রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। এরিষ্টটলকে ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

তিনি আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এ শাস্ত্রকে ‘Master Science’ বা সমস্তবিজ্ঞানের বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন। রাজনৈতিক জীবনকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থার সুষ্ঠু ও যথার্থ বিন্যাস, ভূমিকা এবং কার্যাবলীর উপরই নাগরিক জীবনের চাহিদার যথাযথ পূরণ ও বিকাশ নির্ভর করে।

একজন শিক্ষার্থী একজন নাগরিকও বটে। শিক্ষাজীবনের সমাপ্তির পর সমাজ জীবনের বৃহত্তর পরিবেশে যেখানেই সে তার স্থান করে নেয় না কেন রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য কিংবা রাষ্ট্রের নিকট তার অধিকারের প্রসঙ্গ জীবনজুড়ে থাকবেই। তাকে কোন না কোনভাবে এ সবের সাথে জড়িত থাকতেই হবে। এ পর্যায়ে রাষ্ট্র সম্পর্কিত পূর্বজ্ঞান পথ চলতে প্রভূত সহায়তা করবে। রাজনৈতিক জীব হিসেবে এ বিষয়ের জ্ঞান মানুষকে উন্নততর জীবনের সন্ধানও দিতে পারে।

 

সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্রিয়া ও আন্তক্রিয়ার সাথে পরিচিতি অর্জনের প্রবেশদ্বার হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রাজনৈতিক কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি প্রবণতা বা সামাজিকীকরণ রাষ্ট্রীয় জীবনের এক গুরুত্ব পূর্ণ উপাদান। রাজনৈতিক সচেতনতা বা রাজনীতির দীক্ষা গ্রহণে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সর্বদাই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর পারস্পরক্রিয়া কিভাবে

রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, বিধি প্রণয়ণ ও বাস্তবায়নে প্রভাব রাখে তা রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমেই জানা সম্ভব। সমাজ গতিশীল। সমাজে নিরন্তর পরিবর্তন ঘটে চলেছে। সর্বদা রাজনৈতিক জীবনে ঘটছে নানারকম কাঙ্খিত বা অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন। সাধারণ দৃষ্টিতে এ পরিবর্তন বা রদবদলের কারণ উপলদ্ধি করা গেলেও প্রকৃত ও অন্তর্নিহিত কারণ হয়তো তার চেয়ে অনেক দূরবর্তী বা গভীর। এ দূরবর্তী ও গভীর কারণকে জানতে গেলে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

একসময় রাষ্ট্রকে পুলিশী রাষ্ট্র (Police State) বলা হত। কালের পরিবর্তনে এ নামকরণ পরিবর্তিত হয়ে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে (Welfare state)। প্রশাসনের সেবা ও শাখা বিস্তৃত হতে থাকে সমাজ জীবনের সর্বত্র। ফলে রাষ্ট্র পরিচিত হল প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক রাষ্ট্র নামে। এ বিবর্তনের ধারাবাহিকতা ও স্বরূপ উপলদ্ধির স্বার্থে স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবার দাবী করতে পারে।