জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে জলবায়ু বলতে কী বুঝায় তা জানা প্রয়োজন।
আবহাওয়ার উপাদানসমূহের তারতম্যের পরিমাপের সময়কাল এক দশক থেকে সহস্র বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং এর ব্যাপ্তি একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল থেকে বিশ্বব্যাপীও হতে পারে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন হলো কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা এলাকার দীর্ঘমেয়াদে আবহাওয়ার পরিবর্তন।
আমরা জানি, প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী প্রতিদিন পৃথিবীতে যে সূর্যকিরণ পৌঁছায় ভূ-পৃষ্ঠ তা শোষণ করে। শোষিত সূর্যকিরণ আবার মহাশূন্যে বিকিরিত বা প্রতিফলিত হয়। প্রকৃতির এই শোষণ ও বিকিরণের নিয়মে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেই জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। পৃথিবীর জলবায়ু অতীতেও পরিবর্তিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও পরিবর্তিত হবে বলে জলবায়ু বিজ্ঞানীগণ আশঙ্কা করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ (Causes of Climate Change)
জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে থাকে মূলত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Global Warming) নামে পরিচিত। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় বহুবিধ কারণে। নিম্নে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:
- অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি।
- যানবাহনের অদগ্ধীভূত কার্বন যেমন – কার্বন মনো-অক্সাইড (CO), কার্বনডাই-অক্সাইড (CO2), সালফারডাই-অক্সাইড(SO2) নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (NO2) প্রভৃতি নির্গত হয়ে দূষণ সৃষ্টি।
- তেজস্ক্রিয় দূষণ যেমন – ১৯৮৬ সালে রাশিয়ার চেরনোবিল পারমানবিক দুর্ঘটনা।
- শিল্পকারখানার নির্গত ধোঁয়া ও বিষাক্ত বর্জ্য এবং শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিমাত্রায় শিল্পায়ন।
- অপরিকল্পিতভাবে বনভূমি উজাড় অথবা বনভূমি এলাকায় বিস্তৃত দাবানল।
- মানুষের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রী (যেমন- এয়ার কন্ডিশনার, প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রী)।
- জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধি ও অসম বন্টন।
- ওজোন স্তর ক্ষয় হয়ে সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌঁছানো।
- কৃষিক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পানি দূষিত হয়ে ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়া।
- ফসলের অবশিষ্টাংশ পচন ও ধানক্ষেত থেকে উদ্ভূত মিথেন।
- সূর্যের শক্তি উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধি (এ হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করে সৌরদীপ্তি চক্র বা Sunspot Cycle এর উপর)।
- আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ।