General Knowledge

বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত জরুরী অবস্থার বিধান

1 min read
বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত জরুরী অবস্থার বিধানঃ
———————————————————————–
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশে যদি কোন অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার সম্ভাবনা থাকে তখনই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর নিয়ে দেশে জরুরী অবস্থা জারি করতে পারেন।জরুরি অবস্থার সংজ্ঞা সংবিধানে অন্য কোনো আইনে দেয়া নেই । জরুরী অবস্থা বলতে এমন সংকটজনক অবস্থাকে বুঝায় যখন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে । সাধারণভাবে বলা যায় জরুরি অবস্থা বলতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থে কোনো আকস্মিক সংকটকালীন অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য কতিপয় মৌলিক অধিকারের উপর বাধানিষেধ আরোপ করা বোঝায়।
জরুরী অবস্থার প্রয়োজনীয়তাঃ
—————————————————————————–
জরুরী অবস্থার বিধান অগনাতান্ত্রিক কিছু নয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থে সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য যে কোন দেশের সংবিধানে বা আইনে এর বিধান রাখা যায়। রাষ্ট্র যদি টিকে থাকে তাহলে মৌলিক অধিকারসমূহ টিকে থাকবে আবার যদি টিকে না থাকে তাহলে মৌলিক অধিকারও বিলুপ্ত হবে। সুতরাং রাষ্ট্রের সংকটকালীন এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে মৌলিক অধিকারগুলো যাতে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তার জন্য জরুরি অবস্থার বিধান রাখা উচিত। লর্ড এটকিনসন R V Halliday মামলায় বলেছিলেন ,” নাগরিকদের ব্যাক্তিস্বাধীনতা যতই মুল্যবান হোক না কেন যুদ্ধ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য জরুরি অবস্থায় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কিছু অংশ খর্ব করা যায়।
ভারতের সংবিধানে জরুরী অবস্থাঃ
—————————————————————————-
ভারতের সংবিধানে তিন ধরনের জরুরী অবস্থার বিধান রয়েছে।
ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা( 352 নম্বর ধারা)ঃ
রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন বহিঃ শত্রুর আক্রমণ, যুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ গোলমালের জন্য দেশের নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হচ্ছে অথবা গুরুতর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তাহলে তিনি সমগ্র দেশের জন্য অথবা দেশের কোন নির্দিষ্ট অংশের জন্য জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করার আগে রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেটের সঙ্গে এই বিষয়ে পরামর্শ করতে বাধ্য থাকবেন( 44 নম্বর সংবিধান সংশোধনী)। আজ পর্যন্ত ভারতে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে মোট তিনবার।
খ) রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা (356 নম্বর ধারা)ঃ
কোন অঙ্গ রাজ্যের রাজ্যপাল যদি মনে করেন যে সেই রাজ্যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যাতে সংবিধান অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে এই মর্মে তিনি রাষ্ট্রপতিকে লিখিত সুপারিশ পেশ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতে সন্তুষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে 356 ধারা বা জরুরি অবস্থা জারি হয়।আজ পর্যন্ত 356 নং ধারা জারি হয়েছে 75 বারেরও বেশি।
গ) আর্থিক জরুরি অবস্থা( 360 নম্বর ধারা)ঃ
360 নম্বর ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন দেশের কোন অংশে বা সমগ্র অংশে আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম নষ্ট হতে চলেছে বা এরকম কিছু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাহলে তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। আজ পর্যন্ত 360 নম্বর ধারা একবারও জারি হয়নি।
বাংলাদেশের সংবিধানে জরুরী অবস্থা সংক্রন্ত বিধান ঃ
——————————————————————–
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় জরুরী অবস্থা ঘোষণার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। সংবিধান প্রণেতারা আশা করেছিলেন যে এই প্রজাতন্ত্রে কখনও এমন সময় আসবে না যখন জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার প্রয়োজন পড়বে। তবে ১৯৭৩ সালে ২য় সংশোধনীর মাধ্যমে জরুরী অবস্থার বিধান সংযুক্ত করা হয় । এতে নতুন একটি ভাগ (নবম ক ) সংযুক্ত করা হয় । এই সংবিধানের ১৪১(ক), ১৪১(খ) ও ১৪১(গ) অনুচ্ছেদের আওতায় দেশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবনে হুমকির কারণে জরুরি অবস্থা (সর্বাধিক ১২০ দিনের জন্য) ঘোষিত হতে পারে।
.
