অর্থনীতি

সম্পদের স্বল্পতা বা দুষ্প্রাপ্যতা কি | অর্থনীতিতে কীভাবে স্বল্পতা সমস্যার উদ্ভব হয়

1 min read

সম্পদের স্বল্পতা বা দুষ্প্রাপ্যতা কি | কীভাবে স্বল্পতা সমস্যার উদ্ভব হয়

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এল. রবিন্স সর্বপ্রথম অর্থনীতিতে স্বল্পতার ধারণাটি ব্যবহার করেন। তাঁর ভাষায়, মানুষের অভাব পূরণের সম্পদ সীমিত। অর্থাৎ, সম্পদের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। সম্পদের এ সীমাবদ্ধতাই স্বল্পতা।

সম্পদের স্বল্পতা বা দুষ্প্রাপ্যতা কি

অর্থনীতির মূল সমস্যা হল ‘স্বল্পতা’। মানুষের অভাবের শেষ নেই। একটি অভাব পূরণ হলে অন্য একটি অভাবের উদ্ভব হয়। স্বল্পতা হল সে পরিস্থিতি যখন ব্যক্তি যে পরিমাণ দ্রব্য পেতে চায় তা উৎপাদন করার জন্য সম্পদ অপর্যাপ্ত পাওয়া যায়। এখানে দ্রব্য/সম্পদ/সেবা বলতে অর্থনৈতিক দ্রব্য/সেবা/সম্পদ বুঝায়। অর্থনৈতিক দ্রব্য বলতে এমন সব জিনিস বুঝায় যার উপযোগ আছে এবং ভোগ করলে মূল্য প্রদান করতে হয়। আবার কিছু দ্রব্য আছে যার জন্য মূল্য প্রদান করতে হয় না। তবে এদেরও উপযোগ বিদ্যমান। যেমন: নদীর পানি, বাতাস, সূর্যের আলো প্রভৃতি। এ সম্পদগুলোর ক্ষেত্রে স্বল্পতা নেই। কারণ, এসবের যোগান অসীম। সুতরাং, দুষ্প্রাপ্য দ্রব্য বলতে অর্থনৈতিক দ্রব্যকে বুঝায়। সীমিত সম্পদ বলতে সে সম্পদকে বুঝায়, যার পরিমাণ নির্দিষ্ট। যেহেতু সম্পদ সীমিত, স্বাভাবিকভাবেই যে দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা ঐ সম্পদ থেকে পাওয়া যাবে তা সীমিত হবে। সীমিত সম্পদ ও স্বল্প সম্পদ কথা দুটির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। স্বল্প সম্পদ বলতে সে সম্পদকে বুঝানো হয় যার পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম। স্বল্পতা বলতে জনগণ যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবা সামগ্রী চায় তার প্রাপ্তির তুলনায় উৎপাদন ক্ষেত্রে যে সম্পদ ব্যবহার করা হয় তার অপর্যাপ্ততাকে বুঝায়। কারণ, উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদ অপর্যাপ্ত হলে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন কমে যায়। সুতরাং, সম্পদের স্বল্পতা বা দুষ্প্রাপ্যতা  বলতে আমরা সে অবস্থাকে বুঝি, যখন দ্ৰব্য ও সেবা সামগ্রীর চাহিদার তুলনায় তার সরবরাহ কম হয়।

স্বল্পতা সমস্যা উদ্ভবের কারণ

কোন একক কারণে স্বল্পতা সমস্যার উদ্ভব হয় না। বিভিন্ন কারণে স্বল্পতা সমস্যার উদ্ভব হয়। নিম্নে তা আলোচনা করা হল।

