সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর
ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যসম্পাদনে যে কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি ও সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য ব্যবস্থাপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যবস্থাপক সফলতার সাথে অর্জন করতে পারে। কিন্তু কোন প্রকার অবহেলা কিংবা অনীহা সৃষ্টি হলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যার্জন করা সম্ভবপর হয় না। তাই সফলতার সাথে কারবার ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা
নিম্নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হল।
১. সমস্যা সমাধান (To solve problem)
সাধারণত কারবার প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বহুবিধ সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। তাই উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সফলতা অর্জন করা সম্ভবপর হয় না। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান সঠিক সিদ্ধান্ত, সমস্যা সমাধানের বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন করে থাকে। ফলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে কোন সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়।
২. উৎপাদনের উপকরণাদির সুষ্ঠু ব্যবহার (Proper utilization of production factors)
কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে উৎপাদনের উপকরণাদির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে।
৩. গতিশীলতা সৃষ্টি (Creation of dynamism)
সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি নিয়মিত ব্যবস্থাপকীয় প্রক্রিয়া। তাই ব্যবস্থাপকদের কাছে যে কোন সমস্যা উপস্থিত হওয়া মাত্রই তারা উক্ত সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৪. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency)
সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া একটি যৌক্তিক ও বাস্তবধর্মী মডেল যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সময়, মানবীয় আচরণ, সুসম্পর্ক, অতীত অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যেককে সজাগ করে তোলে। ফলে সকলে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহি ও শ্রমিক-কর্মীদের ব্যক্তিগত নিপুণতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৫. উদ্দেশ্য অর্জন (Achievement of objectives)
সাধারণত কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে। কিন্তু কোন কারণে সাফল্য অর্জনকারী উপকরণসমূহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় উপস্থিত না থাকলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তাই ব্যবস্থাপককে সিদ্ধান্ত গ্রহণর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনের জন্য বাস্তব সম্মত ও সঠিক কাজের গতিধারা নির্ধারণ করতে হবে। আর সঠিক কার্যধারা নির্ধারণ সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে উৎপাদনের উপকরণের কার্যকর ব্যবহার করা সম্ভবপর হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সহজে উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব হয়।
৬. অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি (Creating participation)
এক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে অধস্তন কর্মীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ আসে। ফলে সকল স্তরের শ্রমিক-কর্মীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৭. সম্পর্কের উন্নয়ন (Improvement of relation)
শ্রমিক-ব্যবস্থাপকের সুসম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা করে। ফলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মী তথা ব্যবস্থাপনার মধ্যে শিল্প সম্পর্ক ও মানব সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটে।
৮. ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধি (Growth of business)
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে ব্যবসায় টিকে থাকার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবসায়িক সমস্যার সঠিক সমাধান ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে প্রবৃদ্ধি আনয়ন করতে শেখায়। ফলে ব্যবসায়ের প্রবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ ঘটতে পারে।
৯. সঠিক কার্যধারা অনুসরণ (Following the right course of action)
সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা ও গতিপথ নির্ধারণ করা যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের সকল মানবীয়, বস্তুগত ও আর্থিক সম্পর্কে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা সম্ভবপর হয়। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
১০. উপাদান চিহ্নিতকরণ (Identifying factors)
সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর। কিন্তু কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যদি সাফল্য অর্জনকারী উপাদান অনুপস্থিত থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি হবে। তাই কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রধান ভূমিকা পালনকারী উপাদানসমূহ চিহ্নিত করা আবশ্যক। এতে প্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবস্থাপনার প্রধান কাজ হল সিদ্ধান্ত গ্রহণ। তাই একজন ব্যবস্থাপককে যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। এতে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বা গুরুত্ব বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে।