সুশাসন কি এবং সুশাসনের বৈশিষ্ট্য ও উপাদান কি কি
সুশাসন কি
সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহনের ভিত্তিতে শাসনকাজ পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসন। সুশাসন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করে বিশ্বব্যাংক ১৯৮৯ সালে। সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Good Governance’। সুশাসন হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সুশাসনের মাধ্যমেই নাগরিকগণ তাদের আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করতে পারে, অধিকার ভোগ করতে পারে এবং চাহিদাগুলো মেটাতে পারে। তাই বলা যায়, রাষ্ট্র ও নাগরিকের উন্নয়নের জন্য পরিচালিত ব্যবস্থাই হচ্ছে সুশাসন ।
সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। ফলে জনগণ স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারে না, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে। আবার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব এবং সহিংসতার কারণেও সুশাসন ব্যাহত হয়। এছাড়া অধিকাংশ দেশেই আইনের শাসন কার্যকর থাকে না। আইনের শাসনের অভাবের কারণে সুশাসন বিঘ্নিত হয়। সরকারের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনা কিংবা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশে অরাজকতা দেখা দেয়। এর ফলে সুশাসন ব্যাহত হয়। দুর্নীতির কারণে ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নৈতিকতা বিনষ্ট হয়, ন্যায়বিচার ও সমান অধিকার, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হুমকির মুখে পড়ে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র চর্চার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার পর নেতা বা নেতৃবৃন্দ যেসব স্বৈরাচারী আচরণ করেন তাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকে না। এছাড়া আরও বিভিন্ন কারণে যেমন রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ, স্বজনপ্রীতি, দুর্বল আইন বিভাগ, আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা ইত্যাদি কারণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা বাধাগ্রস্ত হয়।
সুশাসন বলতে কি বুঝ
সরকারের কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় শাসনকাজ পরিচালনা করাকে সুশাসন বলে। সুশাসন বলতে এখন এক কাঙ্ক্ষিত শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বাকস্বাধীনতাসহ সব রাজনৈতিক স্বাধীনতার সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে, শাসনকার্যে জন অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে অর্থাৎ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের অধিকারের সুরক্ষা থাকবে, সরকার জনগণের চাহিদার প্রতি সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল থাকবে।
সুশাসনের বৈশিষ্ট্য কি কি
সুশাসনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য হলো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, আইনের শাসন, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা।
- গণতন্ত্র সুশাসনের পূর্বশর্ত। গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় বলে সরকারের ওপর জনগণের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকে। এতে জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটে এবং সরকার জনমত ও জনকল্যাণকে প্রাধান্য দেয় বলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
- সুশাসনের অন্য একটি অপরিহার্য উপাদান হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। আইনের শাসন নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য দূর করে, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে। ফলে সুশাসনের পথ সুগম হয়।
- সুশাসনের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জবাবদিহিতা। নিজের কাজের জন্য অন্য ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যাদানের বাধ্যকতাই জবাবদিহিতা। সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি কমবে এবং এর সাথে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পাবে।
- স্বচ্ছতা সুশাসনের অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য। যেকোনো ধরণের গোপনীয়তা পরিহার করে নিয়মনীতি মেনে কোনো কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পাদন করাকে স্বচ্ছতা বলে।
- দক্ষতা সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দক্ষতা আবশ্যক।
সুশাসনের উপাদান কয়টি ও কি কি
সুশাসনের উপাদান হচ্ছে ৮টি, যথাঃ-
- অংশগ্রহণ
- ঐক্য
- দায়িত্ব
- স্বচ্ছতা
- দায়িত্ববোধ
- কার্যকারিতা এবং দক্ষতা
- ন্যায়বিচার
- আইনের শাসন মেনে চলা