ক্লোরোপিকরিন কি । ধর্ম । ব্যবহার । সংকেত

ক্লোরোপিকরিন কি?

ক্লোরোপিকরিন হচ্ছে এক ধরণের রাসায়নিক যৌগ যা ক্লোরোফর্ম ও নাইট্রিক এসিডের বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। ক্লোরোপিকরিন তরল বা পাউডার আকারে বাজার জাত করা হয়। এই যৌগটি কাঁদুনে গ্যাস বা টিয়ার গ্যাস নামে পরিচিত। ক্লোরোপিকরিনের বাজারজাত নামে ‘গ্যাস’ শব্দটি যুক্ত থাকলেও, এই যৌগটি গ্যাস জাতীয় পদার্থ নয়। ক্লোরোপিকরিন প্রয়োগে চোখে জ্বালার উপক্রম হয় বলে ক্লোরোপিকরিনকে কাঁদুনে গ্যাস বা ইংরেজীতে টিয়ার গ্যাস বলা হয়

ক্লোরোপিকরিনের রাসায়নিক গঠন

ক্লোরোপিকরিন কার্বন, ক্লোরিন, নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন মৌল নিয়ে গঠিত। তিনটি ক্লোরিন কার্বনের সাথে একক বন্ধন ও দুটি অক্সিজেন নাইট্রোজেনের সাথে দ্বিবন্ধন-এককবন্ধনে আবদ্ধ থাকে। ক্লোরোপিকরিনে ক্লোরো শব্দটি তিনটি ক্লোরিন ও পিকরিন শব্দটি নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড থেকে এসেছে । ক্লোরোপিকরিনের রাসায়নিক গঠন নিচে দেওয়া হল।

ক্লোরোপিকরিনের গাঠনিক সংকেত
ক্লোরোপিকরিনের গাঠনিক সংকেত

ক্লোরোপিকরিনের ধর্ম

১। ক্লোরোপিকরিন তরল অবস্থায় বর্ণহীন

২। আলোর উপস্থিতিতে ক্লোরোপিকরিন হালকা হলুদাভ বর্ণের হয়ে থাকে।

৩। ক্লোরোপিকরিনের নির্দিষ্ট কোন গন্ধ নেই।

৪। ক্লোরোপিকরিনের বেশিরভাগ উপাদান ক্ষারজাতীয় হওয়ায়, ক্লোরোপিকরিনকে ক্ষারজাতীয় রাসায়নিক যৌগ বলা হয়।

৫। -৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ক্লোরোপিকরিন কঠিন অবস্থার রূপ নেয়।

৬। ক্লোরোপিকরিন পানিতে অদ্রবণীয়। তবে, তাপমাত্রার বৃদ্ধির সাথে সাথে পানিতে এর দ্রবণীয়তা অল্প পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।

ক্লোরোপিকরিন তৈরির প্রক্রিয়া

রাসায়নবিদ স্টেন হাউজ সর্বপ্রথম পিকরিক এসিড আর ব্লিচিং পাউডারের ( সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট ) বিক্রিয়ায় ক্লোরোপিকরিন তৈরি করেন। স্টেন হাউজের ক্লোরোপিকরিন তৈরির পদ্ধতি ১০ টি ধাপে ছিল। নিচে মূল বিক্রিয়াটি দেওয়া হল।

C6H2OH(NO2)(পিকরিক এসিড) + 11 NaOCl (ব্লিচিং পাউডার) =  3 CCl3NO2 + 3 Na2CO3 + 3 NaOH + 2 NaCl

বর্তমানে ক্লোরোপিকরিন তৈরিতে এই প্রক্রিয়াটি মেনে চলা হয় না। কারন, এই প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ ছিল। ক্লোরোফম ও নাইট্রিক এসিডের মিশ্রনে তৈরি ক্লোরোপিকরিন বা কাঁদুনে গ্যাস যথেষ্ট আদর্শ হয়ে থাকে। নিচে ক্লোরোফর্ম  ও নাইট্রিক এসিড থেকে ক্লোরোপিকরিন তৈরির বিক্রিয়া দেখানো হল।

CHCl(ক্লোরোফর্ম) + HNO­3 (নাইট্রিক এসিড) = CCl3NO+ H2O

স্পেকট্রো ক্যামিকেল পদ্ধতির সাহায্যে ক্লোরোপিকরিনকে উপযুক্ত তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বিভাজিত করা যায়। ক্লোরোপিকরিনকে বিভাজন করলে কার্বনাইল ক্লোরাইড ও নাইট্রোসিল ক্লোরাইড তৈরি হয়।

CCl3NO2 (ক্লোরোপিকরিন) + তাপ = COCl (কার্বনাইল ক্লোরাইড) + NOCl (নাইট্রোসিল ক্লোরাইড)

ক্লোরোপিকরিনের ব্যবহার

১। চোখে প্রচণ্ড জ্বালা তৈরি করতে ক্লোরোপিকরিন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ( মানুষের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস বা  ক্লোরোপিকরিনের পাউডার ছোঁড়া হয়)

২। এই গ্যাস স্পেকট্রাম অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এ ব্যবহার করা হয়।

৩। ছত্রাকনাশক ও কীটনাশকে এই যৌগটি ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে, ১ লিটার পানিতে ১ মিলিগ্রাম ক্লোরোপিকরিন প্রয়োগ করা হয়।

৪। ক্লোরোপিকরিনের ধোঁয়া উদ্ভিদের বা চারার জীবাণু ধ্বংস করে।

ক্লোরোপিকরিন বা কাঁদুনে গ্যাসের ক্ষতিকর দিক

ক্লোরোপিকরিন ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট বা তার ঊর্ধ্বে প্রয়োগ করলে চোখের দৃষ্টি ক্ষমতা চলে যায় বা চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ক্লোরোপিকরিন শুধু চোখকে ক্ষতি করে না, ক্লোরোপিকরিন বাতাসে ছরিয়ে পড়লে মানবদেহের শ্বাসনালীর মাধ্যমে ডুকে শ্বাসতন্ত্রের কার্য ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। মানবদেহে ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, এমফিসেমা এবং ব্রঙ্কাইক্টেসিসও ক্লোরোপিকরিনের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়। মানবদেহ ০.০০৪৪ পি পি এম পরিমাণ ক্লোরোপিকরিন নিতে পারে। ০.১ পি পি এম পরিমাণ ক্লোরোপিকরিন ক্রনিক অবস্থার তৈরি করে।

কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

ক্লোরোপিকরিন এর রাসায়নিক নাম কি কি?

ক্লোরোপিকরিন এর রাসায়নিক নাম হচ্ছে ট্রাই-ক্লোরো নাইট্রো মিথেন ও নাইট্রো ক্লোরোফম ।

ক্লোরোপিকরিন এর সংকেত কি?

ক্লোরোপিকরিন এর সংকেত হচ্ছে CCl3NO2

কাঁদুনে গ্যাস হিসেবে ক্লোরোপিকরিন ছাড়া অন্য কোন যৌগটি ব্যবহার করা যায়?

ওলিওরেসিন ক্যাপসিয়াম বা পেপার স্প্রে

নাইট্রিক এসিড এর সংকেত কি?

নাইট্রিক এসিড এর সংকেত হচ্ছে HNO­3

ক্লোরোফর্ম এর সংকেত কি?

ক্লোরোফর্ম এর সংকেত হচ্ছে CHCl3

মানবদেহে ক্লোরোপিকরিনের মাত্রা কত?

০.০০৪৪ পি পি এম