“ব্যবস্থাপনা একটি সর্বজনীন প্রক্রিয়া” এ উক্তির সঠিকতা যাচাই করতে হলে ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে হবে। ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি অনুসারে এটাকে বিশেষজ্ঞরা কখনও বিজ্ঞান আবার কখনও কলা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।
ব্যবস্থাপনা সর্বজনীন
- W. Taylor তাঁর “Principles of Scientific Management” গ্রন্থেব্যবস্থাপনাকে বিজ্ঞানের কাতারে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতে, ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন নীতি, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়াগুলোসকল ক্ষেত্রে সমভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব। ব্যবস্থাপনার সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণে আমরা জানি যে, ব্যবস্থাপনার নীতিসমূহ প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন জটিল শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্য অর্জনে সফলভাবে ব্যবহৃত হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত সকল পর্যায়েই ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অপরিসীম। তাই আজ অনুন্নত দেশ হতে শুরু করে উন্নয়নশীল, উন্নত ও ছোট বড় সকল দেশেরই ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নয়নে ব্যবস্থাপনা সর্বজনীনভাবেই অবদান রাখছে। ব্যবস্থাপনার বহুমুখী ব্যবহার এবং পাশাপাশি পদার্থ বা রসায়নশাস্ত্রের মত বিজ্ঞান না হওয়ায় ব্যবস্থাপনাকে অনেকে কলা হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আঞ্চলিক ও সামাজিক রীতিনীতি দ্বারা ব্যবস্থাপনা প্রভাবিত হয়। ফলে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তাই অনেকেই ব্যবস্থাপনাকে সর্বজনীন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না।
এতদসত্ত্বেও ব্যবস্থাপনার নীতিসমূহ চিরন্তন প্রকৃতির। তাই ব্যবস্থাপনার নীতিসমূহ দক্ষতার সাথে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ করলে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হয়, যা নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠানের সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। এ প্রসঙ্গে Weihrich and Koontz এর মতে, “উত্তম ব্যবস্থাপনা বিধিবদ্ধ সংস্থার প্রেসিডেন্ট, হাসপাতালের প্রশাসক, প্রথম স্তরের সরকারি তত্ত্বাবধায়ক, বয়স্কাউট নেতা, গির্জার পাদ্রী, বেসবল দলের ব্যবস্থাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত।”
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিভিন্ন মনীষী মাঝে মতভেদ দেখা দিলেও সার্বিকভাবে ব্যবস্থাপনার পরিসরের দিকে দৃষ্টিপাত করলে ব্যবস্থাপনাকে একটি সর্বজনীন কার্যাবলি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া চলে। তাই ‘ব্যবস্থাপনা সর্বজনীন’ উক্তিটি যথার্থই।