নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল এবং সর্বশেষ ধাপ। পরিকল্পনার মাধ্যমে যে কাজ শুরু হয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তা শেষ হয়। পরিকল্পনা অনুসারে বিভিন্ন কাজ যথাযথরূপে সম্পন্ন হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখার নামই নিয়ন্ত্রণ। তাই নিয়ন্ত্রণকে পরিকল্পনার পরিপূরক বলা হয়।
নিয়ন্ত্রণ কি
সাধারণ অর্থে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে কাজের ভুল ও দুর্বলতাসমূহকে সংশোধন করার সুষ্ঠু প্রক্রিয়া। ব্যাপক অর্থে নিয়ন্ত্রণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে কার্যাবলি যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা যাচাই করে দেখা এবং কোথাও কোন ভুলভ্রান্তি থাকলে তা সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যবস্থাপকগণকে ও অধস্তনদের কার্যকলাপ নির্ধারিত মানের এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার অনুসরণ করা হয়।
নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিশারদ ও বিশেষজ্ঞ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে তাঁদের কতিপয় মতামত তুলে ধরা হল।
অইরিচ এবং কুঞ্জ (Weihrich and Koontz) এর মতে, “পরিকল্পনা হল ব্যক্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্য পরিমাপক এবং সংশোধক, যা পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য সম্পাদিত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করে।” (Controlling is measuring and correcting individual and organizational performance to ensure that events confirm to plans.)
জি. আর. টেরী এর মতে, “নিয়ন্ত্রণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কি কার্যসম্পাদিত হবে এবং ঐ কার্যের নির্ধারিত মান কি হবে তা নির্ধারণ করা হয়, কি কার্যসম্পাদিত হচ্ছে তা নিরূপণ করা হয়, সম্পাদিত কার্যাদি মূল্যায়ন করা হয় ও প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যাতে কাজ নির্ধারিত মান বজায় রেখে পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পাদিত হতে পারে।”
নিয়ন্ত্রণের বৈশিষ্ট্য
নিম্নে নিয়ন্ত্রণে যেসব বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিদৃষ্ট হয় তা আলোচনা করা হল।
১. ব্যবস্থাপকীয় কার্য (Managerial works) : ব্যবস্থাপনা কার্যচক্রে নিয়ন্ত্রণের স্থান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। পরিকল্পনা, সংগঠন, নির্দেশনা, সমন্বয় সাধন ও প্রেষণার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ। নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাগণ প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা স্থাপন করে থাকেন।
২. সর্বশেষ ধাপ (Last step): ব্যবস্থাপনা কার্য প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ সর্বশেষ ধাপ। পরিকল্পনার মাধ্যমেই ব্যবস্থাপনার যে কাজ শুরু হয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তা শেষ হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যসম্পাদনের পর মেয়াদকাল শেষে নিয়ন্ত্রণ কার্যসম্পাদিত হয়।
৩. ভবিষ্যৎ পরিবেশের প্রভাব (Effect of future environment): প্রতিষ্ঠানে বা সংগঠনের পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ পূর্ব ঘটনার উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
৪. অবিরাম প্রক্রিয়া (Continuous process) : নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের সাথে ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম সম্পর্কযুক্ত। তাই একে প্রকৃতিগতভাবেই বিরামহীন প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ প্রতিষ্ঠানের কার্যসমূহ পরিকল্পনা অনুয়ায়ী সম্পাদনের জন্য চলতে থাকে সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কার্যও চলতে থাকে। তা না হলে প্রতিষ্ঠান তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। এজন্যই বলা হয়, “Controlling is repetitive and never ending process of organization.” যেন সকল কর্মচারীদের নিকট বোধগম্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৫. সংশোধনমূলক ব্যবস্থা (Corrective action) : প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যসমূহকে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে পরিচালনার কোন বিকল্প নেই। তবে পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়িত কাজের মূল্যায়নে কোন ত্রুটিবিচ্যুতি পরিদৃষ্ট হলে সঠিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাই নিয়ন্ত্রণকে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৬. মিতব্যয়িতা (Economy) : এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল যে, এটা অবশ্যই মিতব্যয়িতার সাথে প্রয়োগ করতে হয়। কেননা ক্ষুদ্রায়তনবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠান বৃহদায়তনবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ন্যায় একই নিয়ন্ত্রণমূলক কৌশল ও পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে না।
