মাইটোকন্ড্রিয়া কাকে বলে? মাইটোকন্ড্রিয়ন কাকে বলে?
কোষ বিভাজনের সময় সৃষ্ট স্পিন্ডল বা মাকুর কাছাকাছি অথবা সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছড়ানো দ্বিস্তরী পর্দাবেষ্টিত, দন্ডাকার, গোলাকার, বৃত্ত অথবা তারকাকৃতি বদ্ধ থলির মতো শক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত সজীব বস্তুগুলোকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলা হয়।
মাইটোকন্ড্রিয়াকে একবচনে মাইটোকন্ড্রিয়ন বলা হয়।
কলিকার ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে আলোক অণুবীক্ষণের সাহায্যে সাইটোপ্লাজমে নানা আকৃতির এসব ক্ষুদ্রাঙ্গ আবিষ্কার করেন।
১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে কার্ল বেন্ডা এ ক্ষুদ্রাঙ্গগুলোকে ‘মাইটোকন্ড্রিয়া’ নামকরণ করেন।
মাইটোকন্ড্রিয়া দুই স্তরবিশিষ্ট আবরণী বা ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা। ভিতরের স্তরটি ভিতরের দিকে ভাঁজ হয়ে থাকে। এদের ক্রিস্টি বলে।
ক্রিস্টির গায়ে বৃন্তযুক্ত গোলাকার বস্তু থাকে, এদের অক্সিজোম বলে। অক্সিজোমে উৎসেচকগুলো সাজানো থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়নের ভিতরে থাকে ম্যাটিক্স। জীবের শ্বসনকার্যে সাহায্য করা মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ।
যে শ্বসন ক্রিয়ার ধাপ চারটি; গ্লাইকোলাইসিস, অ্যাসিটাইল কো-এ সৃষ্টি, ক্রেবস চক্র এবং ইলেকট্রন প্রবাহ তন্ত্র। এর প্রথম ধাপ (গ্লাইকোলাইসিসের বিক্রিয়াগুলো) মাইটোকন্ড্রিয়া ঘটে না। তবে দ্বিতীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ক্রেবস চক্রের বিক্রিয়াগুলো এই অঙ্গাণুর মধ্যেই সম্পন্ন হয়। ক্রেবস চক্রে অংশগ্রহণকারী সব উৎসেচক এতে উপস্থিত থাকায় এ বিক্রিয়াগুলো মাইটোকন্ড্রিয়াতেই সম্পন্ন হয়।
ক্রেবস চক্রে সবচেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদিত হয়। এ জন্য মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বা পাওয়ার হাউস বলা হয়। এই শক্তি জীব তার বিভিন্ন কাজে খরচ করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সকল উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষে মাইটোকন্ড্রিয়া পাওয়া যায়।
প্রাককেন্দ্রিক কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া থাকে না। এমনকি কিছু সুকেন্দ্রিক কোষেও (যেমনঃ Trichomonas, Monocercomonoides ইত্যাদি প্রোটোজোয়াতে) মাইটোকন্ড্রিয়া অনুপস্থিত। তাহলে এমন কি হতে পারে যে বিবর্তনীয় ইতিহাসের কোনো এক সময়ে সুকেন্দ্রিক কোষের ভিতর মাইটোকন্ড্রিয়া (কিংবা তার পূর্বসূরী) ঢুকে পড়েছিল এবং তারপর থেকে সেটি কোষের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেছে? এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে এই ব্যাখ্যাটিই অনুমান করা হয়।