হিসাববিজ্ঞান

সঞ্চয় কাকে বলে? সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা, সঞ্চয়ের প্রকারভেদ

1 min read

সঞ্চয় কাকে বলে?

আয়ের মধ্যে ব্যয় সীমাবদ্ধ রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য কিছু অর্থ তুলে রাখার নামই সঞ্চয়। অর্থাৎ ভবিষ্যতের কিছু প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ করার জন্য বর্তমান আয় থেকে কিছুটা তুলে রাখা।

অর্থাৎ আয় – বর্তমান ভোগব্যয় = সঞ্চয়

মোট কথা, সঞ্চয় বলতে বোঝায় বর্তমান ভোগের পরিমিতবোধ ও ভবিষ্যতের ভোগের জন্য সংযম। এই সঞ্চয় মানুষের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা বিধান করে। সঞ্চয় পরিবারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটায় ও বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ও ব্যয় কমাতে সাহায্য করে।

সঞ্চয়ের মূল প্রয়োজনীয়তা হল ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভবিষ্যতের যেকোনো অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঞ্চয় এর কোন বিকল্প নেই। সঞ্চয় পারিবারিক ও জাতীয় জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলে।

নিম্নে সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

আয়ের এর উৎস হিসেবে কাজ করেঃ ব্যাংক, সঞ্চয় ব্যুরো, জিপি ফান্ডে সঞ্চিত অর্থ আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে। এসব মাধ্যমে সঞ্জিত টাকার ওপর নির্ধারিত হারে বাৎসরিক ও মাসিক মুনাফা পাওয়া যায়। এই টাকা পরিবারের বাড়তি ব্যয়ে লাগানো যায়। আবার এই সঞ্চিত অর্থ যে কোন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বিনিয়োগ করে বিকল্প আয়ের ব্যাবস্থা করা যায়।

বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক নিশ্চয়তা বিধানঃ সারাজীবন আয় করার ক্ষমতা কোন মানুষেরই থাকে না। পরিপূর্ণ কর্মজীবনের সঞ্চিত অর্থ বৃদ্ধি বয়সের কর্মহীন সময়ের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, নিরাপত্তা বিধান করতে পারে। অবসর গ্রহণের পর মেয়ের বিবাহ, সন্তানের পড়াশুনা চালানোর খরচ যোগান সঞ্চয়ই হাতিয়ার হতে পারে। বৃদ্ধ বয়সে পরিবারে যদি আয় রোজগারের উপযুক্ত কেউ না থাকে তখন সঞ্চয়ই পারে পরিবারের আর্থিক সংকট মোকাবেলা করতে। সঞ্চয় বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক অস্বচ্ছলতা, অনিশ্চয়তা দূরীকরণের ঢালস্বরূপ।

স্বাস্থ্যগত অক্ষমতার সময় সহায়কঃ শারীরিক অসুস্থতার সময় সঞ্চয় সহায়করূপে কাজ করে। পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতার জন্য অনেক সময় বড় ধরনের অর্থের প্রয়োজন হয়। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যদি দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতায় বিনা বেতনে ছুটিতে থাকে তখন সঞ্চয়ই আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে।

বিপর্যয় ও দুর্দিনের সহায়কঃ পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির হঠাৎ মৃত্যু, ব্যবসায় লোকসান, চাকরিগত জটিলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি অবস্থা মানুষের জীবনে বিপর্যয় ও দুর্দিন নিয়ে আসে। এই বিপর্যয় বা দুর্দিনে একমাত্র সঞ্চয়ই মানুষের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা বিধান করে মানসিক চাপ থেকে বাঁচাতে পারে।

উচ্চশিক্ষা, বিবাহ ও পারিবারিক অন্যান্য ব্যয়ের সহায়কঃ ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান ব্যয় সাপেক্ষে বিষয়। বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় উচু পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন হয়। সন্তানের বিয়ে, অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রয়োজন। সঞ্চিত অর্থ এক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে।

গৃহ নির্মাণ, গৃহসামগ্রী ক্রয়ঃ জমি ক্রয় ও বাসগৃহ নির্মাণ পরিবারের একটি স্বপ্ন। কিন্তু এজন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। সঞ্চয়ের মাধ্যমে জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণে অর্থের কিছুটা যোগান দেওয়া সম্ভব হলে আর্থিক ও মানসিক নিশ্চয়তা লাভ করা যায়। এছাড়া বাড়ি নির্মাণের জন্য ব্যাংক ঋণ গ্রহণের আমানত জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে সঞ্চিত অর্থের ডকুমেন্ট আমানত হিসেবে কাজ করে। যুগপোযোগী আসবাবপত্র, আধুনিক সাজসরঞ্জাম পরিবারের জীবনযাত্রাকে সমৃদ্ধ করে, সমাজে মর্যাদা বাড়ায় এবং জীবনযাত্রাকে সাবলীল করে। স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা কেবলমাত্র সঞ্চয় দিয়েই তাদের এই প্রয়োজন মেটাতে পারে।

মিতব্যয়ের অভ্যাগ গড়ার জন্যঃ নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস মানুষকে মিতব্যয়ী করে গড়ে তোলে। এর ফলে অপচয় রোধ হয় এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় থাকে। এছাড়া বাবা মায়ের সুঅভ্যাস সন্তানদের প্রভাবিত করে এবং তারাও অর্থের সঠিক ব্যবহার করতে শেখে। এই সুঅভ্যাস আয়ের উৎস হয়ে ওঠে।

জাতীয় মূলধন বৃদ্ধি করার জন্যঃ জাতীয় মূলধনের উৎস হল পারিবারিক সঞ্চয়। বিভিন্ন পরিবারের সঞ্চয় পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। কেননা ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ হতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ, কলকারখানা নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঋণ প্রদান করে জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা চলে।

সঞ্চয়ের প্রকারভেদ

সঞ্চয়কে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –

ক) বাধ্যতামূলক সঞ্চয় এবং

খ) স্বেচ্ছামূলক সঞ্চয়।

ক) বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ঃ বাধ্যতামূলক সঞ্চয় নিয়োগকারী সংস্থার নিয়ন্ত্রণে করা হয়। যেমন – প্রভিডেন্ট ফান্ড। সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে আজকাল কর্মচারিদের সঞ্চয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক সঞ্চয় হলো – ভবিষ্যত তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ড, অবসরভাতা বা পেনসন, কর্মচারি কল্যাণ তহবিল এবং গ্রেচুইটি।

খ) স্বেচ্ছামূলক সঞ্চয়ঃ স্বেচ্ছামূলক সঞ্চয়ের অনেক মাধ্যম রয়েছে। পরিবারে এই উপায় বা মাধ্যম নিজেদের পছন্দমত নির্বাচন করে। এ ধরনের সঞ্চয়ের মাধ্যমগুলো নিম্নরূপ –

  • ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়
  • ডাকঘর
  • বীমাস্কিম
  • জাতীয় সঞ্চয়পত্র
  • ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক
  • ডাক জীবন বীমা
  • বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড
  • ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড
Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x