পদার্থ বিজ্ঞান

পরম শূন্য তাপমাত্রা কাকে বলে? পরম শূন্যের অসম্ভাব্যতা | পরম শূন্য ও পদার্থ

1 min read

পরম শূন্য তাপমাত্রা কাকে বলে?


  •  যে নিম্ন তাপমাত্রায় কোনো গ্যাসের আয়তন ও চাপ শূন্য হয় অর্থাৎ যার নিচে আর কোনো তাপমাত্রা থাকে না তাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা বলে।
  •  -২৭৩° কেলভিন বা ০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা কে পরমশূন্য তাপমাত্রা বলে।এই তাপমাত্রায় সকল গ্যাসের আয়য়তন তাত্বিকভাবে শুন্য ধরা হয়।
  •  পরম শূন্য (Absolute Zero), হচ্ছে এই মহাবিশ্বের সম্ভাব্য সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তাপমাত্রা মাপক যন্ত্রে এর মান হচ্ছে ০ কেলভিন অথবা -২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা -৪৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। মহাবিশ্বে এর থেকে কম তাপমাত্রা হওয়া সম্ভব নয়।

পরম শূন্যের অসম্ভাব্যতা


এই মহাবিশ্বে তাপমাত্রার উচ্চতর প্রান্তের কোনও সীমা নেই। অর্থাৎ একটি বস্তুর তাপমাত্রা যতটা সম্ভব বেশি হতে পারে। যেমন, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হবার মুহূর্তে অর্থাৎ বিগ ব্যাং (Big Bang) এর সময় এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তাপমাত্রা ছিল কোটি কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। কিন্তু আমরা তাপমাত্রার নিম্নতর সীমার ক্ষেত্রে পরম শূন্যের নিচে যেতে পারি না। সত্যি কথা বলতে, আমরা এই মহাবিশ্বের কোনও স্থানে আজ পর্যন্ত পরম শূন্য তাপমাত্রা লক্ষ্য করিনি এবং আমারা আজও পর্যন্ত গবেষণাগারে পরম শূন্য তাপমাত্রায় পৌছুতে পারিনি। এর দুটি কারণ আছে।

১। প্রথমত, কোনও বস্তুকে পরম শূন্যে নিয়ে যেতে হলে, ওই বস্তু থেকে তাপ নির্গত করে তার পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করতে হবে। এটি করার জন্য বস্তুর পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা ওই বস্তুর তুলনায় কম হতে হবে। যেমন, সাধারণ জলের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তুলনায় অনেক বেশি। এবার এই জলকে বরফে পরিণত করতে হলে, এর তাপামাত্রাকে ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য জলকে এমন পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে রাখতে (যেমন ডীপ ফ্রিজ) হবে যার তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। তাহলে জলের থেকে তাপ বেরিয়ে পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হবে এবং জলের তাপমাত্রা কমে গিয়ে তা বরফে পরিণত হবে। সুতরাং কোনও বস্তুকে পরম শূন্যে নিয়ে যেতে হলে তার পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রা পরম শূন্যের কম হতে হবে। যা কার্যত অসম্ভব।

২। দ্বিতীয়ত, কোয়ান্টাম মেকানিক্স। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের হাইজেনবার্গ অনিশ্চয়তার নীতির মতে, কোনও অণুর একেবারে সঠিক অবস্থান জানা সম্ভব নয়। কিন্তু পরম শূন্য যদি একটি অণুর আভ্যন্তরীণ গতি সম্পূর্ণ ভাবে স্তব্ধ করে দেয়, তবে ওই অণুর অবস্থান একেবারে সঠিক ভাবে জানা যাবে। এই কারনে পরম শূন্যে পৌছানো একেবারে অসম্ভব। বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে পরম শূন্যের খুব কাছে পৌছাতে পারলেও, একেবারে পরম শূন্যে এখনও পৌছাতে পারেননি এবং ভবিষ্যতেও সম্ভবত পৌছতে পারবেন না।

পরম শূন্য ও পদার্থ


বিজ্ঞানীরা পরম শূন্যে পৌছতে না পারলেও, এর খুব কাছাকাছি তাপমাত্রায় পৌছতে পেরেছেন। এই অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় পদার্থের অণুগুলি খুবই অদ্ভুতভাবে আচরণ করে। প্রথিতযশা বাঙালি বৈজ্ঞানিক সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সাথে একত্রে কাজ করে খুবই কম তাপমাত্রায় পদার্থ কীভাবে আচরণ করবে, তা নির্ধারণ করেন। একে “বোস আইনস্টাইন কনডেনসেট” তত্ত্ব বলে। এই তত্ত্বের মতে, কোনও গ্যাসীয়-তরল পদার্থের তাপামাত্রা পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারলে, ওই পদার্থের সমস্ত অণুগুলি সর্বনিম্ন কোয়ান্টাম অবস্থায় পৌছে যাবে। এর ফলে ওই অণুগুলি স্বাভাবিকের থেকে একেবারে ভিন্ন ভাবে আচরণ করবে। ওই অণুগুলি একত্রিত হয়ে একটিমাত্র সত্ত্বার মতো আচরণ করবে। এর ফলে এই গ্যাসীয়-তরল বস্তু পরম তড়িৎ পরিবাহক ও পরম তরলে পরিণত হবে। এর ফলে এর মধ্যে দিয়ে বিনা বাধায় তড়িৎ পরিবাহিত হবে। আবার এই গ্যাসীয়-তরল পদার্থে কোনও ঘর্ষণ বল কাজ করবে না। এর ফলে এই পরম তরলকে কোনও পাত্রে রাখলে তা ওই পাত্র থেকে নিজের থেকেই উপচে পড়বে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x