মাইগ্রেন কি? মাইগ্রেন কেন হয়? মাইগ্রেনের লক্ষণ, মাইগ্রেনের চিকিৎসা
মাইগ্রেন কি? মাইগ্রেন কেন হয়?
মাইগ্রেন হলো একটি ভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা। মেয়েদের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে পুরুষেরও এ রোগ হতে পারে।
কেন মাইগ্রেন হয়?
মাথার ভেতরের রক্ত চলাচলের তারতম্যের কারণে মাইগ্রেন হয়। রক্ত চলাচল কমে গেলে হঠাৎ করে চোখে সব অন্ধকার দেখা যায় এবং পরে রক্ত চলাচল হঠাৎ বেড়ে গিয়ে প্রচণ্ড মাথাব্যথার অনুভূতি তৈরি হয়। চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম ইত্যাদির কারণে এ রোগ হতে পারে।
সাধারণ মাইগ্রেনের লক্ষণ
মাথাব্যথা, বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তি বোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে।
মাথার যেকোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়। পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। চোখের ওপর হালকা চাপ দিলে আরাম লাগে।
মাথার দুই পাশে কানের ওপর চাপ দিলে এবং মাথার চুল টানলেও ভালো লাগে। তখন শব্দ ও আলো ভালো লাগে না। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোয় মাথাব্যথা বেড়ে যায়।
ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনের লক্ষণ
এতে দৃষ্টিসমস্যা, যেমন- চোখে উজ্জ্বল আলোর অনুভূতি, হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিসীমানা সরু হয়ে আসা অথবা যেকোনো এক পাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে।
২০ মিনিট স্থায়ী এসব উপসর্গের পর বমির ভাব এবং মাথাব্যথা শুরু হয়, যা সাধারণত এক পাশে হয়। দৃষ্টির সমস্যা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়।
মস্তিষ্ক অথবা চোখে অন্য কোনো সমস্যার কারণে দৃষ্টির এ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। মাথাব্যথা ছাড়া শুধু দৃষ্টির সমস্যাও ক্লাসিক্যাল মাইগ্রেনের লক্ষণ হতে পারে।
মাইগ্রেন এড়াতে করণীয়
যা করতে হবে মাইগ্রেন থাকলে প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম দরকার। যেসব খাবার খেলে ব্যথা শুরু হতে পারে, যেমন – কফি, চকলেট, পনির, আইসক্রিম, মদ ইত্যাদি একদম বাদ দিতে হবে। বেশি সময় না খেয়ে থাকা যাবে না।
জন্মবিরতিকরণ ওষুধ যারা খায়, তাদের সেটা সেবন না করাই শ্রেয়। প্রয়োজনে অন্য পদ্ধতি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
পরিশ্রম, মানসিক চাপ ও দীর্ঘ ভ্রমণ বর্জনের মাধ্যমে মাইগ্রেন অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়।
চিকিৎসা
বারবার মাইগ্রেনের আক্রমণ কমানোর জন্য পিজোটিফেন, অ্যামিট্টিপটাইলিন, বিটাব্লকার-জাতীয় ওষুধ কার্যকর।
বমি ভাব কমানোর জন্য মেটোক্লোর প্রোমাইড, ডমপেরিডন-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ওষুধে মাথাব্যথা না কমলে সুমাট্টিপটান, আরগোটামাইন-জাতীয় ওষুধে অনেক সময় যথেষ্ট স্বস্তি পাওয়া যায়।
সবচেয়ে বড় কথা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই বারবার এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
মনে রাখবেন, সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়, দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ প্রভৃতি কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পাশাপাশি স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখাঃ ডা. এস এম সাজ্জাদ বিন লতিফ