ভূগোল

ভূত্বক কী, কাকে বলে এবং ভূত্বকের গঠন ও উপাদানের বিবরণ

1 min read

ভূত্বক কী

বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরীণ উত্তপ্ত তরল পদার্থ শীতল হয়ে দুধের সরের মতো এক ধরনের আবরণ সৃষ্টি করে। অভ্যন্তরীণ তাপ ও ক্রমাগত সংকোচনের প্রভাবে পাতলা আবরণটির উপরিভাগ কুঁকড়ে উঁচুনিচু হয়ে কার্বন ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। ইহা ভূত্বক নামে পরিচিত। ভূত্বক হলো পৃথিবীর সমগ্র প্রাণিজগতের আবাসস্থল। এখানে সভ্যতার যাবতীয় বস্তু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যার কারণে ভূত্বক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এ ভূত্বকের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এ স্তরসমূহ বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। ভূত্বক বা অশ্বমণ্ডলের প্রধান উপাদান হলো সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম।

ভূত্বক কাকে বলে

পৃথিবীর উপরিভাগে বিভিন্ন শিলা দ্বারা গঠিত কঠিন এবং পাতলা আবরণকে ভূত্বক বলে। প্রখ্যাত ভূগোলবিদ এ. এন. স্ট্রেহলার এর মতে, “Outmost an thinnest of the earth zones is the earth crust.” অর্থাৎ, পৃথিবীর উপরিভাগের পাতলা আবরণই ভূত্বক। পৃথিবীর অন্যান্য যেকোনো অংশের চেয়ে ভূত্বক জীবজগতের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি অশ্মমণ্ডলের উপরিভাগ। এখানে প্রাণিজগৎ বসবাস করে এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও তৃণাদি জন্ম নেয়। অর্থাৎ এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থলসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটে।

ভূত্বক গঠনকারী উপাদানসমূহ

বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে ভূত্বক গঠিত। ভূত্বকের বিভিন্ন স্থানের উপাদানগুলোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। খনিজ পদার্থ প্রাকৃতিক উপায়ে একাধিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত হয়। আবার কতিপয় খনিজ পদার্থ একত্রে সংমিশ্রিত হয়ে গঠিত হয় শিলা। ভূত্বকের কোথাও হালকা আবার কোথাও তুলনামূলক ভারী শিলা রয়েছে। ভূত্বক গঠনে সর্বমোট আবিষ্কৃত মৌলিক পদার্থের মধ্যে ২০টি বিশেষ ভূমিকা পালন করলেও এর মধ্যে অংশগ্রহণকারী ৮টি মৌলিক পদার্থ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো শতকরা ৯৮% এরও অধিক বিদ্যমান। উপাদানগুলো হলো অক্সিজেন (৪৬.৪৬%), সিলিকন (২৭.৬১%), অ্যালুমিনিয়াম (৮.০৭%), সোডিয়াম (২.৭৫%), লৌহ (৫.০৬%), পটাসিয়াম (২.৫৮%), ক্যালসিয়াম (৩.৬৪%), ম্যাগনেসিয়াম (২.০৭%) প্রভৃতি। এ ৮টি উপাদানের মধ্যে অক্সিজেন ও সিলিকনের পরিমাণ শতকরা ৭৪.০৭%। বাকি ২৫.৯৩% অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে গঠিত। ভূত্বক গঠনকারী এ ৮টি উপাদান ছাড়াও অন্যান্য খনিজের সাথে স্বর্ণ, রৌপ্য, দস্তা, তামা, টিন এবং বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরোনিয়াম, রেডিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি সহায়ক। এসব উপাদানগুলোর পরিমাণ অতি সামান্য।

ভূত্বকের গঠন

নিম্নে ভূত্বকের গঠনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো।

১. উপরের লঘু শিলা

এটি ভূত্বকের ঊর্ধ্বস্তর; যা সর্বোপরি হালকা ও পাতলা আবরণযুক্ত এবং সমগ্র পৃথিবীর প্রায় ০.৫ অংশ। এ স্তরে গ্রানাইট শিলার পরিমাণ অধিক বলে একে ‘গ্রানাইট স্তর‘ও বলে। গ্রানাইট স্তরের উপরিভাগের খুব সামান্য অংশ পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হয়। এ স্তরেই প্রাণিজগৎ বসবাস করে এবং উদ্ভিদ ও তৃণাদি জন্মে। এ স্তরের আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.৭৫ – ২.৯০ পর্যন্ত। এখানে সিলিকন (Si) এবং অ্যালুমিনিয়াম (Al) এর পরিমাণ অধিক বলে অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী সুয়েস এ স্তরকে সিয়াল (SiAl) স্তর নামে নামকরণ করেছেন। সিয়াল স্তরের গভীরতা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন হলেও গড় গভীরতা প্রায় ১২.৮ কি. মি.। ভারত ও আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে সামান্য গ্রানাইট স্তর রয়েছে কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে তা একবারেই অনুপস্থিত। মহাদেশগুলো মূলত এ জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত। এ শিলান্তরের মধ্যে দিয়ে ভূমিকম্পের লম্বালম্বি তরঙ্গ প্রতি সেকেন্ডে ৬.২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়।

২. মধ্যবর্তী গুরু শিলা

ভূত্বকের সিয়াল স্তরের নিম্নে এ স্তরটি অবস্থিত। এ স্তরটি ব্যাসল্ট জাতীয় শিলা দিয়ে গঠিত বলে একে ব্যাসন্ট স্তরও বলা হয়। এ স্তরে সিলিকন (Si) এবং ম্যাগনেসিয়াম (Ma) এর পরিমাণ অধিক হওয়ার কারণে বিজ্ঞানী সুয়েস এ স্তরকে ‘সিমা (SiMa) স্তর‘ বলে নামকরণ করেছেন। মহাদেশগুলোর তলদেশে, যেখানে গ্রানাইট শিলাস্তর শেষ, সেখান হতেই এ শিলান্তর দেখা যায়। সিমান্তর বেশ পুরু; প্রায় সমগ্র পৃথিবীর ৮৩%। গভীরতা ২০ কিলোমিটার থেকে ৩২ কিলোমিটার। এ স্তরের আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.৯৫ থেকে ৩.৪ পর্যন্ত। এখানে আপেক্ষিক গুরুত্ব বেশি হওয়ায় ভূকম্পন তরঙ্গ প্রতি সেকেন্ডে ৭ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়। মৃত্বকের উপরের লঘু শিলা ও মধ্যবর্তী গুরু শিলান্বয় যে সীমারেখায় মিলিত হয়, তা কনরাড বিযুক্তি রেখা নামে পরিচিত।

৩. নিচের অলিভিন জাতীয় শিলা

ভূত্বকের সর্বনিম্ন স্তরটি এ জাতীয় শিলায় অন্তর্ভুক্ত। এ শিলায় অলিভিন নামের খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমাণে থাকে বলে এ স্তরটিকে অলিভিন স্তর বলে। অলিভিন খনিজটি মূলত ম্যাগনেসিয়াম (Mg), সিলিকন (Si) এবং লৌহ (Fe) এর সমন্বয়ে গঠিত। তবে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ অর্ধেকের বেশি। এ স্তরের আপেক্ষিক গুরুত্ব ৩.৩। এখানে ভূকম্পীয় তরঙ্গের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডের ৮ কি. মি. বেগে প্রবাহিত হয়।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x