পড়াশোনা

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণ | গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব | বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের উপায়

1 min read

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কাকে বলে?

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি।এটিকে গ্রিন হাউসের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হয়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য বিভিন্ন ধরনের গ্যাসকে দায়ী করা হয়। এগুলো হলো কার্বনডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, মিথেন, ওজোন, জলীয়বাষ্প প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণ

১৮০০ সালের প্রথম দিকে শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই কয়লা, তেল, গ্যাসোলিনের মত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ফলে বায়ুমণ্ডলের গ্রিন হাউজ গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি, বনায়ন এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়। কল-কারখানা ও যানবাহনের নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, নগরায়ন, বাড়ি ঘরের অবকাঠামোতে বৈশিষ্ট্য, অতিরিক্ত খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভরতার কারণে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মিও পৃথিবী পৃষ্ঠে বসবাসরত জীবজগতের জীবনধারণে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর উল্লেখযোগ্য প্রভাবসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • জলবায়ু পরিবর্তনঃ বিশ্ব উষ্ণায়নের মুখ্য প্রভাব হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। যেমন – অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি। এছাড়া অধিক গরম, খরা, এসিড বৃষ্টি প্রভৃতি দেখা দিচ্ছে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টিঃ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটনের হার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততার ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটনের হার সবচেয়ে বেশি।
  • মেরু অঞ্চলের বরফ গলনঃ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে।
  • সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা পরিবর্তনঃ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিশন, ভিয়েতনাম, ফিজি, কিরিবাতি, টুভ্যালু প্রভৃতি দেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কৃষি জমি লবণাক্ত হয়ে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাবে।
  • জীববৈচিত্র্য ধ্বংসঃ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণিকূল বিলুপ্ত হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাসের অনুকূল পরিবেশে সরাসরি আঘাত হানার মধ্য দিয়ে ধ্বংস সাধন করছে।
  • রোগব্যাধিঃ উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন – ম্যালেরিয়া, এজমা, এলার্জি প্রভৃতি রোগের বিস্তার ঘটেছে।
এছাড়া পৃথিবীর ভূমিক্ষয়, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, মাটির উর্বরতা হ্রাস, প্রাকৃতিক জলাশয়ের উৎস বিনষ্ট হওয়া, খাদ্যে অনিরাপত্তা, বাস্তুসংস্থানের চক্র বিনষ্ট হওয়া, ওজোন স্তরের কার্যক্রম নষ্ট হওয়া, সমুদ্রে অক্সিজেন দ্রবীভূত হওয়ার পরিমাণ করে যাওয়া ইত্যাদি নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে পৃথিবীবাসী।

বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের উপায়

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো –
  • পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কার্বন উৎপাদনের হারকে কমিয়ে আনা;
  • যানবাহন ও কলকারখানার দূষিত গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণ;
  • যথাযথ মাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার;
  • বিকল্প জ্বালানি যেমন – কয়লা, খনিজ তেল, পারমাণবিক শক্তি এর পরিবর্তে সৌরশক্তি, বায়ু শক্তি, জৈব গ্যাস ব্যবহার করা।
  • প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ এবং নতুন বন সৃজন;
  • পরিবেশ বান্ধব শিল্পায়ন;
  • জনসচেনতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিক পদক্ষেপ প্রভৃতি।
Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x