১. অভাবের অসীমতা

অভাবের অসীমতা হল এমন একটি বিষয় যে অবস্থায় জনগণ দ্রব্য ও সেবার পরিমাণ এবং বৈচিত্র্য সম্পর্কে কিছুতেই সন্তুষ্ট নয়। ব্যক্তি যতটুকু যেভাবে চায়, ততটুকু সেভাবে পেলে স্বল্পতা সমস্যার উদ্ভব হতো না। মূলত দুটি কারণে বস্তুগত অভাবের উৎপত্তি ঘটে। প্রথমত, মৌলিক চাহিদার কারণে; অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ইত্যাদি কারণে বস্তুগত অভাবের উৎপত্তি ঘটে। দ্বিতীয়ত, ন্যূনতম চাহিদা মিটানোর পর মানুষ বেশি পরিশ্রম করতে প্রস্তুত থাকে বলে ক্রমাগত অভাবের উৎপত্তি ঘটে। যেমনঃ কোন ব্যক্তি প্রাথমিকভাবে কিছু খাবার পেলেই সন্তুষ্ট হয় না। এরপর সে লজ্জা নিবারণের জন্য বস্তু চায়। তারপর চায় বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। এসবও যথাযথ পেয়ে গেলে সে বিলাসজাত দ্রব্য প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে এবং এজন্য সে অধিক ব্যয় করতেও রাজি থাকে। এভাবে তার চাওয়া বাড়তে থাকে। সে এমন কোন অবস্থায় পৌঁছে না যেখানে সে বলে আমি তৃপ্ত। তাই সীমিত সম্পদ ছাড়াও মানুষের অসীম অভাবের কারণে স্বল্পতা সমস্যা দেখা দেয়।

২. সম্পদ বা দ্রব্যের স্বল্পতা

সম্পদ বা দ্রব্যের স্বল্পতাই হল স্বল্পতা সংক্রান্ত সমস্যার অন্যতম কারণ। অর্থনীতিতে সীমিত সম্পদের ধারণার তুলনায় স্বল্প সম্পদের’ ধারণাটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প সম্পদ বলতে সে সম্পদকে বুঝানো হয়। যেখানে জনগণের চাহিদার তুলনায় সম্পদের সরবরাহ সীমিত। কোন সম্পদকে তখনই স্বল্প বলা হবে, জনগণ যেসব সম্পদ দ্বারা অভাব পূরণ করতে চায় তার তুলনায় সম্পদ কম থাকে। আবার জনগণ প্রত্যক্ষভাবে যেসব দ্রব্য ও সেবা পেতে চায় তাদের উৎপাদন করতে গিয়ে প্রাপ্তির তুলনায় অধিক প্রয়োজন অনুভব করে। যেমনঃ লোহা একটি স্বল্প সম্পদ বলে গণ্য হয়। গাড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম উৎপাদনে প্রয়োজনের তুলনায় লোহার যোগান কম। এভাবেই দ্রব্য বা সেবাকে আমরা স্বল্প বলে চিহ্নিত করতে পারি। মানুষের সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। মানুষের সামর্থ্যের যেমন একটা সীমা আছে, তেমনি উৎপাদনের উপকরণও সীমিত। আর উৎপাদনের মৌলিক উপকরণ হল সম্পদ। সুতরাং, এ সম্পদের স্বল্পতাই হল স্বল্পতা সংক্রান্ত সমস্যার অন্যতম কারণ।

৩. সম্পদের বিকল্প ব্যবহার

অর্থনীতিতে বিদ্যমান সীমিত সম্পদের বিকল্প ব্যবহার বিদ্যমান। আর এ থেকে নির্বাচন বা পছন্দের সমস্যার সৃষ্টি হয়। সম্পদকে এমনভাবে ব্যয় করতে হয় যাতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন পূরণ হয়। এক্ষেত্রে একটির জন্য অন্যটিকে ছেড়ে দিতে হয়। এ বিষয়টিকে বলা হয় সুযোগ ব্যয়। এ যে একটির জন্য অন্যটি ছেড়ে দিতে হচ্ছে এর মূলে রয়েছে স্বল্পতা সমস্যা। যদি সম্পদ স্বল্প না হতো তাহলে পছন্দের বিষয়টি আসত না। এমনকি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রয়োজন হতো না। এভাবে সম্পদের বিকল্প ব্যবহারের মধ্যে স্বল্পতা সমস্যার প্রতিফলন ঘটে।

উপসংহার

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানবজীবনের সব স্তরে স্বল্পতা বিদ্যমান। আর স্বল্পতার কারণেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উৎপত্তি। তাই অর্থনীতিতে স্বল্পতাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়।

Rate this post
Mithu Khan

I am a blogger and educator with a passion for sharing knowledge and insights with others. I am currently studying for my honors degree in mathematics at Govt. Edward College, Pabna.

x