ইসলামের ইতিহাস

জাবের যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণনা

1 min read

জাবের যুদ্ধ

ইসলামের ইতিহাসে যতগুলো যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে তার মধ্যে জাবের যুদ্ধ একটি অন্যতম যুদ্ধ। এ যুদ্ধ ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে (সালে) দ্বিতীয় মারওয়ান এবং আবুল আব্বাস আস-সাফ্ফাহর মধ্যে টাইগ্রিস নদীর তীরবর্তী জাব নামক স্থানে সংঘটিত হয়েছিল বলে এটি জাবের যুদ্ধ হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত। এ যুদ্ধের মাধ্যমে উমাইয়া বংশের পতন এবং আব্বাসীয় বংশের উত্থান ঘটে।

জাবের যুদ্ধের কারণ

উমাইয়া ও আব্বাসীয় দ্বন্দ্ব ছিল জাবের যুদ্ধের প্রধান কারণ। উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ানের সময় আব্বাসীয় আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। আবু মুসলিমের সাংগঠনিক দক্ষতায় আব্বাসীয়রা খোরাসানে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। খোরাসানের একটি বিশাল অংশ ছিল শিয়াপন্থি এবং আরবদের দ্বারা নির্যাতিত। আবু মুসলিম তার বাগ্মিতায় প্রকাশ্যে আব্বাসীয়দের আন্দোলন চালিয়ে যেতে লাগলেন। শিয়া তথা ফাতেমীয়দের সমর্থন আদায়ের জন্য তিনি নিজেকে হাশেমীয়দের স্বার্থে আন্দোলনের কথা প্রচার করেন। উন্নত সংস্কৃতির অধিকারী হয়েও সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের স্বীকার মাওয়ালিগণকে সহজেই আবু মুসলিম নিজের দলে নিয়ে আসেন। আব্বাসীয়রা তাদের আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে কালো পতাকা উত্তোলন করে এবং উমাইয়া শাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর রোজ বৃহস্পতিবার আবু সালমা আবুল আব্বাসকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা দেন। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উমাইয়া খিলাফত রক্ষার জন্য মারওয়ান চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে জাবের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

জাবের যুদ্ধের ঘটনা

উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ান কুফার প্রধান মসজিদে আবুল আব্বাসের খলিফা ঘোষিত হওয়ার সংবাদ শুনে বিচলিত বোধ করলেন এবং যুদ্ধের মাধ্যমে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্পবন্ধ হলেন। দ্বিতীয় মারওয়ান ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে টাইগ্রিস নদীর অববাহিকা অঞ্চল জাব এর ডান তীরে অবস্থান গ্রহণ করেন। আবুল আব্বাস কুফা হতে সৈন্য বাহিনী নিয়ে সেনাপতি আবু আউনের বাহিনীর সাথে যোগ দেন। সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান সেনাপতি নির্বাচিত হন আবুল আব্বাসের জনৈক চাচা আব্দুল্লাহ। উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ান ১,২০,০০০ সৈন্যসহ টাইগ্রিস নদী অতিক্রম করে জাব নদীর দিকে অগ্রসর হলেন। দ্বিতীয় মারওয়ান জাব নদীর পশ্চিম তীরে এবং আব্দুল্লাহ পূর্ব তীরে শিবির স্থাপন করেন। এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ চলে। অবশেষে দ্বিতীয় মারওয়ান ও তার বাহিনী আবুল আব্বাস আস-সাফফাহর বাহিনীর নিকট সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়।

জাবের যুদ্ধের ফলাফল

ইতিহাসের যুগান্তকারী যুদ্ধসমূহের মধ্যে জাবের যুদ্ধ একটি। এ যুদ্ধে উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় মারওয়ান পরাজিত হয়। দ্বিতীয় মারওয়ান যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে মসুলে ও মসুল থেকে যথাক্রমে রাজধানী হাররানে, দামেস্কে, প্যালেস্টাইনে এবং সর্বশেষ প্যালেস্টাইন হতে মিশরের পথে রওয়ানা দেন কিন্তু পথিমধ্যে তিনি ধৃত হন। ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট মিশরের বুসিরের গির্জার বাইরে দ্বিতীয় মারওয়ানকে মেরে ফেলা হয়। ঐতিহাসিক মাসউদীর মতে, “খলিফার খণ্ডিত মাথা ও ‘খলিফা’ লেখা তকমা আবুল আব্বাস আস-সাফ্ফাহর নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ছিন্নমস্তক দেখে আবুল আব্বাস ‘আস-সাফ্ফাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন ।” ফলে উমাইয়া বংশের পতন এবং আব্বাসীয় খিলাফত সূচিত হয়।

পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, জাবের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। যার মাধ্যমে উমাইয়াদের শাসন রবি অস্তিমিত হয় এবং আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় আসে। ফলে সূচিত হয় নতুন ইতিহাস। আব্বাসীয়রা দীর্ঘ ৫০০ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে জ্ঞানবিজ্ঞানের আলোয় ইসলামি সমাজকে উদ্ভাসিত করেছেন।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x