সতন্ত্র বিষয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি বা উদ্ভবের পটভূমি
বিষয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের আবির্ভাবের ঘটনা একশত বছরের বেশি নয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে গোটা ইউরোপের Feudal system এর সমাপ্তি ঘটে এবং অর্থনীতি শিল্পকেন্দ্রিক হয়ে যায়। শিল্প বিপ্লবের ফলে সেখানকার সামাজিক পট পরিবর্তন খুব দ্রুততার সাথে ঘটতে থাকে কিন্তু মানুষ সেই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযুক্ত ছিলো না। ফলশ্রুতিতে নানা রকম সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পরে, বহুমুখী সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত ইউরোপীয় সমাজে শৃঙ্খলা ফেরাতে সমাজ ভাবুক মনিষীগণ সামাজিক বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখালিখি শুরু করেন এবং সমস্যার সমাধান দেবার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোৎ, খ্যাতনামা ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়ে একটি সতন্ত্র ডিসিপ্লিন উদ্ভাবনের কথা বলেন যা বিজ্ঞানের মতই সমাজকে empirically পর্যালোচনা করবে এবং সামাজিক নানান দিকের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করবে। প্রথমত, অগাস্ট কোৎ এই নতুন উদ্ভাবিত বিষয়টির নামকরণ করেন Social Physics বা সমাজের পদার্থবিদ্যা নামে। পদার্থ বিজ্ঞান যেমন বস্তুজগৎ সম্পর্কে নানান প্রশ্নের যৌক্তিক ও বাস্তবিক উত্তর প্রদান করে এবং নানান পদার্থ বা বস্তুর কিরূপ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য তা নিরুপন করে, ঠিক তেমনি সমাজবিজ্ঞান বিজ্ঞানও সমাজের নানান দিকের মধ্যকার সম্পর্কের ধরন, সমাজিক পরিবর্তনের কারণ, সামাজিক সমস্যার কারণ ও সম্ভাব্য সমাধান যুক্তি ও বাস্তবিকতার আলোকে প্রদান করে। এককথায় পদার্থবিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে বস্তুজগতের রহস্য উদঘাটন করা আর সমাজবিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে সমাজ ও মানব চরিত্রের রহস্য উদঘাটন করা, যার জন্য সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোৎ সমাজবিজ্ঞানের নামকরণ করেছিলেন Social Physics বা সমাজের পদার্থবিজ্ঞান যা পরবর্তীতে Sociology বা সমাজবিজ্ঞান নামে পরিচিত হয়।
সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
১৬০০ শতকের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ব্যাপক প্রযূক্তিগত উন্নয়ন সাধন করে, যার ফলে প্রথমবারের মত স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয় যা পুরো পৃথিবীর রুপ বদলে দেয়। প্রযূক্তিগত এই উন্নয়ন শিল্প বিপ্লব কে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে ইউরোপের Feudal System ভেঙে পড়ে এবং Feudal System এর ধ্বংসাবশেষের উপর Capitalist system বা পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। অপর পক্ষে ইউরোপীয় নাবিকদের নতুন নতুন ভূমি আবিষ্কার, ইউরোপীয় বাণিজ্যের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ক্রমাগত বাজার সম্প্রসারনের ফলে শিল্প বিপ্লব ব্যাপকভাবে বেগবান হয়। মূলত, সমাজবিজ্ঞানীদের সম্মলিত প্রচেষ্টায়, পর্যবেক্ষনে, ও উত্তরিত জ্ঞানের মাধ্যমেই সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ হয়।
অন্যদিকে চার্চের সাথে ক্ষমতার সংঘাত, Protestant বিপ্লব, ধর্ম থেকে সমাজ পৃথককরণ ইত্যাদি ইউরোপীয় সমাজে নতুন মাত্রা যোগ করে। সব মিলিয়ে ইউরোপীয় সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে পরে। এই অস্থিতিশীল সমাজে স্থিতি অনয়নের জন্যই অগাস্ট কোৎ, ম্যাক্স ওয়েবার, কার্ল মাস্ক প্রভৃতি সমাজ ভাবুকগণ সমাজবিজ্ঞানের পটভূমিকে দৃশ্যায়ন করেন।