প্রাকৃতিক পরিবেশ কী, প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ এর উপাদান কি কি
প্রাকৃতিক পরিবেশ কী
প্রাকৃতিক পরিবেশ (natural environment) মানুষের জীবনযাত্রাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে থাকে। যেসব অবস্থা, শক্তি এবং বস্তুসমূহ জীবকে প্রভাবিত করে তাই পরিবেশ। মানুষের সার্বিক অবস্থা যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, আচার আচরণ, কর্মদক্ষতা, রীতিনীতি, জীবনযাত্রা প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের চারপাশের সবকিছুই প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রকৃতি প্রদত্ত পরিবেশই হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ পরিবেশ একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে
সহজভাবে বলা যায় প্রকৃতির দেওয়া পরিবেশকেই প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। পৃথিবীর আকাশ, বাতাস, পাহাড় পর্বত, নদনদী, পানি, মাটি, পশুপাশি, গ্রহ, উপায়, চন্দ্র, সূর্য প্রভৃতি প্রকৃতির দান। এসব প্রকৃতির দানের ওপর মানুষ তার নিজস্ব বুদ্ধি ও শ্রমশক্তির প্রয়োগ করে সভ্যতার শানাবিধ উপাদান ও উপকরণ সৃষ্টি করেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের কোনো হাত নেই। প্রকৃতিই এ পরিবেশ সৃষ্টি করে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ এর সংজ্ঞা
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, “মানুষ এবং মানুষের কার্যাবলি ব্যতীত একটি অঞ্চলে প্রকৃতির সৃষ্টি বস্তু, যেমনঃ ভূমির বন্ধুরতা, জলবায়ু, উদ্ভিদজগৎ, মৃত্তিকা প্রভৃতির সমন্বয়ই প্রাকৃতিক পরিবেশ।”
অধ্যাপক এম. সি. আগরওয়ালা (Prof. M. C Agarwala) এর মতে, “প্রাকৃতিক পরিবেশ হলো যেসব প্রাকৃতিক উপাদানের সমষ্টি যাদের উৎপত্তি ও সৃষ্টির ওপর মানুষের কোনো হাত নেই।”
সমাজবিজ্ঞানী সরোকিন (Sorokin) এর মতে, “প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে সেসব মহাজাগতিক অবস্থানকে নির্দেশ করা হয় যা মানুষের সৃষ্টি নয় এবং যা নিজের নিয়মে পরিবর্তিত হয়।“
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান সমূহ বর্ণনা কর
পরিবেশ হচ্ছে পৃথিবীর মূল ভিত্তি। পরিবেশ কোনো স্থানের যাবতীয় অবস্থা বা পরিস্থিতির সমষ্টির রূপ। মানবসমাজ ও সমাজবদ্ধ মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ পর্যালোচনার স্বার্থে পরিবেশ সম্পর্কিত আলোচনা অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তিমানুষের ওপর যেমন, মানবসমাজের ওপরও, তেমনি পরিবেশের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আর এসব পরিবেশের রয়েছে সুনির্দিষ্ট উপাদান।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ
মানব সভ্যতার ক্রিয়াকলাপের প্রভাব পরিবেশের ওপর অজীব ও সজীব উভয় উপাদানের ওপর ক্রিয়াশীল । মানব সভ্যতার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে পরিবেশের উপাদানগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা পরিবেশের এসব অনুকূল উপাদানগুলোই মানব সভ্যতাকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু প্রতিকূল উপাদানগুলো মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। এতে করে পরিবেশ বিশ্বের মানবজাতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহকে দুভাবে বিভক্ত করা যায়। নিম্নে এসব উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো।
১. অজৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান
যে পরিবেশ অজৈব, প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ নিয়ে গঠিত, তাকে অজৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান বলে। অজৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপদাসমূহ হলো।
