ভূগোলের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর
মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনাই হচ্ছে ভূগোল। ভূগোল এ পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা দেয়। প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে মানুষ এ পৃথিবীতে বাঁচতে পারে না। ভূতত্ত্ববিদ্যার বিভিন্ন শাখার মধ্যে এ ভূগোলই ‘দৃশ্যমান’ এবং এর গুরুত্ব অত্যধিক। এটি পরিবেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গড়ে ওঠেছে। তাই ভূগোলের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক অনবদ্য।
ভূগোলের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক
গতিশীল বিজ্ঞান হিসেবে বিশ্বে প্রতিনিয়ত যা ঘটছে তার সাথে ভূগোলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কেননা ভূগোল পৃথিবী ও তার পৃষ্ঠদেশ সম্পর্কে ধারণা দেয়। আর পরিবেশের কোনো স্থানের যাবতীয় পরিস্থিতি, সমষ্টির রূপ, মানবসমাজ ও মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার স্বার্থে পরিবেশ সম্পর্কিত ধারণা রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভূগোল পৃথিবী ও পৃথিবী পৃষ্ঠের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উপাদান নিয়ে আলোচনা করে। আর এসব উপাদান দ্বারাই পরিবেশ গঠিত। তাছাড়া মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। তাই ভূগোল ও পরিবেশের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। নিম্নে ভূগোলের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হলো।
১. ভূতত্ত্ব বিদ্যা
ভূপৃষ্ঠ বাহ্যিক ও অদৃশ্যমান যাবতীয় জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। আর পরিবেশগত অজৈব দৃশ্যমান পদার্থের মধ্যে পানি, শিলা, মৃত্তিকা প্রভৃতি ভূমিরূপের গঠন অন্যতম। এসব বিষয়ের ওপর আলোচনা ভূগোলের অন্যতম ক্ষেত্র বা পরিধি।
২. জীববিদ্যা
উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে জীববিদ্যা। এ উদ্ভিদ ও প্রাণী পৃথিবীর পার্থিব পরিবেশেই বাস করে। উদ্ভিদবিদ্যা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, জলবায়ুভেদে এদের বণ্টন, তারতম্য এবং এদের অবস্থান, কার্যকলাপ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। ভূগোল যেহেতু পৃথিবী ও তার পার্থিব পরিবেশ নিয়ে আলোচনা করে, সেহেতু উদ্ভিদের এসব বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করাও এর অন্তর্ভুক্ত। আবার প্রাণিবিদ্যা বিভিন্ন প্রকার প্রাণি ও তাদের অবস্থান, কার্যকলাপ, বিচরণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। বিভিন্ন প্রকার ভূপ্রকৃতি এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুতে প্রাণীদের বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
৩. পদার্থবিদ্যা
ভূগোলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পদার্থবিদ্যা। কেননা এ বিদ্যা কাজ, শক্তি, পানি, বিদ্যুৎ, আলো ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। এগুলোর মধ্য আলো পদার্থবিদ্যার অন্যতম আলোচ্য বিষয়। আর এ আলো হচ্ছে পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আলো না থাকলে এ পৃথিবীর রূপ পরিপূর্ণ হতো না। যার ফলে পৃথিবীর পরিবেশ সৃষ্টি হতো না। যেমন, সবুজ উদ্ভিদ আলোর উপস্থিতিতেই খাদ্য উৎপাদন করে। আর এ উদ্ভিদ পরিবেশেরই জীবন। কাজেই আলোর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচিত হয় পদার্থবিদ্যায়। আর পৃথিবীতে বাসযোগ্য উপাদান হিসেবে সবকিছুর বর্ণনাই হচ্ছে ভূগোল । তাই বলা যায় পরিবেশ ও ভূগোলের মাঝে সম্পর্ক রয়েছে।
৪. জ্যোতির্বিদ্যা
ভূগোলের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ জ্যোতির্বিদ্যা। এটি সৌরজগৎ ও তার গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, নীহারিকা, ধূমকেতু, ঋতু পরিবর্তন, দিবারাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। বিভিন্ন গ্রহের তথ্য নিয়ে জ্যোতির্বিদ্যার অন্তর্ভুক্ত অংশ ভূগোলেও আলোচিত হয়। পৃথিবী একটি গ্রহ, যা জ্যোতির্বিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয়। জ্যোতির্বিদ্যার এসব বিষয় পরিবেশকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। আর এ কারণেই বলা যায় ভূগোল ও পরিবেশের সম্পর্ক গভীর।