বিজ্ঞান

সেরিব্রাল পালসি কাকে বলে? সেরিব্রাল পালসির বৈশিষ্ট্য এবং সেরিব্রাল পালসির প্রকারভেদ

1 min read

সেরিব্রাল পালসি কাকে বলে?

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) হলো এক ধরনের স্নায়বিক ভারসাম্যহীনতা যা বাচ্চাদের মস্তিষ্ক গঠনের সময় কোনো প্রকার আঘাতজনিত কারণে বা স্নায়ুকোষের ঠিকমতো কাজ না করার কারণে ঘটে থাকে। সেরিব্রাল পালসির জন্য শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের নড়াচড়া, পেশির সক্ষমতা, কোঅর্ডিনেশন বা ভারসাম্য, সব কিছুই ব্যাহত হয়।

সেরিব্রাল পালসি একটি সমন্বয়িত শব্দ, যার মধ্যে রয়েছে কিছু শারীরিক সক্ষমতার অনুন্নয়ন বা অসম্পূর্ণতা যেগুলি সামগ্রিকভাবে মানুষের বিকাশের, বিশেষত দৈহিক সঞ্চালনের ক্ষেত্রে অক্ষমতা সৃষ্টি করে। সেরিব্রাল পালসি বিজ্ঞানীদের মতে বংশগত নয় এবং বিশেষ কোনো রোগও নয়। বরং অনেকাংশেই জন্মগত ত্রুটি। জন্মে অব্যবহিত পর অথবা শৈশবেই এ সমস্যা দৃষ্টিগোচর হয় থাকে। মস্তিষ্কের অপরিণতি থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অক্ষমতাজনিত কারণে যখন অঙ্গ সঞ্চালন এর ক্ষেত্রে যে স্থায়ী ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় তাকে সেরিব্রাল পালসি বলা হয়।

মাতৃ জঠরে মস্তিষ্কের বিকাশ কালীন সময়ে যদি কোন কারণে ক্ষতি হয় অথবা জন্মের সময় কোন কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই ত্রুটি দেখা দেয়। এমনকি শিশুর তিন বছর বয়স পর্যন্ত এই ত্রুটির সম্ভাবনা থাকে। সেরিব্রাল পালসি এর প্রভাবে শিশুর স্বাভাবিক চলাফেরা শক্তি নষ্ট হয়, দৈহিক গঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়, অনুভূতি প্রকাশে বাধা প্রাপ্ত হয়, ধারণা বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সর্বোপরি মনের ভাব প্রকাশের অধিকাংশ মাত্রায় অক্ষম হয়।

সেরিব্রাল পালসি এর বৈশিষ্ট্য

যে লক্ষণগুলি দ্বারা মস্তিষ্কে আঘাত অপুষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়, সেগুলি হল সেরিব্রাল পালসির বৈশিষ্ট্য। এই দ্বারাই রোগটিকে চিহ্নিত করা যায়। যেহেতু শিশুরা নিজেদের অসুবিধা ঠিকমত পৌঁছাতে পারে না।

মাসল টোন বা মাংস পেশির গঠনঃ স্বল্প বা অতিরিক্ত পেশির গঠন হাত পা, খুব শিথিল বা খুবই শক্ত হাত পা, অনিয়মিত পেশির সংকোচন, গাঁট বা গ্রন্থি গুলির একত্রিত হয়ে যাওয়ার সঠিকভাবে নড়াচড়া না করতে পারা। এর ফলে হাঁটাচলা, বসে থাকা বা দাঁড়ানো কোনটাই অবলম্বন করা সম্ভব হয় না।

চলাচলের সামনের শয়তান নিয়ন্ত্রণঃ মাংসপেশির গঠনের অসামঞ্জস্য শিশুদের হাত পা, শরীরের নড়াচড়া কে নিয়ন্ত্রণ করে। পেশীর গঠনের এই অসঙ্গতির জন্যই বাচ্চাদের হাত পা কুঁকড়ে থাকা বা শিথিলভাবে থাকা বা ক্রমাগত কাঁপতে দেখা যায়।

অঙ্গভঙ্গিঃ সেরিব্রাল পালসি ভারসাম্য ও অঙ্গভঙ্গি কে ব্যাহত করে। যখন শিশুরা বিভিন্ন ভঙ্গিতে বসে তখন পসচারাল রেসপন্স করাটা খুবই স্বাভাবিক। সাধারণত সামনে পা ছড়িয়ে বসা একটা শিশুর স্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি। কিন্তু সেরিব্রাল পালসি তে আক্রান্ত শিশুর পক্ষে এইভাবে বসা সম্ভব নয়।

ভারসাম্যঃ নার্ভ বা মোটরের অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ করার ফলেই শিশুদের ভারসাম্য ব্যালেন্স এ সমস্যা দেখা যায়। বাবা-মা’রা কি অসঙ্গতি চিহ্নগুলি যখন শিশুরা বসতে শেখে বা উঠে দাঁড়ায় বা হামা দেয় বা হাঁটতে শেখে তখন লক্ষ করতে পারেন। সাধারণত ভাবে শিশুরা তাদের হাতের সাহায্যে বসা, হাটা, পরবর্তীকালে নিজের কাজ নিজেরাই করতে শেখে। কিন্তু যদি একটি শিশু কারো সাহায্য ছাড়া বসতে বা দাঁড়াতে না পারে, তখন সেটা সেরিব্রাল পালসি লক্ষণ বলে ধরা হয়।

