বাঙালি জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?
বাঙালি জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?
জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ, যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান স্থান দেয়া হয়।
বাঙালির জাতীয়তাবাদ বলতে বাঙালির নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বুদ্ধিবৃত্তি তথা নিজস্ব জাতিসত্তাকে বোঝায়। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে এবং নিজেদের আত্মপরিচয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করাতে থাকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভাষা আন্দোলন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে। পাকিস্তানের প্রতি আগে যে মোহ ছিল তা দ্রুত কেটে যেতে থাকে। ভাষাকেন্দ্রিক এই ঐক্যই জাতীয়তাবাদের মূলভিত্তি রচনা করে, যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জাতীয়তাবাদ একটি মানসিক ধারণা। তাই এটি প্রধানত অনুভুতিমূলক। জাতীয়তার প্রকৃত ভিত্তি ঐক্যের একটি সক্রিয় অনুভূতি এবং একতার তীব্র প্রেরণা। অধ্যাপক লাস্কির মতানুসারে, জাতীয়তাবাদ হলো একটি জাতির লোকদের মধ্যে এমন একটি বিশেষ ঐক্য যা তাদেরকে মানব জাতির অন্য সকল দল থেকে পৃথক করে। জাতীয়তাবাদের সাধারণ এ ধারণা বাঙালি জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাঙালিদের নৃতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ও মাতৃভাষা বাংলার ভিত্তিতে তাদের যে পরিচয় তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ। এ জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালিরা যুগ যুগ ধরে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। বাঙালি জাতির হাজার বছরের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, চিন্তা, চেতনা, সমৃদ্ধি এবং স্বাতন্ত্র্যবোধই বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ সমগ্র বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করেছে।
বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সাদৃশ্যের মাধ্যমে যে ঐক্যানুভূতি গড়ে উঠেছে তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ একদিনে গড়ে উঠে নি; বরং তা বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন শক্তিকর্তৃক শোষিত-বঞ্চিত হওয়া থেকে উদ্বুদ্ধ-উদ্ভূত ক্ষোভেরই ফলশ্রুতি। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম বাঙালি জাতীয়তাবাদকে পরিপুষ্ট করেছে। আর এটাই পূর্ণাঙ্গতা অর্জন করেছে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।