ভূগোল

বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে | বাস্তুতন্ত্র কি | বাস্তুতন্ত্রের মূলনীতি

1 min read

বাস্তুতন্ত্র কাকে বলে

ইংরেজি Ecosystem শব্দের বাংলা রূপ হলো বাস্তুতন্ত্র। ১৯৩৫ সালে Ecosystem শব্দটি A. B. Tansely নামক একজন ব্রিটিশ পরিবেশবিজ্ঞানী সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। মানবজীবনের নানান প্রকৃতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাস্তব্যবিদ্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত। কেননা বাস্তুগত উপাদানগুলোর সমন্বয়ে পরিবেশ গঠিত হয়। যেকোনো বাহ্যিক শক্তি, অবস্থা যা জীবের জীবনযাত্রাকে কোনো না কোনো মাধ্যমে প্রভাবিত করে তাই ঐ জীব পরিবেশের উপাদান বা বাস্তব্যগত উপাদান। কাজেই বাস্তব্যবিদ্যার মৌলিক কার্যকরী উপাদানকে বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) বলে। বাস্তুতন্ত্রের প্রকৃতি কোনো এক নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপ, একাত্মতা ও আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। সুতরাং জীবগুলোর যে স্থানিক বা গাঠনিক ও কার্যিক একক সজীব ও অজীব উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত এবং যাদের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভূত নির্দিষ্ট পদার্থের নিয়মিত বিনিময় ও শক্তিপ্রবাহ ঘটে তাকে বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) বলে।

বাস্তুতন্ত্র কি

পরিবেশের প্রতিটি স্তরে জৈব ও অজৈব উপাদানগুলো পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ফলে পরপর কতকগুলো সিস্টেম ঝ প্রণালি সৃষ্টি হয়। সমগ্র পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রগুলো নিয়ে গড়ে ওঠে জীবমণ্ডল। জীবমণ্ডলের মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। এদের কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বলে জীবনধারণের জন্য এরা পারস্পরিক নির্ভরশীল। এই পরস্পর নির্ভরশীলতা থেকেই একটি শক্তি প্রবাহের প্রক্রিয়া সৃষ্টি হয়, এই প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র

বাস্তুতন্ত্রের মূলনীতি

সব বাস্তুতন্ত্রে ৩টি মূলনীতি বিদ্যমান। যথা,

  • ১. পুষ্টিচক্র
  • ২. এনার্জি প্রবাহ
  • ৩. বাস্তুতন্ত্রের কাঠামো

নিম্নে এদের বিবরণ দেওয়া হলো।

১. পুষ্টিচক্র

জীবের জীবনধারণ, বৃদ্ধি, মৃত্যু বা পচনের মাধ্যমে পরিবেশের কিছু কিছু রাসায়নিক উপাদান পুষ্টি আকারে এদের শরীরে প্রবেশ করে। আবার কিছু কিছু উপাদান প্রকৃতিতে ফিরে আসে। এক্ষেত্রে পরিবেশ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে পরিবেশে তথা বায়ুমণ্ডলে চক্রাকারে আবর্তন ঘটে। বাস্তুতন্ত্রে এরকম আরও বহু ধরনের (প্রায় ২০টি) রাসায়নিক পদার্থ পুষ্টিচক্রে অবস্থান করে। বাস্তুতন্ত্রে সজীব উপাদানসমূহ পরিবেশ থেকে অজীব উপাদানগুলো গ্রহণ করে এবং নিজেদের শরীরে তাদের জটিল জৈব বস্তুতে পুনর্গঠন করে। অন্যদিকে, সব সজীব উপাদান মৃত্যু এবং পচনের ফলে আবার সেই পূর্বের অজীব উপাদানে পরিণত হয়। এভাবে পুষ্টি এবং খাদ্যের যোগান চক্রাকারে চলতে থাকে।

২. এনার্জি প্রবাহ (শক্তি প্রবাহ)

পরিবেশের অজীব উপাদানসমূহ বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তিস্বরূপ। কিন্তু এনার্জি ব্যয় না করে এদের সারবস্তুগুলোকে কোনো সজীবের বৃদ্ধি ও বিকাশের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় জৈবকলাতে পরিণত করা যায় না। অজৈব উপাদানগুলোকে জৈব পদার্থে পরিণত করতে উদ্ভিদ সূর্যালোকে শক্তিকে ব্যবহার করে থাকে। এতে কিছু এনার্জি আবার ঐ জৈব পদার্থের অভ্যন্তরে বাঁধা পড়ে। জৈব উপাদানসমূহ মৃত্যুর পর পচনক্রিয়া শুরু হলে এ এনার্জি আবার মুক্ত হয়। প্রাণীর জীবনের মূলে রয়েছে এ এনার্জি প্রবাহ। দৈহিক কাজকর্মের জন্য খাদ্যের সারবস্তুকে শরীর গঠনের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের ন্যায় প্রাণীদেরও এনার্জি প্রয়োজন। খাদ্য দুই ধরনের অবদান রাখে। যথা: জৈব পদার্থ তৈরিতে এবং দৈনন্দিক কাজকর্মের ক্ষেত্রে। প্রাণীদেহ হতে নিঃসৃত পদার্থ বা জৈব উপাদানগুলো পচনের মাধ্যমে সৃষ্ট অজৈব রাসায়নিক পদার্থ। উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশে ব্যবহৃত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত শক্তির যোগান থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত এনার্জি প্রবাহ চলমান থাকে।

আলোক শক্তির যোগান বন্ধ হয়ে গেলে পুষ্টিচক্র স্তব্ধ হয়ে যায়। পুষ্টির ক্ষেত্রে যে চক্রাকার প্রবাহ চলে এনার্জি প্রবাহ তেমন নয় ৷ দৈনন্দিন কাজকর্মের মাধ্যমে কিছু এনার্জি উত্তাপের সাথে বের হয়ে যায়। এ এনার্জি কোনোক্রমেই পুষ্টিচক্রের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্রে প্রবাহিত অসম্ভব। কজেই পুষ্টিচক্রে যেমন বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে চক্রাকারে পরিবর্তন ঘটে, এনজি প্রবাহের ক্ষেত্রে নয়। বস্তুতন্ত্রে সূর্যের আলোক এনার্জি ঢুকে প্রবাহিত হয়ে উত্তাপ ও এনার্জিরূপে নির্গত হয়।

৩. কাঠামো

শুধুমাত্র বিশেষ একটি পরিবেশে যেকোনো সংখ্যক জীবের উপস্থিতি থাকলেই উপযুক্ত বাস্তুতন্ত্র গঠিত হয় না, সজীব ও অজীব উপাদানসমূহের একটি নির্দিষ্ট অনুপাতের প্রয়োজন। জীবজগৎ এ নির্দিষ্ট অনুপাত অনুসারে নিজেদের সংখ্যা বিস্তার করে। জীবের সংখ্যা এ নির্দিষ্ট অনুপাতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সূচনা ঘটলেই বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। বাস্তুতন্ত্রের সকল জীবসমূহের মধ্যে এ যে বিশেষ পারস্পরিক সম্বন্ধ তাকে কাঠামো বলে

প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীতে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবস্থান রয়েছে। এদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠা কাঠামো যথার্থ নয়। এ জটিল কাঠামো সুরক্ষিত হলে তবেই এনার্জি প্রবাহ ও পুষ্টিচক্র সঠিকভাবে কার্যকরী হতে পারে। এতে করে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বা সমতা রক্ষিত হবে।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x