রাসায়নিক বিক্রিয়া কাকে বলে, উদাহারণ ও বৈশিষ্ট্য
রাসায়নিক বিক্রিয়া কাকে বলে?
রাসায়নিক বিক্রিয়া হচ্ছে এক ধরণের প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় এক বা একাধিক পদার্থ বা মৌল বা যৌগ বা বিক্রিয়ক, উপযুক্ত পরিবেশে পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে এক বা একাধিক অন্য নতুন পদার্থ বা মৌল বা যৌগ বা উৎপাদক তৈরী করে। রসায়ন বিজ্ঞানে, যে বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক উৎপাদকে রূপান্তরিত হয় তাকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার উদাহারণ
উদাহরণ-১ । এখানে, হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (O) দুটি মৌল এবং তারা একে অপরের সাথে বিক্রিয়া করে পানি (H2O) যৌগ তৈরি করে।
মৌল + মৌল = যৌগ
হাইড্রোজেন + অক্সিজেন = পানি
2H2 + O2 = 2H2O
উদাহরণ-২ । সোডিয়াম (Na) ও ক্লোরিন (Cl) মৌল দুইটি বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) লবন উৎপন্ন করে।
সোডিয়াম + ক্লোরিন = লবন (সোডিয়াম ক্লোরাইড)
Na2 + Cl2 = 2NaCl
উদাহরণ-৩ । কার্বন ডাই-অক্সাইড( CO2), পানি (H2O) ও সূর্যের আলোর উপস্থিতে চিনি (C6H12O6) গঠিত করে। এখানে, আলো হচ্ছে উপযুক্ত পরিবেশ।
যৌগ + যৌগ + প্রভাবক = যৌগ + মৌল
কার্বন ডাই-অক্সাইড + পানি + আলো = গ্লুকোজ (চিনি) + অক্সিজেন
6CO2 + 6H2O + Light = C6H12O6 + 6O2
বিক্রিয়ক কি?
যেসব মৌল বা যৌগ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নতুন মৌল বা যৌগ গঠন করে, তাদেরকে বিক্রিয়ক বলে। উদাহরণ-১ এ বিক্রিয়ক হচ্ছে হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (O), উদাহরণ-২ বিক্রিয়ক হচ্ছে সোডিয়াম (Na) ও ক্লোরিন (Cl), এবং উদাহরণ-৩ বিক্রিয়ক হচ্ছে কার্বন ডাই-অক্সাইড( CO2), পানি (H2O) ও সূর্যের আলো।
উৎপাদক কি?
বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক মিলিত হয়ে যেসব মৌল বা যৌগ উৎপাদন করে, তাদেরকে উৎপাদক বলে। উদাহরণ-১ উৎপাদক হচ্ছে পানি (H2O), উদাহরণ-২ উৎপাদক হচ্ছে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) লবন, এবং উদাহরণ-৩ উৎপাদক হচ্ছে (C6H12O6)।
রাসায়নিক বিক্রিয়া করার নিয়ম
১। উৎপাদক তৈরী করতে হলে যে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ককে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
যেমন, উদাহরণ-১ এ বিক্রিয়ক হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে উৎপাদক পানি তৈরী করে।
২। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক ও উৎপাদককে উপযুক্ত সংকেত বা প্রতীকের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে।
যেমন, উদাহরণ-১ এ বিক্রিয়ক ও উৎপাদককে চিহ্নিত রূপ দেওয়া হয়েছে। হাইড্রোজেনের প্রতীক H, অক্সিজেনের প্রতীক O এবং পানির প্রতীক H2O ।
৩। রাসায়নিক বিক্রিয়ার আগে ও পরে বিক্রিয়ক ও উৎপাদকের পরমাণু ও অনুর সংখ্যা সমান হতে হবে। একটি সফল রাসায়নিক বিক্রিয়ার অন্যতম উদাহারণ হচ্ছে রাসায়নিক বিক্রিয়ক ও উৎপাদক সাম্যবস্থার বজায় রাখবে।
যেমন, উদাহরণ-৩ এ অনু ও পরমাণুর সংখ্যা উভয়দিকে সমান রাখা হয়েছে।
৪। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় রাসায়নিক পরিবর্তন হবে। যেমন বিক্রিয়কের রঙের পরিবর্তন, বিক্রিয়ায় তাপ ও চাপের পরিবর্তন ইত্যাদি।
যেমন, উদাহরণ-৩ এ উদ্বায়ী কার্বন ডাই-অক্সাইড ও তরল পানি আলোর উপস্থিতিতে কঠিন পদার্থ চিনি তৈরি করেছে।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রধান চারটি বৈশিষ্ট্য
১। বিক্রিয়ক পদার্থ সমূহ পরস্পরের কাছাকাছি আসতে হবে।
২। গ্যাসের উদ্ভব হবে।
৩। তাপমাত্রার পরিবর্তন হবে।
৪। অবস্থার পরিবর্তন হবে।