মুরতাদ কাকে বলে?
মুরতাদ কাকে বলে?
মুরতাদ শব্দের শাব্দিক অর্থ হল- বিমুখ হয়েছে বা ফিরে গিয়েছে এমন। এর মূল মর্ম হল ইসলাম ত্যাগ করা বা ইসলামের কোন মৌলিক আকিদা বা বিধানকে মানতে অস্বীকার করা, বিংবা তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা অথবা ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ের অবমাননা করা, যা অন্তরের ভক্তিশূন্যতা ও শ্রদ্ধাহীনতার আলামত বহন করা।
এককথায় ঈমান বিনষ্টকারী যে কোন কুফরী-শিরকী আকিদা বা বিশ্বাস পোষণ করা, অথবা এ জাতীয় কোনো কথা বা কাজে লিপ্ত হওয়ার নামই হল “মুরতাদ হওয়া”।
যে সকল কারণে একজন ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে যায়
যে সব কারণে ব্যক্তি মুরতাদ হয়ে যায় এর বিভিন্ন কারণের মধ্যে হতে নিম্নোক্ত কয়েকটি কারণ উল্লেখ কারা হলো-
- আল্লাহ তায়ালার শানে বেয়াদবি করা।
- ইসলামের শিআর তথা প্রতিকসমূহ যেমন- কুরআন মাজীদ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ইলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহবীগণ, বিভিন্ন ইবাদত যথা- নামায, রোযা, হজ্ব-যাকাত , দোয়া-রুরুদ, বিভিন্ন ফযীলতপূর্ণ স্থান যথা- মসপিদের নববী, কারা শরীফ, মসজিদে আকসা এবং পৃথিবীর সকল মসজিদ ইত্যাদির প্রতি অবমাননা করা।
- ইসলামের কোনো বিধান, ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কিত সাধারণ কোনো বিষয়, নবীজীর কোনো সুন্নত, এমনকি প্রমাণিত কোনো মুস্তাহাব আমল ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞাসূচক বাক্য ব্যবহার করা অথবা অবজ্ঞা-প্রকাশক কোনো আচরণ করা। যেমন- কুকুরের মাথায় টুপি পরানো, বোরকাকে বেশ্যার পোশাক বলা হত্যাদি।
- জরুরিয়াতে দ্বীন তথা সর্বজনবিদিত অকাট্য দ্বীনী বিষয়সমূহের কোনো একটি অস্বীকার করা, অপছন্দ করা, বা তার অপব্যাখ্যা করা অপছন্দ করা, বা তার অপব্যাখ্যা করা, অথবা তার উপর আপত্তি তোলা কিংবা তা সংস্কারযোগ্য বলে মনে করা। যেমন খতমে নবুওত অস্বীকার করা, চুরির শাস্তির উপর আপত্তি করা ইত্যাদি।
- ইসলাম ত্রাগ করে অন্য কোনো ধর্ম গস্খহণ করা বিংবা কোনো ধর্মই না মানা। যেমন আল্লাহকে বিশ্বাস না করা, প্রকৃতিবাদী হওয়া, খৃস্টান বা তাদের ভাষায় ‘ঈসায়ী মুসলমান’ হওয়া ইত্যাদি।
- এমন কোনো কাজ করা বা বিশ্বাস পোষণ করা, যা আল্লাহ তাআলার তাওহীদ পরিপন্থী। যেমন- কোনো প্রতিকৃতির সামনে মাথা নত করা, মাজার তাওয়াফ করা, উপায়-উপকরণের উর্ধ্বের বিষয়ে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কাউকে বিযিকদাতা, ফসলদাতা, সন্তানদাতা ইত্যাদি মনে করা।
- অন্যদের ধর্মীয় প্রতীক গস্খহণ করা, কথা বা কাজে এর প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা প্রকাশ করা।
- ইসলামী শরীয়ত তথা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের হাকিমিয়্যত কে অস্বীকার করা। অর্থাৎ- জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহ তাআলা হালাল-হারাম, সিদ্ধ-অসিদ্ধ নির্ধারণকারী এবং তিনিই যে একমাত্র বিধানদাতা তা বিশ্বাস না করা ইত্যাদি।
ইসলামে মুরতাদের শাস্তি
ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুসারে মুরতাদের জন্য ইহলৌকিক ও পারলৌকিক শাস্তি রয়েছে। মুরতাদের পরকালীন শাস্তির ফয়সালা হবে হাশরের ময়দানে। সেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেই ফয়সালা করবেন। কিন্তু দুনিয়ার আদালতে কারো মনের অবস্থার ওপর বিচার করা যায় না। কারো মনের খবর নিশ্চিতভাবে জানাও সম্ভব নয়। তাই দুনিয়ায় বিচার হয় বাহ্যিক অবস্থা বিবেচনা করে। কোনো মুনাফিক তথা ছদ্মবেশী মুসলমান নিজের কুফরি আকিদা ও বিশ্বাস লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হলে বিচারকের সামনে তার ইরতিদাদ বা ধর্মত্যাগ প্রমাণিত হবে না। তখন পার্থিব কোনো শাস্তিও তার ওপর আপতিত হবে না। পার্থিব শাস্তি প্রয়োগ হবে কেবল ওই ব্যক্তির ওপর, যার মুরতাদ হওয়া স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে এবং ন্যায়পরায়ণ বিচারকের কাছে তা প্রমাণিত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিচারকের করণীয় হলো, মুরতাদকে প্রথমে তাওবা করার সুযোগ দেবে। তাওবা করলে সেটা তার জন্য মঙ্গলজনক, অন্যথায় নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করবে। ইসলামে মুরতাদের পার্থিব একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ বিষয়ে সব যুগের, সব মাজহাবের আলেমরা একমত পোষণ করেছেন।
যুক্তির আলোকে মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড
মুরতাদ ব্যক্তি ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করে প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধ কখনো বাগ্যুদ্ধে রূপ নেয়, কখনো সশস্ত্র লড়াইয়ে। কঠিন বাক্যবিনিময়ের মধ্য দিয়েই সশস্ত্র লড়াইয়ের সূচনা হয়। কখনো কখনো সমর যুদ্ধের চেয়েও বাগ্যুদ্ধ বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। একটি বক্তৃতা একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। একটি ঐতিহাসিক ভাষণ একটি দেশ জয় করতে পারে। বদলে দিতে পারে সমাজ কাঠামো। ছড়িয়ে দিতে পারে প্রবল উত্তাপ, দ্রোহের আগুন। তাই জিহ্বা দিয়ে যে ‘যুদ্ধ’ হয়, তা সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে কোনো অংশেই কম নয়। ইসলামে সব ধরনের মুরতাদের শাস্তিই মৃত্যুদণ্ড। মুরতাদের মৃত্যুদণ্ডের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজিয়্যাহ (রহ.) লিখেছেন, ‘ইরতিদাদের বা ধর্মত্যাগের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াই যুক্তিসংগত। কারণ সমাজে মুরতাদের অবস্থান সংঘাত-সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণ হয়ে থাকে। এমন ব্যক্তির বেঁচে থাকার মধ্যে কোনো কল্যাণের আশা করা যায় না। সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিকল্প নেই।’ (ইলামুল মুওয়াক্যিইন ২/৮৪)