যে বিবরণীতে ব্যবসায়ের সকল হিসাবকে ডেবিট এর গুলো ডেবিট ও ক্রেডিট এর উদ্ধৃত গুলো ক্রেডিট এর কলামে অন্তর্ভুক্ত করে উভয় পাশের টাকা সমান আছে কিনা তা যাচাই করা হয়, তাকেই রেওয়ামিল বলে।
রেওয়ামিল হিসাব চক্রের কোন ব্যাধ্যতা মুলক নয়৷ এটা শুধু হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট পাশের যোগফলের সমতা যাচাই করার মাধ্যম। এই সমতা যাচাই করা ছাড়া রেওয়ামিল হিসাব বিজ্ঞানে আর কোন ভুমিকা পালন করে না৷
রেওয়ামিলে হিসাবের শুদ্ধতা কিভাবে যাচাই করে।
দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতির নিয়ম অনুসারে প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষ(ডেবিট, ক্রেডিট) হয়। আর তখন প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট আর ক্রেডিট এ একই পরিমান টাকা লিপিবদ্ধ হয়। তাই খতিয়ান করার পর সকল হিসাবকে ডেবিট ও ক্রেডিট পক্ষে লিপিবদ্ধ করে, তা সমান আছে কিনা যাচাই করা হয়। যদি ডেবিট ও ক্রেডিট পক্ষের টাকার পরিমান সমান হয়, তাহলে হিসাব চক্রের এর আগের ধাপগুলো নির্ভুল আছে। আর যদি সমান না হয়, তাহলে কোন ভুল আছে। এভাবে রেওয়ামিলের মাধ্যমে সহজে সমতা যাচায় করা হয়।
রেওয়ামিলের বৈশিষ্ট্য
- রেওয়ামিল কোন হিসাব বা হিসাবের অংশ নয়, এটি শুধুই বিবরণী
- রেওয়ামিলে ডেবিট ও ক্রেডিট দুটি টাকার ঘর থাকে, খতিয়ানের ডেবিট উদ্ধৃত গুলো ডেবিট ঘরে আর খতিয়ানের ক্রেডিট উদ্ধৃত গুলো ক্রেডিট ঘরে বসবে।
- এর জন্য কোন হিসাবের বই ব্যবহার করা হয় না। বরং আলাদা কাগজে করে থাকে।
- এটি সাধারণত হিসাবকালের শেষ তারিখে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের পূর্বে করা হয়।
- রেওয়ামিলে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা হয়।
- রেওয়ামিলে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতে সহয়তা করে।
রেওয়ামিলের ধারণা :
খতিয়ান হিসাবগুলোর ডেবিট ও ক্রেডিট উদ্বৃত্ত নিয়ে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে যে তালিকা বা বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাকে রেওয়ামিল বলে । ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লেনদেন সংঘটিত হলে দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট পক্ষ বিশ্লেষণ করে তারিখের ক্রমানুসারে প্রথমে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় । জাবেদা প্রস্তুত করার পরে হিসাবের প্রধান বই খতিয়ানে লেনদেনগুলোকে শ্রেণিবিন্যাস করে পৃথক পৃথক শিরোনামে স্থায়ী বা পাকাভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় । পরবর্তিতে খতিয়ানগুলোর জের নিয়ে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয় । রেওয়ামিল -এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Trial Balance ।
রেওয়ামিল তৈরির মূখ্য উদ্দেশ্য :
রেওয়ামিল তৈরির মূখ্য উদ্দেশ্য হল হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই ।
রেওয়ামিল তৈরি করার সময় :
রেওয়ামিল তৈরি করা হয় খতিয়ান তৈরির পরে ও আর্থিক বিবরণী তৈরির আগে ।
হিসাবচক্রে রেওয়ামিলের অবস্থান :
রেওয়ামিল হিসাবচক্রের পঞ্চম ধাপ ।
রেওয়ামিলের নমুনা ছক :
রেওয়ামিল হিসাবের কোন অংশ না হওয়ার কারণে -এর স্বীকৃত কোন ছক নেই । IASC (International Accounting Standard Committee) রেওয়ামিলের সুনির্দিষ্ট কোন ছক প্রদান করেনি । তবে নিম্নের ছকটিই বহুলভাবে ব্যবহৃত ।
রেওয়ামিলের ছকে ঘর সংখ্যা :
রেওয়ামিলের ছকে ঘরের সংখ্যা মোট ৫ টি।
রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ
যে হিসাবগুলো রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে :
- যাবতীয় সম্পদ রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে । যেমন : নগদ তহবিল, প্রাপ্য বিল, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ।
- যাবতীয় খরচ ও ক্ষতি রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে । যেমন: বেতন, মজুরি, শুল্ক, কুঋণ, বিবিধ ক্ষতি প্রভৃতি ।
