Modal Ad Example
পড়াশোনা

প্রেষণা কাকে বলে? প্রেষণার বৈশিষ্ট্য | প্রেষণার প্রকারভেদ

1 min read

প্রেষণা কাকে বলে?

প্রেষনা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা আমাদের বিশেষ একটি ক্রিয়া সম্পাদন করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং কাজকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য মুখী করে ও লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সেই কাজে ব্যাপৃত রাখে।

প্রাণীর কোন আচরণই উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘটে না। প্রাণী তিনটি কারণের জন্য আচরণ করে বেঁচে থাকা বংশ রক্ষা এবং বংশগতির উন্নতি। আর প্রাণীর এই সকল আচরণ তাড়না দ্বারা পরিচালিত হয়। উদ্দেশ্য মূলক আচরণের লক্ষ্য পূরণের জন্য এইযে আভ্যন্তরীণ তারণা বা তাগিদ তাকেই বলে প্রেষণা।

প্রেষণা হলো একটি মানসিক চালিকা শক্তি যার কারণে মানুষ একটি উদ্দীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রেষণা অন্তর্মুখী বা বহির্মুখী হতে পারে। শব্দটি সাধারণত মানুষের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এটি প্রাণীর আচরণ বর্ণনার ক্ষেত্রেও শব্দটিকে ব্যবহার করা যায়।

বিভিন্ন তত্ত্ব অনুযায়ী প্রেরণার শিকড় প্রোথিত রয়েছে আমাদের প্রাথমিক প্রয়োজনের মধ্যেই – যার মধ্যে অন্যতম শারীরিক কষ্ট হ্রাস করা এবং সন্তুষ্টি বাড়ানো। এর মধ্যে অন্যান্য নির্দিষ্ট চাহিদা যেমন খাওয়া, ঘুমানো, বা কোনো কামনার বস্তু, শখ, লক্ষ্য, জীবনযাত্রার পরিস্থিতি, আদর্শ থাকতে পারে। এছাড়াও মান কল্যাণ, নীতি বা মৃত্যুশীলতা এড়ানোর অনেক কারণ থাকতে পারে যা আপাতদৃষ্টি দিয়ে বোঝা যায় না।

প্রেষণার বৈশিষ্ট্য

প্রেষণার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। যেমন –

  • প্রেষণা চিরস্থায়ী নয়। মাঝপথে কমে যেতে পারে। এমনকি কোনো লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে হলে প্রেষণা মাঝপথে শেষ হয়ে যেতে পারে।
  • প্রেষণা আচরণ সম্পন্ন করে না আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
  • প্রেষণা আচরণের অভিমুখ নির্দেশ করে মাত্র।
  • একটি উদ্দেশ্য পূরণের প্রেষণা অন্য উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কার্যকর হতে পারে না।
  • প্রেষণা কার্যপদ্ধতি স্থির করে না, কার্যপদ্ধতি বক্তি নিজেই স্থির করে নেয় ধনী হওয়ার জন্য বাসনায় ব্যক্তি কোন পথ বেছে নেবে তা ব্যক্তির নিজস্ব।
  • প্রেষণা বাধাপ্রাপ্ত হলে মানুষের প্রক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
  • প্রেষণার তীব্রতা অনুযায়ী কাজের গতি ও উদ্দেশ্য বাছাই করা প্রয়োজন হয়।

প্রেষণার প্রকারভেদ

১। জৈবিক বা শারীরবৃত্তীয় প্রেষণা: ব্যক্তির জৈবিক বা শারীরবৃত্তীয় চাহিদাকে কেন্দ্র করে যে জাতীয় প্রেষণার সৃষ্টি হয়, তাকে জৈবিক বা শারীরবৃত্তীয় প্রেষণা বলে। জল, আলাে, বাতাস, খাদ্য, মাতৃত্ব, যৌনতা ইত্যাদি জৈবিক চাহিদাকে কেন্দ্র করে এই জাতীয় প্রেষণা জাগ্রত হয়। বাঁচার তাগিদে এই প্রেষণার পরিতৃপ্তির দরকার। জৈবিক প্রেষণার পরিতৃপ্তি ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বজায় রাখে, দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখে।

২। ব্যক্তিগত প্রেষণা: ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তাকে কেন্দ্র করে যে ধরনের প্রেষণা কার্যকরী হয় তাকে ব্যক্তিগত প্রেষণা বলে। অর্থাৎ ব্যক্তির আত্মসচেতনাতার সঙ্গে যুক্ত প্রেষণাগুলিকে ব্যক্তিগত প্রেষণা বলে। মানুষের আত্মসচেতনতাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় মানসিক চাহিদা (Psychological need) এবং এই চাহিদাগুলাের সঙ্গে যুক্ত প্রেষণা হল ব্যক্তিগত প্রেষণা।

মনােবিদ ম্যাসলাে (Maslow)-র মতে, মানসিক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির মধ্যে আত্মশ্রদ্ধার প্রেষণার (Need for Self-esteem) উন্মেষ ঘটে। এই প্রেষণা ব্যক্তিকে তার আত্মমর্যাদা রক্ষার অনুকুলে আচরণ করতে উদ্যত করে।
উল্লেখযােগ্য ব্যক্তিগত প্রেষণা যা সকলের মধ্যে দেখা যায় সেগুলি হল— আগ্রহ, মনােভাব, মূল্যবােধ, আত্মসচেতনতা, আত্মপ্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। শিশুদের আত্মসচেতনতা ব্যক্তিগত প্রেষণা জাগ্রত করে। বাবা, মা এবং অন্যান্য গুরুজন ব্যক্তিদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতার বিস্তৃতি ঘটে। তার ফলে প্রেষণা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রভাবিত হয়।

৩। সামাজিক প্রেষণা: ব্যাক্তিদের সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে সুস্থ সামাজিক জীবনযাপনের জন্য নিরাপত্তা, ভালােবাসা, আত্মপ্রতিষ্ঠা, খ্যাতির স্পৃহা প্রভৃতি সামাজিক চাহিদাগুলিকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে যে ধরনের প্রেষণা কার্যকরী হয়, তাকে সামাজিক প্রেষণা বলে। সামাজিক প্রেষণা সামাজিক পরিবেশে অর্জিত হয় এবং ব্যক্তির সামাজিক বিকাশে সাহায্য করে। অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার প্রভাবে সামাজিক প্রেষণা বিকশিত হয়। শিশুর জীবনে এইসকল সামাজিক প্রেষণা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এইসকল সামাজিক প্রেষণা সামাজিক পরিণমনের সূচক।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x