খনিজ কি খনিজ বলতে সাধারণত মাটির অজৈব অংশকে বুঝায়। কতকগুলো মৌলিক পদার্থ প্রাকৃতিক উপায়ে একত্রে মিলিত হয়ে যে যৌগিক পদার্থ তৈরি করে তাকে খনিজ বলে। আর এটাকে সাধারণত তার বর্ণ, কাঠিন্য, আপেক্ষিক গুরুত্ব, রাসায়নিক সংযুতি, ফাটল, দ্যুতি প্রভৃতি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও রাসায়নিক গঠনের সাহায্যে শনাক্ত করা যায়। স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট এবং কেলাসিত এমন একটি সমসত্ত্বের অজৈব পদার্থ যার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক মিশ্রণ এবং একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পারমাণবিক গঠন থাকে তাকে খনিজ (Minerals) বলে। ভূপৃষ্ঠে প্রায় দেড় হাজার প্রকারের খনিজ পদার্থ রয়েছে। খনিজ হলো স্বাভাবিকভাবে একটি অজৈব পদার্থ, যা একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুক্তি ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পারমাণবিক গঠনে সমৃদ্ধ। প্রকৃতপক্ষে খনিজকে নির্দিষ্ট রাসায়নিক গুণসম্পন্ন একটি সমমাত্রিক অজৈব বলা হয়। ভূপৃষ্ঠে প্রায় ১,৫০০ ধরনের খনিজ পদার্থ রয়েছে। খনিজ কাকে বলে “Minerals are naturally occurring substances having a definite chemical composition and atomic structure and formed by inorganic processes.” প্রখ্যাত ভূগোলবিদ এ. এন. স্ট্রেহলার (A.N.Strahler) এর মতে, “খনিজ হলো স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট এমন একটি অজৈব পদার্থ যার সাধারণত নির্দিষ্ট এ একটি রাসায়নিক মিশ্রণ এ বৈশিষ্ট্য পূর্ণ পারমাণবিক গঠন থাকে।” ‘ভুবনকোষ’ এ বলা হয়েছে, “প্রাকৃতিকভাবে অজৈব প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট নির্দিষ্ট আণবিক গঠন ও রাসায়নিক সংস্থিতিসম্পন্ন কার্বন রস্তুকে খনিজ বলে।” খনিজের বৈশিষ্ট্য নিম্নে খনিজের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো। ১. কাঠিন্যতা : কাঠিন্যতা বলতে বুঝায় খনিজের গায়ের আঁচড় বা দাগ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে। এটি খনিজ পদার্থের একটি আপেক্ষিক ধর্ম। কাঠিন্যতা জানা খনিজের সাথে ঘর্ষণের মাধ্যমে অজানা খনিজের কাঠিন্যতা জানা যায়। ২. গঠন : কোনো কোনো খনিজ কেবল একটিমাত্র মৌলিক উপাদানের দ্বারা গঠিত। যেমন- সোনা, হীরা, রুপা, তামা প্রভৃতি। ৩. সংকেত : খনিজের নির্দিষ্ট সংস্থিতি ও সংকেত রয়েছে। ৪. ক্ষয়প্রাপ্তি : খনিজ অতি সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। ৫. ধর্ম : প্রত্যেক খনিজেই নিজস্ব কিছু ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম বিদ্যমান। খনিজ সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব খনিজ একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি যেমন- ভূত্বকের শিলা গঠন করে, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিম্নে খনিজ সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করা হলো। ১. শিল্পোন্নয়ন : খনিজ সম্পদ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য কাঁচামালের যোগান দিয়ে খনিজ সম্পদ শিল্পোন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করে। ২. জ্বালানির উৎস : খনিজ সম্পদ যেকোনো দেশের অর্থনীতির ভিত্তিম্বরূপ। খনিজ সম্পদ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কয়লা তাপ উৎপাদনে, খনিজ তেল যানবাহন ও জেনারেটর চালাতে ব্যবহৃত হয়। আবার ভারী খনিজ যেমন- রেডিয়াম, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি পারমাণবিক চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৩. ব্যবহারিক ও নির্মাণ কার্যে : বিভিন্ন অলংকার নির্মাণে খনিজ সম্পদ ব্যবহৃত হয়। এছাড়া পুল, রাস্তাঘাট, রেললাইন ইত্যাদি নির্মাণে এবং সাবান, সিমেন্ট, কাগজ প্রভৃতি প্রস্তুতিতে খনিজের প্রয়োজন। ৪. কর্মসংস্থান : খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য বহু দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। যে দেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ সে দেশের মানুষের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। ৫. বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হ্রাস : দেশ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ থাকলে বিদেশ হতে তা আমদানি করতে হয় না। ফলে দেশ বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় থেকে রক্ষা পায়। ৬. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : দেশে পর্যাপ্ত খনিজ সম্পদ থাকলে তা নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যায়। এতে বাণিজ্যের প্রসার বৃদ্ধি পায় এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বের অর্থনীতিতে খনিজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে খনিজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র খুব অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। মূলত খনিজ সম্পদই যেকোনো রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।