সংবিধানের ১৪১ক (৩) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরিণ গোলযোগের দ্বারা বিপদ আসন্ন বলে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হলে প্রকৃত যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন।
.
সংবিধানের ১৪১ক (১) উপ-অনুচ্ছেদের শর্ততে বলা হয়েছে যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হলে ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে।সুতরাং প্রকৃতপক্ষে জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। অবশ্য জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের শর্তটি যোগ করার পেছনে বাস্তব কারণও আছে।
.
রাষ্টপতি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত ব্যতীত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই প্রতিস্বাক্ষরের বিধান করা হয়েছে। জরুরি অবস্থার উদ্ভব হয়েছে কিনা কিংবা জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ বা এর কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন কিনা এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। কোনো আদালতে তাঁর ষোষণার যর্থাথতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যাবে না। আদালত শুধু এইটুকই দেখতে পারবে যে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর নেয়া হয়েছেল কিনা।
.
.জরুরী অবস্থায় মৌলিক অধিকার ঃ
—————————————————————————–
১৪১ (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথে ৬টি মৌলিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়।
অনুচ্ছেদ ৩৬: চলাফেরার স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৭: সমাবেশের স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৮: সংগঠনের স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৩৯: চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৪০: পেশা বা বৃত্তির-স্বাধীনতা
অনুচ্ছেদ ৪২: সম্পত্তির অধিকার
.জরুরি অবস্থায় এই ৬টি মৌলিক অধিকার স্থগিত থাকে। কিন্তু অবশিষ্ট ১২ টি মৌলিক অধিকার জরুরি অবস্থা চলাকালে বহাল থাকে। তবে ১৪১ (গ) অনুযায়ী উক্ত ১২টি অধিকারের যেকোনটির বা সবগুলো বলবৎকরনের অধিকারকে রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে স্থগিত করে দিতে পারেন। দেশে এ পর্যন্ত যতোবার জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে, প্র্রত্যেকবারই ১২টি অধিকারও স্থগিত করা হয়েছে। কাজেই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে এমন বিধান করা হয়েছে যাতে সবগুলো মৌলিক অধিকারই স্থগিত করা যায়।
.জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে তার ফলাফলঃ
—————————————————————————–
অনুচ্ছেদ ১৪১ক(২) অনুযায়ীঃ
১. জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর পরবর্তী কোনো ঘোষণার মাধ্যমে রা তা প্রত্যাহার করা যাবে।
২. জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর তা সংসদে উপস্থাপন করতে হবে এবং ঘোষণা ১২০ দিনের মধ্যে সংসদের প্রস্তাব দ্বারা অনুমোদিত না হলে ১২০ দিন পর তার কোনো কার্যকারীতা থাকবে না।
৩. যদি সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া অবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় অথবা ঘোষণার ১২০ দিনের মধ্যে যদি সংসদ ভেংঙ্গ যায় তাহলে সংসদ পুর্নগঠিত হওয়ার পর প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের প্রস্তাবের মাধ্যমে উক্ত ঘোষণা অনুমোদিত না হলে ৩০ দিন পর তার কোনো কার্যকারীতা থাকবে না ।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত এ পর্যন্ত পাঁচবার জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে।
১. ১৯৭৪ সালের ২৮শে ডিসেম্বর।
২. ১৯৮১ সালের ৩০শে মে।
৩. ১৯৮৭ সালের ২৭শে নভেম্বর।
৪. ১৯৯০ সালের ২৭শে নভেম্বর।
৯. ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি।
______________________________________________
★কোন সাজেশান থাকলে কমেন্টে জানাবেন
(সূত্রঃ বিভিন্ন গণমাধ্যম ,ওয়েবসাইট ,ব্লগ,সাংবিধানিক রাজনীতির বই থেকে সংগৃহীত, সম্পাদিত ,সংক্ষেপিত একটি মৌলিক লেখা। কপি করলে কার্টেসি দিতে ভুলবেন না ।
মুহাম্মদ ইরফান উদ্দীন
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা(সুপারিশপ্রাপ্ত)
৩৭ তম বিসিএস নন-ক্যাডার
Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x