জীববিজ্ঞান

পরিপাক কাকে বলে? কার্বোহাইড্রেটের পরিপাক, প্রোটিনের পরিপাক, ফ্যাটের পরিপাক

1 min read

পরিপাক কাকে বলে?

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যবস্তু বিভিন্ন এনজাইমের উপস্থিতিতে ভেঙ্গে সরল খাদ্যরসে পরিণত হয় তাকে পরিপাক বলে।

অন্যভাবেও পরিপাক এর সংজ্ঞা প্রদান করা যায় –

আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি তাদের অধিকাংশই জটিল খাদ্য। এই জটিল খাদ্য দ্রব্যকে আমাদের শরীর শোষণ করে সরাসরি কাজে লাগাতে পারে না।শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় জটিল, অদ্রবণীয় খাদ্যবস্তু নির্দিষ্ট এনজাইমের সহায়তায় দেহের গ্রহণ উপযোগী দ্রবণীয় সরল ও তরল খাদ্য উপাদানে পরিণত হয় তাকে পরিপাক বলে।

খাদ্য গ্রহণের পর খাদ্য উপাদানের বৃহৎ ও জটিল অণুগুলো ক্ষুদ্র ও সরল অণুতে রূপান্তরিত হয়ে দেহে শোষিত হয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায় এবং শরীরের পুষ্টি সাধন করে। খাদ্য দ্রব্যগুলো সহজ অণুতে রূপান্তরের কাজটি কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ এসিড ও এনজাইমের সহায়তায় ধাপে ধাপে বিক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। একে পরিপাক বলে।

যে প্রক্রিয়ায় খাদ্য বস্তুর বৃহত্তর অণুগুলো বিভাজিত হয়ে দেহের উপযোগী সরল ও ক্ষুদ্রতর অণুতে পরিণত হয় তাকে পরিপাক বলে।

পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট ভেঙ্গে গ্লুকোজ, প্রোটিন ভেঙ্গে এ্যামাইনো এসিড এবং ফ্যাট ভেঙ্গে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে রূপান্তরিত হয়। এসব খাদ্যের পরিপাক ক্রিয়া দেহের পরিপাক তন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

 

পরিপাক তন্ত্রের সাথে জড়িত অঙ্গগুলোর মাধ্যমে পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পরিপাক তন্ত্রের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরিপাক হয়। এই পরিপাকের জন্য প্রয়োজন এনজাইমসমূহ, লালারস, পাচক রস, অগ্ন্যাশয়, রস ও আন্ত্রিক রস। এছাড়া পিত্তরস ও এসিডসমূহ পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে। মুখের কাজ হলো চিবানো ও জিহ্বার সহায়তায় খাদ্যকে অন্ননালী দিয়ে পাকস্থলীতে পাঠানো। পাকস্থলী সাময়িক খাদ্য ভান্ডাররূপে কাজ করে। এখান থেকেই শুরু হয় খাদ্যের পরিপাক। নিচে খাদ্যের প্রধান তিনটি উপাদান – কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের পরিপাক বর্ণনা করা হলো:

কার্বোহাইড্রেটের পরিপাক

কার্বোহাইড্রেট পরিপাক মুখবিবরে আরম্ভ হয়। কার্বোহাইড্রেট দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে। ভাত, রুটি, আলু, চিনি, গুড়, মধু, মিষ্টি ফল ইত্যাদি কার্বোহাইড্রাইটের প্রধান উৎস। এসব খাদ্যদ্রব্য পরিপাকের মাধ্যমে সরল উপাদানে পরিণত হয়ে শরীরে শক্তি উৎপন্ন করে। তবে এক শর্করা বা মনোস্যাকারাইডের কোনো পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। এরা সরাসরি রক্তস্রোতে মিশে যায়। দ্বি শর্করা বা ডাই স্যাকারাইড মুখ ও পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত অ্যামাইলেজ এনজাইমের ক্রিয়ায় ভেঙ্গে এক-শর্করা বা মনোস্যাকারাইড হয়। পলিস্যাকারাইড ভেঙ্গে শেষ পর্যন্ত মনোস্যাকারাইড হয়ে রক্তপ্রবাহে মিশে যায়।

 

প্রোটিনের পরিপাক

প্রোটিন পরিপাক হয়ে এমাইনো এসিড হয়ে রক্তপ্রবাহে মিশে যায়। প্রোটিন শরীরের গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে বিধায় প্রোটিন খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস হলো মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল ও বিচি জাতীয় খাদ্য। এসব খাদ্য উপাদান পাকস্থলীতে সামান্য পরিপাক হয়। প্রোটিনের বেশিরভাগ অংশ ক্ষুদ্রান্ত্রে পরিপাক হয়ে এ্যামাইনো এসিড রূপে শোষিত হয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়।

ফ্যাটের পরিপাক

ফ্যাট পরিপাকের পর ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল হয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়। ফ্যাটকে ঘনীভূত শক্তির উৎস বলা হয়। খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে ফ্যাটই শরীরে সবচেয়ে বেশি তাপশক্তি সরবরাহ করে। ফ্যাটের প্রধান উৎস হলো তেল, ঘি, মাখন, চর্বিযুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, দুধের সর ইত্যাদি। ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রে ফ্যাটের বেশিরভাগ অংশ পরিপাক হয়।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x