মনোবিজ্ঞান

শিক্ষা মনোবিদ্যা কাকে বলে? শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক, শিক্ষা মনোবিদ্যার প্রাথমিক উপাদান, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা

1 min read

শিক্ষা মনোবিদ্যা কাকে বলে?

শিক্ষা মনোবিজ্ঞান কাকে বলে?

ফলিত মনোবিদ্যার যে শাখা শিক্ষা প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করতে এবং উন্নত করতে আলোচনা করে তাকে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান বলে। মানুষের শিক্ষা সংক্রান্ত আচরণের বিজ্ঞানই হলো শিক্ষা মনোবিজ্ঞান। মনোবিজ্ঞানের এই শাখায় মানুষের শিক্ষা সম্পর্কিত আচরণের বিভিন্ন সমস্যার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয় এবং এগুলির সমাধানে মনোবিজ্ঞানের মূলনীতিসমূহ কিভাবে প্রয়োগ করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত মানুষের সব ধরনের আচরণই শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত।

মনোবিদ স্কিনার এর মতে, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান হলো মনোবিজ্ঞানের শাখা যা শিক্ষা ও শিখন নিয়ে কাজ করে।

কোলেসনিক এর মতে, মনোবিজ্ঞানের যেসব তত্ত্ব ও নীতি শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে এবং উন্নত করতে সাহায্য করে, তাদের অনুশীলন হলো শিক্ষামনোবিদ্যা।

প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলই প্রথম মনোবিজ্ঞানকে পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দেন। গ্রিক ভাষায় Psyche শব্দের অর্থ আত্মা এবং logos শব্দের অর্থ বিশেষ জ্ঞান। তাই Phyche ও Logos এই দুটি শব্দের মিলনের উদ্ভবে Psychology বা মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা হলো আত্মার বিজ্ঞান।

শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক

শিক্ষার সাথে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। শিক্ষা হলো নতুন জ্ঞান ও আচরণের আয়ত্তীকরণ। মনোবিজ্ঞান হলো আচরণের প্রকৃতি, গতি ও সংগঠনের বিশ্লেষণ ও সংব্যাখ্যান। শিক্ষার বিষয়বস্তু হলো কেমন করে নতুন আচরণ সম্পাদনা করা যায় তা দেখা আর মনোবিজ্ঞানের কাজ হলো সেই আচরণটির প্রকৃতি কী এবং কিভাবে ঘটে তা দেখা। অতএব, সার্থক শিক্ষার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের সাহায্য অপরিহার্যই।

তাছাড়া শিক্ষা নির্ভর করে শিখন প্রক্রিয়ার উপর এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়া মনোবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। কোন কিছুর শিখন ছাড়া শিক্ষা হয় না। আর সে শিখন হতে পারে দু-রকম বস্তুর। যথাঃ জ্ঞান ও দক্ষতা। এই দু-রকম শিখনই নির্ভর করে প্রাণীর মানসিক শক্তির উপর যা মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অলোচনার বিষয়বস্তু। প্রাণী শিখতে পারে, অথচ জড়বস্তু পারে না। তার একমাত্র কারণ প্রাণীর শিখন ক্ষমতা আছে কিন্তু জড়বস্তুর তা আদৌ নেই। শিখনের মাত্রা, উৎকর্ষ ও কার্যকারিতা সবই নির্ভর করে এই মানসিক শক্তির প্রকৃতি ও গঠনের উপর। এই মানসিক শক্তির স্বরূপ বা কর্মদক্ষতা জানতে হলো মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে অবশ্য প্রয়োজন। তাছাড়া শিখন বিশেষভাবে মনোবিজ্ঞানের আলোচিত প্রত্যক্ষণ, চিন্তন, মনে রাখা ইত্যাদি মানসিক প্রক্রিয়াগুলোর উপর নির্ভরশীল। এগুলি কীভাবে সংগঠিত হয় এবং এগুলির বৈশিষ্ট্য কী তা জানা সার্থক শিখনের জন্য একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীর কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেও শিখন নিবিড়ভাবে জড়িত। যেমন: মনোবিজ্ঞানে আলোচিত প্রবৃত্তি, প্রক্ষোত, আগ্রহ, মনোভাব ইত্যাদি মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলিও শিক্ষার্থীর শিক্ষাকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। অতএব এগুলি সম্পর্কেও শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীকে তার বিভিন্ন শক্তি, চাহিদা, অভিরুচি, আগ্রহ এসমস্ত নিয়ে সমগ্রভাবে জানতে হবে।

এক কথায় শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানকে প্রয়োগ করতে হবে।

এই সকল কারণে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই শিক্ষাবিদেরা শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, শিক্ষার উৎকর্ষ, কার্যকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য মনোবিজ্ঞানের তত্ত্বগুলি শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োগ শুরু করলেন। তাঁদের এই প্রচেষ্টা থেকে জন্ম নিল মনোবিজ্ঞানের নতুন একটি শাখা। এরই নাম শিক্ষা-মনোবিজ্ঞান অর্থাৎ শিক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে যে মনোবিজ্ঞান।

অতএব, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান বলতে আমরা বুঝি সেই বিজ্ঞানকে য সাধারণ মনোবিজ্ঞানের তথ্য ও তত্ত্বগুলিকে শিক্ষার বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলিকে বিশদভাবে বোধগম্য করে তুলতে ও শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যাবলীর সমাধানসূত্র দিতে নিজেকে নিয়োজিত করে এবং শুধু তাই নয় গবেষণা ও পরীক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নতুন নতুন তথ্য ও উদ্ভাবন করে ভবিষ্যত সমস্যার সমাধানের পথ উন্মুক্ত করে। তাই বলা হয় শিক্ষা মনোবিজ্ঞান প্রয়োজনমূলক ও ব্যবহারিক মূল্যসম্পন্ন মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা।

শিক্ষা মনোবিদ্যার প্রাথমিক উপাদান

শিক্ষা মনোবিদ্যার প্রাথমিক উপাদানগুলো হলো –

  • শিক্ষার্থীর আগ্রহ,
  • শিক্ষার্থীর চাহিদা,
  • মানসিক ক্ষমতা এবং
  • শিক্ষার্থীর প্রবণতা।

শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা

শিক্ষা মনোবিজ্ঞান

১) মানুষের শিক্ষাকালীন আচরণের অধ্যয়ন।

২) পরিধি অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ, শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

৩) শিক্ষার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষিত সূত্রগুলিকে ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন করে।

৪) শিক্ষাকালীন আচরণ বিশ্লেষণ এবং তার ভালোমন্দ বিবেচনা করে। এটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

৫) শিক্ষা মনোবিদ্যা হলো মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা।

মনোবিজ্ঞান

১) মানুষের সব আচরণের অধ্যয়ন।

২) মনোবিজ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত।

৩) মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে এই প্রক্রিয়ার গতিপ্রকৃতি অধ্যয়ন ব্যবহারের মাধ্যমে করে এবং নানা সূত্র আবিষ্কার করে।

৪) আচরণকে বিশ্লেষণ করে কিন্তু তার ভালোমন্দ বিবেচনা করে না। অর্থাৎ এটি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান।

৫) জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা হলো মনোবিজ্ঞান।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x