সামাজিক বৈষম্য কি
সামাজিক বৈষম্য (Social Inequality) বলতে সমাজে বসবাসরত মানুষদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধাগত বৈপরীত্য কে বুঝায়, হোক সেটা, অর্থ,লিঙ্গ, অবস্থান বা অন্য যে কোন কারণে। সমাজের মানুষেরা নানান শ্রেণীতে বিভক্ত, এক শ্রেণী অন্য শ্রেণীর সাথে স্বার্থের দ্বন্দ্বে লিপ্ত। সমাজের এই স্বার্থদ্বন্দ্ব সমাজে বৈষম্যের সূচনা ঘটায়, একদল মানুষ সকল সুযোগ সুবিধায় একচেটিয়া আধিপত্যে মাতে, আরেকদল মানুষ নূন্যতম মানবিক সুযোগ, সুবিধা থেকেও বঞ্চিত থাকে। দ্বন্দ্ব তত্ত্ব বা conflict theory অনুযায়ী, সমাজ একটি দ্বন্দমূলক প্রতিষ্ঠান, এখানে নানা শ্রেণীর মানুষ পরস্পরের সাথে দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ। সমাজের কোন একটি দল যদি সুযোগ সুবিধা পেয়ে বসে তখন সে তার সেই সকল সুযোগ সুবিধা ধরে রাখার জন্য সকল প্রকার প্রচেষ্টা করে যায়, যার ফলে সুবিধা ভোগী এসব শ্রেণীর দ্বারা সুবিধাহীন মানুষ জন বৈষম্যের স্বীকার হয়, তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
সামাজিক বৈষম্য কত প্রকার ও কি কি
সমাজবিজ্ঞানের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সামাজিক বৈষম্য বিষয়টি রয়েছে, সামাজিক বৈষম্যের কারণ ও তার mechanism সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে। সমাজবিজ্ঞান সামাজিক বৈষম্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে। যেমন-
১. অর্থনৈতিক বৈষম্য (Economic Inequality)
সমাজের বিত্তশালীরা তাদের প্রভাব প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সম্পদকে বাড়িয়ে নিতে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের উপর নানা রকম শোষণ বঞ্চনা চাপিয়ে দেয়, যার ফলে সেই সব প্রান্তিক মানুষেরা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।
২.রাজনৈতিক বৈষম্য (Political Inequality)
ক্ষমতাশীলরা ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করতে হেন কাজ নেই যা করে না। তারা তাদের ক্ষমতাকে ধরে রাখবার জন্য তাদের ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দীদের উপর দমন-পীড়ন নীতি গ্রহণ করে থাকে।
৩. লিঙ্গ বৈষম্যে (Gender Inequity)
লিঙ্গ বৈষম্য সমাজের প্রধানতম একটি সমস্যা। লিঙ্গ বৈষম্য বলতে, লৈঙ্গিক পার্থকের জন্য কাউকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং সে যেন তার সম্ভাবনাগুলোর বিকাশ ঘটাতে না পারে তার জন্য নানান ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনগত নীতিমালা গ্রহণ করা। সাধারণ লিঙ্গ বৈষম্য দ্বারা আমরা নারীদের প্রতি অবিচার বা বৈষম্যকেই বুঝে থাকি, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে যে কেউ লিঙ্গ বৈষম্যের স্বীকার হতে পারে হোক সে নারী অথবা পুরুষ। এমনি Common Gender বা হিজরা জনগোষ্ঠীর প্রতি সমাজের মানুষদের যে বিরূপ মনোভাব এইটাও লিঙ্গ বৈষম্যের আওতাভুক্ত।
৪. বর্ণ বৈষম্য (Racial Discrimination)
Race বা বর্ণ হচ্ছে মানুষের একধরনের শারীরিক বৈশিষ্ট্য যা জিনগত কারণে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। পৃথিবীতে নানা বর্ণের মানুষ রয়েছে। বিজ্ঞান বর্ণের ভিত্তিতে মানুষকে ৫টি ভাগে ভাগ করেছে। যথা, Caucasoid বা ককেশিয়ান রেস, Mongoloids বা মঙ্গোলিয়ান রেস (চিন, জাপান, কোরিয়া, রেড ইন্ডিয়ান জাতিগোষ্ঠীর এর অন্তর্ভুক্ত), Negroid বা আফ্রিকান রেস, Khoisanoids or Capoids (বুশম্যান ও হটেনটট) এবং Pacific races (অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী, পলিনেশিয়ান, মেলানেশিয়ান এবং ইন্দোনেশিয়ান রেস)।
বর্ণবৈষম্য বলতে বুঝায় বর্ণগত কারণে কেউ নিজেকে শ্রেষ্ঠতম ভাবা এবং এটা মনে করা যে অন্যের উপর কর্তৃত্ব জারি করার অধিকার তার রয়েছে কেননা সে উঁচু বর্ণের মানুষ। যখন বর্ণগত কারণে কাউকে শ্রেষ্টতম এবং কাউকে নিম্নতম ভাবা হয় এবং শ্রেষ্ঠতম নিম্নতমের উপর কর্তৃত্ব খাটায় সেই অবস্থাকে বলা হয় বর্ণবৈষম্য।
৫. প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য (Institutionalized Inequality)
সামাজিক বৈষম্য প্রতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করে যখন সমাজের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বৈষম্য মূলক নীতি গ্রহন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য বলতে বুঝায়, যখন কোন ব্যাক্তি বা সম্প্রদায়, ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি বা অন্য যে কোন কারণে সামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে বৈষম্যমূলক আচরণ পায় বা বৈষম্যমূলক মনোভাব লক্ষ্য করে তখন সেইটাকে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য বলা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের ফলে কোন বিশেষ দল বা সম্প্রদায়ের মানুষ বঞ্চনার স্বীকার হয় এবং সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়।