রাষ্ট্রবিজ্ঞান

সাম্য বলতে কী বোঝ?

1 min read

সাম্য বলতে কী বোঝ?

সাধারণভাবে সাম্য বলতে বোঝায় সকল মানুষই সমান। তাই প্রতিটি মানুষ অন্যের ন্যায় সমান অধিকার, সমান সুযোগ সুবিধা ও স্বাধীনতা ভোগের অধিকারী। কিন্তু বাস্তবে সকল মানুষ সমান হতে পারে না। শক্তি, সামর্থ্য, বুদ্ধি ইত্যাদির দিক থেকে মানুষে মানুষে পার্থক্য থাকবেই। সুতরাং সাম্য বলতে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সকলের অভিন্নতা বোঝাতে পারে না। অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেছেন, মানুষের যোগ্যতা, অভাব ও প্রয়োজনের মধ্যে যতদিন পার্থক্য থাকবে ততদিন পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে ব্যবহারের সমতা থাকতে পারে না। সুতরাং সাম্য বলতে কখনই ব্যবহারের অভিন্নতাকে বোঝায় না। ল্যাস্কি বলেছেন, সমাজ যদি একজন গণিতজ্ঞ এবং একজন রাজমিস্ত্রিকে সমান মর্যাদা বা স্বীকৃতি দান করে তাহলে সমাজের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। মানুষ মানুষে যোগ্যতা ও কর্মশক্তির ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে বলে প্রত্যেক রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমান সুযোগ-সুবিধা বা ব্যবহার দাবি করতে পারে না।

অধ্যাপক লাস্কির মতে, “সাম্য বলতে প্রাথমিকভাবে বোঝায় বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি”। এর অর্থ হলো, সমাজের কোনো লোক বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। রাষ্ট্রের কাছে বা আইনের চোখে সকলেই সমান।

 

আবার ইতিবাচক অর্থে সাম্য বলতে বোঝায় সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বলতে সমান সুযোগ-সুবিধা বোঝায় না, বোঝায় এমন একটি পরিবেশকে যেখানে প্রত্যেকে তার প্রতিভা ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটাতে পারবে।

অধ্যাপক বার্কার এর মতে, সমতার অর্থ হলো প্রত্যেক ব্যক্তি তার দক্ষতা প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্য সকলের মত সমান সুযোগের অধিকারী। অর্থাৎ সুযোগ পাবার ক্ষেত্রে সকলেই সমান, কিন্তু সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে যদি কেউ পিছিয়ে যায় তখন রাষ্ট্রের কিছু করার নেই। বার্কারের মতে, সাম্য হল শুরু, শেষ নয়, শেষ নির্ভর করছে ব্যক্তিবিশেষের ওপর।

 

ল্যাস্কির মতে, সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে সম্পদের ক্ষেত্রে সমতা প্রয়োজন, কারণ যেখানে সম্পদের ক্ষেত্রে প্রকট বৈষম্য বিদ্যমান, সেখানে সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকতে বাধ্য। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, ল্যাস্কির মতে, মানুষের অত্যাবশ্যক প্রয়োজন পূরণের বিষয় পর্যন্ত সাম্যনীতি গ্রহণযোগ্য, তারপর আর তাকে গ্রহণ করা যায় না, কারণ সকল ব্যক্তির কাজ করার উদ্যম ও যোগ্যতা সমান থাকে না। মার্কসবাদীদের মতে, প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টির যেটি মূল কারণ (ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও শোষণ) সেটিকে  উৎখাত করতে হবে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x