- যাবতীয় অগ্রিম খরচ, সম্পত্তি হিসেবে রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে । যেমন : অগ্রিম বেতন, অগ্রিম মজুরি, অগ্রিম ভাড়া প্রভৃতি ।
- দায় হতে উদ্ভূত সুদ অর্থাৎ ক্রেডিট জেরের সুদ, খরচ হিসেবে রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে । যেমন :
-
- মূলধনের সুদ রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে (যেহেতু মুলধন হিসাব ক্রেডিট_দায় হিসাব),
- ঋণের সুদ রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে (যেহেতু ঋণ হিসাব ক্রেডিট_দায় হিসাব),
- ব্যাংক জমাতিরিক্তের সুদ রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে (যেহেতু ব্যাংক জমাতিরিক্ত হিসাব ক্রেডিট_দায় হিসাব) ।
-
- ফেরত সংক্রান্ত হিসাব -এর সংশ্লিষ্ট হিসাবের বিপরীত দিকে বসবে । যেমন : বিক্রয় ফেরত হিসাব রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে (যেহেতু বিক্রয় হিসাব ক্রেডিট) ।
- দায়ের উপর সৃষ্ট সঞ্চিতি রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে । যেমন :
- পাওনাদার বাট্টা সঞ্চিতি রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে (যেহেতু পাওনাদার হিসাব ক্রেডিট_দায় হিসাব)
- প্রদেয় বিলের বাট্টা সঞ্চিতি রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে (যেহেতু প্রদেয় বিল হিসাব ক্রেডিট_দায় হিসাব)
- অনাদায়ী আয়/প্রাপ্য আয়/বকেয়া আয় সম্পত্তি হিসেবে রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে । যেমন : অনাদায়ী কমিশন, প্রাপ্য উপভাড়া, অনাদায়ী বিনিয়োগের সুদ প্রভৃতি ।
যে হিসাবগুলো রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে :
- যাবতীয় দায় রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে । যেমন : বিবিধ পাওনাদার, ব্যাংক জমাতিরিক্ত, ঋণ/গৃহীত ঋণ প্রভৃতি ।
- যাবতীয় আয় ও লাভ রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে । যেমন : বিক্রয়, বিনিয়োগের সুদ, প্রাপ্ত বাট্টা, ব্যাংক জমার সুদ প্রভৃতি ।
- যাবতীয় অগ্রিম আয়, দায় হিসেবে রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে । যেমন : অগ্রিম ভাড়া প্রাপ্তি, অগ্রিম সেবা আয়, অগ্রিম পরামর্শ ফি প্রভৃতি ।
- সম্পদ হতে উদ্ভূত সুদ অর্থাৎ ডেবিট জেরের সুদ, আয় হিসেবে রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে । যেমন :
- স্থায়ী আমানতের সুদ রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে (যেহেতু স্থায়ী আমানত হিসাব ডেবিট_সম্পদ হিসাব),
- বিনিয়োগের সুদ রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে (যেহেতু বিনিয়োগ হিসাব ডেবিট_সম্পদ হিসাব),
- সঞ্চয়পত্রের সুদ রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে (যেহেতু সঞ্চয়পত্র হিসাব ডেবিট_সম্পদ হিসাব) ।
- ফেরত সংক্রান্ত হিসাব -এর সংশ্লিষ্ট হিসাবের বিপরীত দিকে বসবে । যেমন : ক্রয় ফেরত হিসাব রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে (যেহেতু ক্রয় হিসাব ডেবিট)
- সম্পদের উপর সৃষ্ট সঞ্চিতি রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে । যেমন :
- দেনাদার বাট্টা সঞ্চিতি রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে (যেহেতু বিবিধ দেনাদার হিসাব ডেবিট_সম্পদ হিসাব),
- অনাদায়ি পাওনা সঞ্চিতি রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে (যেহেতু বিবিধ দেনাদার হিসাব ডেবিট_সম্পদ হিসাব),
- আসবাবত্রের পুঞ্জীভূত অবচয় রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে (যেহেতু আসবাবপত্র হিসাব ডেবিট_সম্পদ হিসাব) ।
- বকেয়া খরচ/অপ্রদত্ত খরচ, দায় হিসেবে রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে । যেমন : বকেয়া ভাড়া, বকেয়া বেতন, বকেয়া ঋণের সুদ প্রভৃতি ।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “রেওয়ামিল কাকে বলে বা রেওয়ামিল কি এর বৈশিষ্ট্য ও প্রস্তুত করণ” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।