৭. ঊর্ধ্বতনদের কাজ (Work of upper executive) : নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে কি না তার তদারকি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনানুসারে অধস্তনদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পাদন করা হয়। অবশ্য নিয়ন্ত্রণের সকল ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. পরিব্যাপ্তি (Pervasion) : প্রতিষ্ঠানের পরিমা যেমন সকল স্তরে বিস্তৃত তেমনি নিয়ন্ত্রণ কার্যও সকল স্তরে বিস্তৃত। কারণ ব্যবস্থাপনার প্রত্যেকটি কার্যের সুষ্ঠু সম্পদনে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। তাই অনেকে নিয়ন্ত্রণকে ব্যবস্থাপনা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
৯. বোধগম্যতা (Understandability) : আদর্শ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সহজবোধ্যতা। কর্মীরা এটি সহজে বুঝতে পারে এবং তদনুযায়ী কার্যসম্পাদন করতে পারে। আর যদি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সহজ বোধ্য না হয় তাহলে কর্মীরা কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পর্যবসিত হবে। তাই নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম যেন সকল কর্মচারীদের নিকট বোধগম্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১০. নমনীয়তা (Flexibility) : নিয়ন্ত্রণ নমনীয় হওয়া উচিত। নমনীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গতিশীলতার দিকনির্দেশক। নিয়ন্ত্রণ গতিশীল ও নমনীয় হলে পরিবর্তিত পরিকল্পনার সাথে এটা খাপখেয়ে চলতে পারে।
১১. উদ্দেশ্যমুখিতা (Objectivity) : প্রত্যেকটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই উদ্দেশ্যমুখী হওয়া আবশ্যক। কেননা নিয়ন্ত্রণের কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কার্যসমূহ উদ্দেশ্য অনুযায়ী সম্পন্ন হচ্ছে কি না তা তত্ত্বাবধান করা।
১২. মৌলিক কার্য (Basic work) : নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার একটি মৌলিক কার্য। এটি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করা এবং পরিকল্পনা থেকে কার্য বিচ্যুতি হলে কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সংশোধনীর ব্যবস্থা গ্রহণের সাথে সম্পৃক্ত। তাই একে ব্যবস্থাপনার মৌলিক কার্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৩. কৌশল ও পন্থা (Strategy and method) : নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় বহুবিদ কৌশল, পদ্ধতি ও পন্থার আশ্রয় নেওয়া হয়। যেমন- বাজেট, কস্টিং ইত্যাদি। এসব কৌশলসমূহের বাস্তবায়নের উপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে।
১৪. বাস্তবতা (Reality) : নিয়ন্ত্রণকে কখনই অনুমানের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তাই নিয়ন্ত্রণ কার্যবাস্তব ও প্রকৃত তথ্যের সম্পাদন করতে হয়।
নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
নিম্নে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হল।
১. পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন (Quick implementation of plan) : নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপের ফলে কর্মীরা কার্যক্ষেত্রে ফাঁকি দিতে পারে না। ফলে পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
২. কাজের পার্থক্য দূর (Reduce the deviation of work) : নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কাজের পার্থক্য দূর করা যায়। কোন কাজ তার নির্দিষ্ট গতিপথের বাইরে যেতে পারে না।
৩. শৃঙ্খলা বিধান (Create discipline) : নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কর্মীদিগকে শৃঙ্খলাবদ্ধকরণে কাজ করতে বাধ্য করে। নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় কর্মীদের কাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, ফলে কাজের অগ্রগতি ব্যাহত হয়।
৪. সমন্বয় (Co-ordination) : প্রতিটি সংগঠনেই কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলি ও গতিবিধি পরীক্ষা করে তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
৫. কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি (Increase working efficiency) : নিয়ন্ত্রণ কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলে কেউ দায়িত্ব থেকে দূরে থাকতে পারে না।
৬. জবাবদিহিতা সৃষ্টি (Create accountability) : নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিটি কর্মীকে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য জবাবদিহি করে তোলা যায়। জবাবদিহিতার ফলে কর্মীরা সতর্ক থাকে।
৭. সহজ কর্তৃত্ব অর্পণ (Easy delegation of authority) : নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর থাকলে একজন ঊর্ধ্বতন তার অধীনস্থদের নিকট সহজে ও নিশ্চিন্তে কর্তৃত্ব অর্পণ করতে পারে। কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে নিশ্চিন্তে কর্তৃত্ব অর্পণ করা সম্ভব হয় না।
৮. প্রলোভন দূরীকরণ (Removing own-expectation) : কার্যক্ষেত্রে কর্মীরা অনেক সময় প্রলোভনের সম্মুখীন হয়। যথাযথ নিয়ন্ত্রণের অনুপস্থিতিতে অনেক কর্মীর পক্ষেই লোভ সংবরণ সম্ভব হয় না। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরালো হলে কর্মীদেরকে এরূপ প্রলোভন হতে বিরত রাখা যায়।
৯. অপচয় হ্রাস (Reduce wastage) : কার্যাবলির অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিয়ন্ত্রণের উপস্থিতির ফলে কেউ অপ্রয়োজনীয়ভাবে কোন কাজ করতে পারে না। ফলে অপচয় হ্রাস পায়। এ সম্পর্কে আর. ডব্লিউ. গিফ্রিন (R. W. Griffin) বলেছেন, “কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ অনুসরণ ব্যয় হ্রাসে সহায়তা করে।” (Practical effectively control can also help reduce cost.)