ক. ভৌগোলিক অবস্থান : ভৌগোলিক পরিবেশগত দিক দিয়ে পৃথিবী তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা : উচ্চ অক্ষাংশ, মধ্য অক্ষাংশ এবং নিম্ন অক্ষাংশ। আবার মহাদেশীয় অবস্থান, দ্বৈপ অবস্থান, উপদ্বীপীয় অবস্থান, সমুদ্র প্রান্তীয় অবস্থান প্রভৃতির ওপরও পরিবেশের তারতম্য লক্ষ করা যায়।
খ. ভূপ্রকৃতি : ভূপ্রকৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের অজৈব উপাদান হিসেবে উল্লেখযোগ্য। গঠন বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের জন্যও ভূপ্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের লক্ষ করা যায় । যথা : মালভূমি অঞ্চল, পাবর্ত্য অঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল এবং সমভূমি অঞ্চল।
গ. জলবায়ু : প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম উপাদান হচ্ছে জলবায়ু। জলবায়ুর ওপর মানুষের স্বাস্থ্য, শক্তি ও সামর্থ্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। যেমন- ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং অধিক আর্দ্রতা অপেক্ষা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের স্বপ্ন ও ব্যবস্থা, কৃষিকার্য প্রভৃতির ওপর জলবায়ুগত পরিবেশ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। যথাযোগ্য আর্দ্রতা স্বাস্থ্যের পক্ষে অধিকতর অনুকূল। অর্থাৎ কোনো অঞ্চলের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, পরিবহণ মৃত্তিকা থেকে। যার ফলে মৃত্তিকার গুণগতমান ও উর্বরতা শক্তির ওপর ভিত্তি করে পরিবেশের পার্থক্য ঘটে।
ঘ. মৃত্তিকা : প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি উল্লেখযোগ্য অজৈব উপাদান মৃত্তিকা। সমস্ত প্রাণিকুলের খাদ্যের উৎপাদন হয় মৃত্তিকা থেকে। যার ফলে মৃত্তিকার গুণগতমান ও উর্বরতা শক্তির ওপর ভিত্তি করে পরিবেশের পার্থক্য ঘটে।
ড. নদনদী: নদনদী প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহের মধ্যে অন্যতম। নদনদী মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চ. খনিজ সম্পদ : খনিজ সম্পদের ভূমিকা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান হিসেবে অপরিসীম। খনি হতে প্রাপ্ত সোনা, রূপা, কয়লা, তৈল, তামা, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক প্রণালিকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত করে।
২. জৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহের মধ্যে জৈব উপাদান উল্লেখযোগ্য। জৈব উপাদানসমূহের মধ্যে উদ্ভিজ্জ সম্পদ ও প্রাণিজ সম্পদ বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।
ক. উদ্ভিদ সম্পদ : ভূপৃষ্ঠে প্রকৃতির সৃষ্ট সকল প্রকার গাছপালাকে উদ্ভিদ বলে। প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম উপাদান হচ্ছে উদ্ভিদ। উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন (O)) ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)-এর ভারসাম্য রক্ষা করে। সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে সমস্ত প্রাণিকুলকে রক্ষা করে। উদ্ভিদের ওপর প্রাণী খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল। অর্থাৎ জীবিকা নির্বাহসহ আর্থিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে উদ্ভিদ যথেষ্ট প্রভাব রাখে।
খ. প্রাণিজ সম্পদ : এ পৃথিবীতে অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। আর এসব প্রাণীই প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম উপাদান।
শেষ কথা:
আশা করি আপনাদের এই আর্টিকেলটি পছন্দ হয়েছে। আমি সর্বদা চেষ্টা করি যেন আপনারা সঠিক তথ্যটি খুজে পান। যদি আপনাদের এই “প্রাকৃতিক পরিবেশ কী, প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ এর উপাদান কি কি” আর্টিকেলটি পছন্দ হয়ে থাকলে, অবশ্যই ৫ স্টার রেটিং দিবেন।