাসুল সাঃ) বললেন, তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন। তারা(সাহাবারা) কিছুই দেখতে পেলেন না। তথন তিনি(রাসুল সাঃ) বললেন, ইনি জিব্রাঈল(আঃ)। লোকদেরকে তাদের দ্বীন শেখাতে এসেছিলেন। সহীহ আল বুখারী, প্রথম খন্ড, হাদিস নং ৪৮।

সুতরাং সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলাম হচ্ছে “আল্লাহ প্রদত্ব জীবন-বিধান(আল-কুরআনের বিধি-নিষেধ সমুহ) রাসুর (সাঃ) এর পন্থায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে আল্লাহর সন্তোশ অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা”।

ইসলামী অনুশাষনই প্রকৃত শান্তির পথ। যে ব্যক্তি ইসলাম অনুসরণ করে সে মুসলমান। মুসলমান হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনকারী। আর ইসলাম হচেছ নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর কাছে সমর্পনের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা। একমাত্র ইসলামের অনুসরণই প্রকৃত কল্যাণ দিতে পারে। প্রত্যেক শান্তিকামী মানুষের উচিৎ আল কোরআন এবং রাসুল (সাঃ) এর সহীহ হাদিস নিজে অনুসরণের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা এবং রাষ্ট্র তথা সমাজে এই শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x