১০. দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ (Quick corrective action) : পরিকল্পনা বাস্তবায়নকল্পে বিচ্যুতি দেখা দিলে কার্যকর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তা সহজে ধরা পড়ে। ফলে দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এতে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জন সহজতর হয়।
১১. কর্মভার লাঘব (Reduce responsibility) : নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কর্মভার লাঘব হয়। একে থার্মোমিটারের সাথে তুলনা করা যায়। থার্মোমিটারে যে রূপান্তর মাপ হয় তদ্রূপ নিয়ন্ত্রণের ফলে সকল প্রকার চাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
১২. দ্বৈত-অধীনতা পরিহার (Free from dual sub-ordination) : প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যাতে দ্বৈত অধীনতার সম্মুখীন না হয়, কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখে। দ্বৈত-অধীনতার ক্ষেত্রে একজন কর্মচারীর পক্ষে ভালো কাজ করা সম্ভব হয় না।
নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি
১. সরলতার নীতি (Principle of simplicity) : নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অবশ্যই সহজ, সরণ এবং সকলের নিকট বোধগম্য হওয়া উচিত। কেননা অপেক্ষাকৃত জটিল এবং অস্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কখনই আশানুরূপ ফলাফল প্রদান করতে পারে না।
২. যথার্থতার নীতি (Principle of accuracy) : প্রতিষ্ঠানের আওতা, পরিধি এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য কার্যসমূহকে বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হতে হিসাব-নিকাশ, বিভাগের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ভিন্নতর হয়ে থাকে।
৩. সময়োপযোগিতার নীতি (Principle of timeliness) : প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। আরোপ করতে হবে। আর যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা না যায় তাহলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আশানুরূপ ফলাফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে না। তাই প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যথাসময়ে আরোপ করতে হবে।
৪. দ্রুততার নীতি (Principle of promptness) : প্রতিষ্ঠানের কার্যসমূহের ফলাফল বিবেচনা করে দ্রুত বিচ্যুতিসমূহ চিহ্নিত করা যায় এবং সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যায় এমন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই গ্রহণ করা প্রয়োজন। কাজের মূল্যায়ন, বিচ্যুতি, নিম্নরূপ, বিচ্যুতির কারণ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে যদি অধিক সময় ব্যয় হয় তাহলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ও দেরি হয়। ফলে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন দুরুহ হবে।
৫. পরিবর্তনশীলতার নীতি (Principle of flexibility) : বর্তমান যুগ পরিবর্তনশীলতার যুগ। এ যুগে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যাতে এটি বিভিন্ন পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে কার্যকর থাকতে পারে। তাই এক্ষেত্রে নমনীয়তা বা পরিবর্তনশীলতার নীতি অনুসরণ করতে হবে।
৬. দক্ষতার নীতি (Principle of efficiency) : নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দক্ষতার নীতিকে অনুসরণ করা উচিত। কেননা এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে কাজের মান মূল্যায়ন, বিচ্যুতি নিরুপণ, বিচ্যুতি কারণ চিহ্নিত করে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের কার্যসমূহ দক্ষতার সাথে সম্পাদন করা যায়।
৭. সাংগঠনিক নীতি (Principle of organization): প্রতিষ্ঠানের প্রয়োগকৃত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এর কাঠামোর সাথে অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাকে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন এর প্রত্যেকটি কার্যকে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হয়। এক্ষেত্রে নির্বাহির দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকারকে বিবেচনায় আনতে হবে।
৮. মিতব্যয়িতার নীতি (Principle of economy) : নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন। কেননা অনেক সময় দেখা যায় যে, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপে অনেক অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হয়ে থাকে। এ ব্যয় যেন প্রাপ্ত ব্যয় থেকে বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আরোপে মিতব্যয়িতার নীতির অনুসরণ করা প্রয়োজন।
৯. ব্যতিক্রমের নীতি (Principle of exception) : নিয়ন্ত্রণের ফলপ্রদত্তা বৃদ্ধির জন্য ব্যতিক্রমধর্মী কাজের প্রতি মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। তাই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকগণ পরিকল্পনার সাথে কাজের বিচ্যুতির পরিমাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করে থাকেন।
১০. ধারাবাহিকতার নীতি (Principle of continuity) : প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনের নিমিত্তে নিয়ন্ত্রণ কার্য ধারাবাহিকভাবে চালাতে হবে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শুধু একবার গ্রহণ করলেই তা থেকে কার্যকর ফল অর্জন করা যায় না। তাই এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার নীতিকে অনুসরণ করা প্রয়োজন।
১১. আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতি (Principle of self control) : নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতির অনুসরণ করা আবশ্যক। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহিগণ এবং অধস্তন কর্মীগণ যাতে নিজ নিজ কার্যের মূল্যায়ন করে ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত করে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সে ধরনের আত্মনিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে করে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম হবে।
১২. ভবিষ্যৎ দর্শনের নীতি (Principle of future looking) : নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে তা ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার পিছনে কারণসমূহ চিহ্নিত করা এবং তার সংশোধনের জন্য কিরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সে সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। তাই একে পরিবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ফলপ্রসূ করতে হলে উপরোল্লিখিত নীতিমালাসমূহ অনুসরণের বিকল্প নেই। কারণ প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে এসব নীতিসমূহ সহায়ক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা উদ্দেশ্য অর্জনকে সহজতর করে।