গ্রস্ মোটর ফাংশনঃ হাত-পা ও বিভিন্ন পেশির উপযুক্ত নাড়াচাড়া দ্বারা সার্বিকভাবে চলাচল সম্পনন করাই হল গ্রস্ মোটর ফাংশন। যেভাবে একটা শিশুর ব্রেন গড়ে ওঠে, সে একটি নির্দিষ্ট সময়ের থেকে বেশি সময় লাগে বা নির্দিষ্ট সময়ে সে ঠিকমতো সেই কাজ করতে না পারে, যেমন পারা, এগুলি সেরিব্রাল পালসির লক্ষণ হতেও পারে।

ফাইন মোটর ফাংশনঃ যথাযথ ও সন্নিহিত পেশির চলাচলকেই ফাইন মোটর ফাংশন বলা হয়। ফাইন মোটর কন্ট্রোল এর মধ্যে অনেক কাজই পড়ে যেগুলি শিশুরা শেখে, যেখানে শারীরিক ও মানসিক দুই – এর সম্মিলিত প্রয়াস লাগে। শিশু যত বেড়ে উঠতে থাকে তার ই সকল দক্ষতা দেখা যায়। অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা অপেক্ষাকৃত দেরীতে ফাইন মোটর কন্ট্রোল এর প্রকাশ সেরিব্রাল পালসির সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য।

ওরাল মোটর ফাংশনঃ ঠোঁট, জিভ, মাড়ির প্রকৃত ব্যবহারের ফলেই মানুষ কথা বলে, খায় বা পান করে। এই সবই হল ওরাল মোটর ফাংশন। একটি শিশু যে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত, তার ওরাল মোটর ফাংশনও ঠিক মতো কাজ করে না; যার ফলে তার কথা বলতে, চেবাতে, খেতে অসুবিধা হয়। ওরাল মোটর ফাংশন শ্বাস – প্রশ্বাস, কথা বলা এই সব কিছুকেই কব্জা করে। এপ্রাক্সিয়া ও ডিসারথ্রিয়া হল স্নায়বিক বাচনভঙ্গির অসামঞ্জস্যতা যা সেরিব্রাল যা সেরিব্রাল পালসির জন্য হয়।

সেরিব্রাল পালসির প্রকারভেদ

বৈশিষ্ট্যভেদে সেরিব্রাল পালসিকে চারভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

ক) Spastic,

খ) Ataxic,

গ) Athetoid/Dyskinetic এবং

ঘ) Mixed

এই চার প্রকার সেরিব্রাল পালসি সম্পের্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো –

ক) Spastic Cerebral Palsy: যখন পেশিগত সমস্যা প্রধান আকারে দেখা দেয়, তখন সেই ধরনের CP-তে Spastic Cerebral Palsy বলা হয়। সাধারণত সমস্ত প্রকার CP আক্রান্ত শিশুদের মধ্যেই Spastic CP -র বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যদিও এই ধরনের শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি সহজ। কারণ চিকিৎসার সাহায্যে অনেক ক্ষেত্রেই এই সমস্যার আংশিক সমাধান লক্ষণীয়।

খ) Ataxic Cerebral Palsy: লঘু মস্তিষ্কে সমস্যার ফলে Ataxic Cerebral Palsy দেখা দেয়। এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুব কম। দেহের ভারসাম্য রক্ষা, হাঁটা-চলার ক্ষমতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমস্যার পাশাপাশি এই ধরনের শিশুরা ছোটোখাটো যে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়। এমনকি এই শিশুদের দৃষ্টিক্ষমতা বা কথা বলার ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্থ থাকে।

গ) Athetoid Cerebral Palsy: Athetoid বা Dyskinetic Cerebral Palasy হল মূলত পেশি সংক্রান্ত অক্ষমতা। এই সমস্যা আক্রান্ত শিশুরা মস্তিষ্কের গঠনজনিত অসম্পূর্ণতার কারণে কোনোরকম দৈহিক দৃঢ়তা দেখাতে পারে না। নিজের পায়ে দাঁড়ানো বা হাঁটতে পারা তো দূরের কথা এমনকি এই শিশুরা সোজা হয়ে বসতেও পারে না। নিজের হাতে শক্ত কোনো জিনিস তুলে ধরা এদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে 10% শিশু এই প্রকারের দেখা যায়।

ঘ) Mixed Cerebral Palsy: কোনো কোনো সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত শিশুর মধ্যে উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলির সবগুলি একসাথে দেখা যায়। ফলে সেরিব্রাল পালসির বিভিন্ন প্রকাররের মধ্যে এটি হল সর্বাপেক্ষা জটিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা তাদের জীবদ্দশায় এর হাত থেকে মুক্ত হতে পারে না।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x